| ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১০:০২ অপরাহ্ণ
এদেশে ইস্যুভিত্তিক অনেক ইসলামী আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত আছে। আন্দোলন করতে গিয়ে আলেম-উলামাদের মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের (আলেমদের) কারা নির্যাতনের ইতিহাস ও কম নয়। কিন্তু একদিনে বহুসংখ্যক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়ে ঐক্যজোট ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সেই দিনটি হচ্ছে ২০০১সনের ৪ ফেব্রুয়ারী। তাই ৪ ফেব্রুয়ারী ইসলামী ঐক্যজোট নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার দিবস হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
২০০১ সালের ১লা জানুয়ারী ”সব ধরনের ফতওয়া নিষিদ্ধ” সম্বলিত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২রা ফেব্রুয়ারী হরতাল পালিত হয়। সেই হরতালকে কেন্দ্র করে জোটের তদানিন্তন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.), মহাসচিব মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ), ভাইস-চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, এ আর এম আবদুল মতিন ও মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব এবং মাওলানা সাখাওয়াৎ হোসেন(খুলনা) গ্রেপ্তার হন। যুবকদের মধ্যে গ্রেপ্তার হন আবুল হাছানাত আমিনী, আলতাফ হোসেন, জাহিদ হোসেন, মাওলানা আল-আমীন ও আবদুল মোমেনসহ জোটের প্রমূখ নেতা-কর্মী । শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক(রহ.) ও মুফতি ফজলুল হক আমিনীসহ (রহ.) কিছু নেতা-কর্মী ৪ মাস কারা নির্যাতন ভোগ করেন। অন্যদিকে অনেকে এর চেয়ে বেশিদিন কারাগারে বন্দী ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সনের ১লা জানুয়ারী হাইকোর্ট থেকে এই মর্মে রায় প্রদান করা হয় যে, ’সব ধরনের ফতওয়া নিষিদ্ধ’। এই রায়ের বিরুদ্ধে মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ.) তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন ”দুই বিচারপতি মরুতাদ। এর পর সকল ইসলামী দল ও সংগঠন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকেন। এর পর শুরু হয় উলামা-মাশায়েখদের মধ্যে শলা-পরামর্শ। গঠিত হয় ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি। মুফতি ফজলুল হক আমিনী(রহ.) ও মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাছ এই কমিটির যথাক্রমে আমির ও মহাসচিবের পদ অলঙ্কৃত করেন। এই কমিটির পক্ষ হতে ২০০১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়া হয়। স্বতঃস্ফুর্ত ও সর্বাত্মকভাবে এই হরতাল পালন করে সারা দেশের মানুষ বিশেষ করে তৌহিদী জনতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন।
ইসলামী ঐক্যজোট নেতাকর্মীরা একই দিন গ্রোপ্তার হন। কিন্তু একই স্থান থেকে নয়। দু’ই স্থান থেকে। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.), মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, এ আর এম আবদুল মতিন, মাওলানা সাখাওয়াৎ হোসেন ও আবদুল মোমেন প্রমূখ গ্রেপ্তার হন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের চন্দ্রায়। ২০০১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী রংপুরে অনুষ্ঠিত চার দলীয় জোটের মহাসমাবেশ থেকে ঢাকা ফেরার পথে । আর মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ), মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব, মাওলানা হাছানাত আমিনী, মাওলানা আলতাফ হোসেন, মাওলানা জাহিদ হোসেন ও মাওলানা আল-আমীনসহ অনেকে গ্রেপ্তার হন একই দিন রাজধানী ঢাকার লালবাগ থেকে। তাঁরা এক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে পল্টনে যাচ্ছিলেন ।
গ্রেপ্তারকৃত জোট নেতা-কর্মীদের সকলকে প্রথমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৯০ সেল ও ওয়ার্ডে ভাগ করে রাখা হয়। পরে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.), মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, এ আর এম আবদুল মতিন, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব, মাওলানা আবুল হাছানাত আমিনী, মাওলানা জাহিদ হোসেন, মাওলানা আল-আমীনকে বরিশাল জেলে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁদেরকে ফাঁসির সেলে রাখা হয়। বার্ধক্যের কারণে আল্লামা আজিজুল হক সাহেবকে ক’দিন পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ) ও মাওলানা সাখাওয়াতকে রংপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। মাওলানা আলতাফসহ অন্যান্যরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই ছিলেন। উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেব হঠাৎ একদিন রংপুর কারাগারে মুফতি আমিনী সাহেবের সাথে দেখা করে শর্তাধীনে মুক্তির প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমিনী সাহেব এরশাদ সাহেবের প্রস্তাবে রাজি হননি। এরশাদ-আমিনী সাক্ষাতকারের খবর বরিশাল কারাগারে পৌঁছেছিল মিয়া সাহেবদের মাধ্যমে (জেলখানায় পুলিশদের মিয়া সাব বলে অভিহিত করা হয়)। এর ক’দিন পর মুফতি আমিনী (রহ)কে ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
একই দিন গ্রেপ্তার হলেও সবাই একদিনে মুক্তি পাননি। শায়খুল হাদিস, মুফতি আমিনী, মুফতি ইজহার, মাওলানা জুনুয়েদ আল-হাবিব, আবদুল লতিফ নেজামী, এআরএম আবদুল মতিন, আবুল হাছানাত আমিনী দীর্ঘ চার মাস কারাবাসের পর আদালতের মাধ্যমে একদিনে মুক্তি পান। আলতাফ-জাহিদ-আলআমিনদের আরো অনেকদিন কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়। দীর্ঘ চার মাস পাশাপাশি সেলে অবস্থান শেষে জাহিদ-আলআমিন ব্যতিত অন্যান্যরা মুক্তি পেলে বরিশালের ফাঁসির সেলে সেদিন যে এক করুন দৃশ্যের অবতাড়ণা হয়, তা কোদিন ভুলবার নয়।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |