• শিরোনাম


    ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শাহাদাতের সিঁড়ি বেয়ে বিজয়ের মঞ্জিলে

    মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১:২৫ অপরাহ্ণ

    ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শাহাদাতের সিঁড়ি বেয়ে বিজয়ের মঞ্জিলে

     

    আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিনে ভাষার দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের দেশের মানুষ। ৭১ বছর আগে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার রাজপথে বাঙ্গালী যুবকেরা বুকের রক্ত ঢেলে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত করেছে। তাদের স্মরণেই ২১ ফেব্রুয়ারীর ভোরের আকাস-বাতাস বিষণ্ন করে কোটি কন্ঠে বেজে উঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি’। হ্রদয়ছোঁয়া এ করুণ সুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে যায় লাখো মানুষের নগ্নপদ প্রভাতফেরি।



    ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ থেকে ইংরেজরা বিতাড়িত হলে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। নবগঠিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, এ নিয়ে শুরুতেই শুরু হল বিতর্ক। পশ্চিম পাকিস্তানীরা চাইল গায়ের জোরে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বানিয়ে দিতে। যা ছিল বাঙ্গালীকে অশিক্ষিত করে রাখার গভির ষড়যন্ত্র। পাকিস্তান হওয়ার আগ থেকেই এটা তারা স্হির করে রেখেছিল। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় তরুণ শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত হয় তমদ্দুন মজলিস।

    ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা শীর্ষক প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং ঘোষণা করা হয় একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
    পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) জনগণ মেনে নেয় নি সে সিদ্ধান্ত। প্রতিবাদের আওয়াজ উঁচু হল। ১৯৪৮ সালে তমদ্দুন মজলিস ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হল। কেঁপে উঠল গোটা প্রশাসন। প্রচন্ড গণজাগরণের আভাস পেয়ে সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল। এর কদিন পরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় ঘোষণা করলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ছাত্র-জনতা তখনও তার প্রতিবাদ জানালেন।

    প্রতিবাদের এই আগুনই একের পর এক পর্যায় অতিক্রম করে নিয়ে আসে ৫২ – এর ২১ ফেব্রুয়ারী। সেদিন ছিল হরতাল। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ হরতাল ডেকেছিল। পুলিশ ঘোষণা করল ১৪৪ ধারা। বীর বাঙ্গালীর দুর্জয় যুবকরা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে এলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হলেন, সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারেরা। এই শাহাদাতের সিঁড়ি বেয়ে ভাষা আন্দোলন পৌছে গেল বিজয়ের মঞ্জিলে।

    বাংলাদেশের সেই ভাষা আন্দোলন সারা পৃথিবীর শ্রদ্ধা কুড়িয়েছে। সারা পৃথিবী বাঙ্গালীর এই শ্রেষ্ঠত্বের সুরভিতে অবগাহন করছে বিমুগ্ধ বিস্ময়ে। মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাঙ্গালীর আত্মত্যেগের মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে ভৌগলিক সীমারেখা অতিক্রম করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর এই দিনটিকে জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্হা ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
    তাই ২১ ফেব্রুয়ারী এখন শুধু বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিপালিত হচ্ছে না। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৩টি দেশেও পালিত হচ্ছে। বিশ্বের সর্বত্র শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে- শহীদ বরকত, সালাম, জব্বার, রফিকের নাম এবং ভাষার দাবিতে প্রাণ উৎসর্গকারীদের কথা ও কাহিনী। সেই সঙ্গে অনুরণিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম।
    লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, আজ একুশে ফেব্রুয়ারী। এই দিনে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদেরকে শ্রদ্ধা করি। তাদের জন্য দুআ করি। কিন্তু শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাষ্ট্রের সর্বস্তরে আজও বাংলা ভাষা চালু করা হয় নাই। কোর্টে চলছে ইংরেজী, সচিবালয়ে ইংরেজী, সংসদেও স্পীকারের অর্ধেক কথা ইংরেজী। অর্থাৎ অফিস আদালতে এখনও ইংরেজীর একচ্ছত্র প্রাধান্য বিরাজমান। এত রক্ত, এত ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হল যে বাংলা ভাষা, আমরা কি তার প্রকৃত মান ধরে রেখেছি? ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পর হলেও কি সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলার প্রচলন হয়েছে? যদি হত তাহলে আমাদের দেশের মানুষ বাংলাভাষাকে বাদ দিয়ে ভিন্ন ভাষায় কথা বলাকে ফ্যাশন মনে করত না। আমাদের সন্তানদের বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে প্রথমে ইংরেজীতে শিক্ষা দিতে গর্ববোধ করতাম না।
    তাই’ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরে বাংলাভাষা বাধ্যতামূলক করা হোক। এবং সকলের প্রতি বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলার আহ্বান করছি।

    Facebook Comments Box

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
  • ফেসবুকে আওয়ারকণ্ঠ২৪.কম