| ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ৫:৩৫ অপরাহ্ণ
১৪ই ফেব্রুয়ারী, আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস।আজকের দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ।এইদিনে সকল দলের ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে ও শহীদ হয়েছে।তাদের আন্দোলন ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য।তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার যে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল এবং সেই শাসনকে চিরস্থায়ী করতে যে শিক্ষানীতি চালু করেছিল তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে আমাদের দেশের ছাত্ররা।
ফ্যাসীবাদের বিপরীতে গণতন্ত্রের লড়াইকে বেগবান করতে জাতীয় ঐক্য দরকার হয় সেই সত্যকে সাময়িক উপলব্ধি করেছিল ছাত্র তথা তরুণ সমাজ।তাছাড়া একটি সংহতির সমাজ গড়তে যে গণতান্ত্রিক – অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাব্যবস্থা দরকার সেই সত্যকে তরুণরাই সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করেছিল। তারমানে বোঝা যাচ্ছে এইদিনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার( সাম্য,সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার) পক্ষের লড়াইয়ের দিন।এমনকি আমরা আজ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যে পরিমাণ হাহাকার করছি সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার প্রেরণাও কিন্তু এই দিনটি।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রেক্ষিতে এই দিবসটি জাতীয় সংহতি ও প্রতিবাদের প্রতীক।কিন্তু আমরা যে ক্রমাগত এই স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের স্থলে ভালবাসা দিবসকে স্থান দিয়েছি তার যৌক্তিকতা ও তার অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি আমরা বিচার করেছি একবারও? না, আমরা করিনি।আর করিনি বা করছিনা বলেই আগামীতে আমাদের জন্য মহাসর্বনাশ অপেক্ষা করছে।ইতোমধ্যে আমাদের তরুণরা তাদের তারুণ্য হারিয়ে ফেলেছেন।তারা আজ প্রতিবাদ করেননা,রাজনীতি বোঝেননা,জ্ঞানচর্চা আজ তাদের কাছে কটু ঠেকে।এটাতো সর্বনাশের উপসর্গ মাত্র অদূর ভবিষ্যতে আমরা আরো কিছু দেখব। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল, আমাদের তরুণরা মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করে, তাদের তারুণ্য প্রদর্শন করে কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যায়। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমাদের তরুণরা অসীম সম্ভাবনার অধিকারী হয়েও মিসগাইডেড! তারা একই সঙ্গে সফল ও ব্যর্থ। এই সহজ সত্যকে আজ যদি আমরা স্বীকার না করি তাহলে আর যাই হোক রূপান্তর সম্ভব নয়। তাই সর্বনাশ যদি রোধ করতে চাই তাহলে আসুন সত্যকে উপলব্ধি করি।
সত্যকে যদি আজ কেবল Truth এর বাংলা অনুবাদ হিসেবে বুঝতে চেষ্টা করি তাহলে কয়েকটা ঘটনাবলীর সমারোহ এবং গৌরব-হতাশার বাইনারীতে ঘুরপাক খেতে হবে। আর এখনকার রাজনৈতিক কর্তব্য কিভাবে “সত্য ” আকারে আবির্ভূত হয়েছে তা বুঝতে ব্যর্থ হব। সত্য হচ্ছে আমাদের প্রচলিত জীবনযাপনের যাবতীয় জ্ঞানতাত্ত্বিক ভাষ্যসহ প্রচলিত ইন্দ্রিয়পরায়ণতার বাইরে থাকা বিষয়, আমাদের যাপিত জীবনের তাবৎ চর্চার মধ্যদিয়ে আমরা প্রতিমুহূর্তে একে ধরবার চেষ্টা করি, কিঞ্চিৎ সফলকামও হই। কিন্তু আমরা যদি সামান্যে সত্যের মর্ম জানতে চাই তাহলে তা হবে মহাভুল। সত্যকে বুঝতে এই যাপিত জীবনের চর্চাকে অতিক্রমের উপায় নেই কিন্তু এর মধ্যে বাস করেই, এর উপর দাঁড়িয়েই আমাদের খুঁজতে হবে সত্যকে। সত্যের সন্ধান করাই সাধনা। বর্তমানে রাজনৈতিক কর্তব্য আকারে এই সত্য কিভাবে হাজির হবে সেই তর্ক না বুঝে কোনও কাজ সম্ভব নয়।
সত্যের দ্বারা বুঝতে হবে কিভাবে তরুণরা একইসাথে সফল ও ব্যর্থ হচ্ছে৷ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস তাই শেষ বিচারে সত্যানুসন্ধান করার একটি যাত্রাবিন্দু হতে পারে। কেননা এই দিবসের সূচনাকারী তরুণরা আবার এই দিবসকে ভুলেও গেছে তরুণরা। যে দিবসের গতিপথ হতে পারত একটি সফল রাজনৈতিক গোষ্ঠী নির্মাণে, তা কিনা আজ পাশ্চাত্যের অনুকরণের দিবসে পরিণত হয়েছে! পাশ্চাত্যের অনুসরণ হয়ত পরিত্যাজ্য নয় সর্বক্ষেত্রে কিন্তু অনুকরণ বা অনুকরণ উদ্যাপন করা কতটা শুভ তা ভাববার সময় এসেছে। তার চেয়ে মজার ব্যাপার তরুণদের এই গতিপথ কিভাবে একটি দল বা ব্যক্তিবিরোধী মনোভাব আকারে দানা বাঁধল তা বোঝা জরুরি। কারণ এই বিষবৃক্ষ আজ মহীরুহ হতে চলেছে।
এবার আসি সত্যের ব্যাপারে। সত্য এটাই আজও আমাদের তরুণরা অমিত সম্ভাবনার পরও নিজেকে চিনতে শেখেনি, আজও তারা সক্রিয় নয়। তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো মূলভিত্তি সদাসর্বদা “সিম্পটম ” আকারে হাজির থাকে, তারা এই ব্যাপারগুলো সক্রিয়ভাবে হাজির করতে আজও সমর্থ হয়নি। যতদিন তারা সচেতন না হবে ততদিন কিছুই সম্ভব নয়। তরুণদের হয়ত আরও বৃহৎ বৃহৎ অর্জন তৈরি হবে, সেগুলো বেশ প্রশংসনীয়ও হবে কিন্তু ঐতিহাসিক কর্তব্য পালন করা হবেনা।
তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ১৪ ই ফেব্রুয়ারীর যথার্থ পর্যালোচনা করা বা ১৪ই ফেব্রুয়ারীকে ফিরে দেখা। কেন বিশেষভাবে ১৪ই ফেব্রুয়ারীর বলছি তা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ১৪ই ফেব্রুয়ারীর তাৎপর্যের এই পরিবর্তন শুধু একটি দিবস বা তারিখের পরিবর্তন নয় বরং আমাদের তরুণ সমাজ রাজনৈতিক কর্তব্য কিভাবে ভুলে গিয়েছে ও তাদের সক্রিয়তার স্তর কিভাবে নামছে তার বিবরণ। সর্বোপরি একটি কথাই বলতে হয়, সত্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে আমাদের এগিয়ে যাবার সময় এসেছে এবং তার আগে সত্যকে উপলব্ধি করা শতভাগ গুরুত্বপূর্ণ সেটাও বোঝা গেছে। সকলকে জানাই স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের সংগ্রামী অভিনন্দন !
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |