| ১০ জানুয়ারি ২০১৯ | ৭:০৭ অপরাহ্ণ
একটি যুক্তাক্ষর সহ মোট চারটি অক্ষরের সমবায় স্বাধীনতা।স্ব + অধীনতা ব্যাকরণের নিয়মে যুক্ত হয়ে স্বাধীনতা হয়েছে।আমরা সাধারণত ভাবতে অভ্যস্ত স্বাধীনতার মূল বোধহয় “স্ব”- এ লুকায়িত আছে,ঢাকনা খুললেই চারিদিকে আলোর ছটায় ভরে যাবে।সত্যের, স্বাধীনতার আলোক বলে কথা!কিন্তু যত গোল ওখানেই;স্বাধীনতার মূল যে স্ব এ নেই,দূরে অন্য কোনোখানেও নেই,আছে অধীনতায়।স্বাধীনতার মর্ম আছে অধীনতায়।অধীনতার ধারণা অনুভব করা ছাড়া স্বাধীনতা বোঝা যাবেনা।
অধীন হলেই স্বাধীনতার প্রশ্ন আসে।কোনও বিয়োজন করতে হয়না উত্তর বের করতে। শুধু যোজন করেই সাড়তে হয় কাজ।আমরা যদি আমাদের চিন্তাপদ্ধতি দিয়ে চিন্তা করি তাহলে বুঝব যে আমরা অধীন হবার ফলেই স্বাধীন হবার চিন্তা করি।অপরের অধীনতাকে অস্বীকার করে কিছু একটা করতে চাই। তখন একটা ব্যাপারই মাথায় আসে:অপরের অধীনতার চেয়ে নিজের (স্ব এর) অধীনতা শ্রেয়। তখন আমরা স্বাধীন হবার তৎপরতা চালাই ও হয়েও যাই।এই পর্যন্ত আমাদের বিদ্যমান চিন্তাপদ্ধতির কারবার চলে।এরপর কাঁটাতারের বেড়া। বেড়া পার করে আর আমরা অগ্রসর হইনা। কারণ আমরা স্বাধীন!
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে বেড়ার মধ্যে থেকে স্বাধীন হই আমরা নিজেরাও অনুধাবন করতে পারিনা এটা শেষ অবধি অধীনতা। আমরা বিদ্যমান চিন্তাপদ্ধতির মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত টানতে পারি :অধীনতাই স্বাধীনতার মর্মোদঘাটনের চাবিকাঠি। অধীন থাকার ফলেই আমরা স্বাধীন হতে চাই আবার স্বাধীন হই এক প্রকার অধীনতা স্বীকারের মধ্যদিয়। যদিও সেই অধীনতা কিঞ্চিৎ অদ্ভুত। পাঁড় সাদাচোখওয়ালাদের জন্য তা অদৃষ্ট (যা দেখা যায়না)।
এবার আমরা যদি একটু ভিন্নভাবে অগ্রসর হই তবেও বুঝব স্বাধীনতার মূল স্ব এ নেই।কারণ শব্দের মানেটাই হচ্ছে স্ব এর অধীনতা৷ দার্শনিক তত্ত্ব আওড়ানো বাদ দিয়ে শুধু ব্যাকরণ আর শব্দকোষ ঘেঁটে ধাতু-প্রত্যয় বিচার করলেও ফলাফল একই দাঁড়ায়। (বলে রাখা ভাল,ব্যাকরণ নিজেই একটি দর্শন। কিন্তু প্রচলিত দর্শনের মতো এর চরিত্র নয় বলেই একে দর্শনের আওতায় রাখা হয়নি। বস্তুত ব্যাকরণ নিজের আওতায়ই দর্শনের উদ্ভব ঘটিয়েছ।) আমরা সহজেই বুঝতে পারছি স্বাধীনতায় “স্ব” কেবল নিমিত্ত মাত্র। এখন এই নিমিত্তের বিচার করাটা জরুরী। এই যে স্ব নামক ধারণাটা তৈরি হয়েছিল, হচ্ছে, হবে তার মর্মোদঘাটন কিভাবে সম্ভব? জগতের বাইরে স্ব নামক কোনও বস্তুর অবস্থান করা সম্ভব নয়। তাহলে স্ব কে খুঁজতে হবে জগতে। আরও পরিষ্কার করে বললে, স্ব আছে ইতিহাসে, সমাজে ও ব্যাবহারিক সম্বন্ধে।
অধীনতার ব্যাপারটা স্থির রেখে ভাবতে হবে কার/কেমন অধীনতা।ভাবতে ভাবতে আসবে স্ব এর কথা, পর এর কথা। কিভাবে এই স্ব ও পর আসবে তার আংশিক চিত্র আমরা এতক্ষণ দেখেছি। এটা হচ্ছে সাধারণ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া। এবার অ-সাধারণ অংশটুকু বুঝব।সেক্ষেত্রে আমাদের স্বীকার করে নোট হবে অধীনতা স্ব ও পরে বিভক্ত৷ পর নামক যে ধারণার কথা বলছি তাও জগৎ বহির্ভূত নয়। পরের অবস্থানও ইতিহাসে,সমাজে ও ব্যাবহারিক সম্বন্ধে। এর অর্থ হচ্ছে ধ্রুব সত্তা আকারে স্ব ও পরের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবেনা।আবার এরা এরা একে অপরের পুরোপুরি বিপরীতেও বাস করেনা। এরা পরস্পর দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে আবদ্ধ। যদি স্ব ও পরের সম্বন্ধ ও অবস্থান গায়েবী বা অতিজাগতিক না হয় তাহলে অধীনতাও গায়েবী নয়। তার প্রকৃতিও একইরকম।
সকল কথার সার করে আমরা বলতে পারি, স্বাধীনতা যেহেতু জাগতিক বা সর্বাগ্রে জগতের সাথেই সংযুক্ত। একে তাই নিছক চিন্তার দ্বারা বা অধিবিদ্যার দ্বারা বোঝা যাবেনা। বুঝতে হবে ইতিহাস, সমাজ ও ব্যাবহারিক সম্বন্ধের আলোকে।