| ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ | ৫:০১ পূর্বাহ্ণ
নির্যাতন সইতে না পেরে নয় মাস পর সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তা আক্তার (১৬)। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। শনিবার মুক্তা দেশে আসে। ওই রাতেই তাকে নিয়ে আসা হয় জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য। এর আগে দেশে ফিরে আসে মুক্তার ছোট বোন মমতাজ বেগম ঝর্না। সংসারের অভাব দূরে ঠেলতে ২০১৮ সালের ২৬শে এপ্রিল সৌদি আরবে পাড়ি জমায় বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের নিদারাবাদ গ্রামের মুখলেছ মিয়ার স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ে মুক্তা আর ঝর্না। পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদম ব্যবসায়ী আক্তার মিয়ার মাধ্যমেই সেখানে যায় তারা। সৌদি পাঠানোর আগে দালাল তাদের বাবাকে বলেছিল হাসপাতালে কাজ দেয়া হবে এ দু-জনকে।
তাছাড়া মাথাপিছু ৭০ হাজার টাকা করে সৌদি আরবে নিয়ে যাবে বলায় সহজেই রাজি হয়ে যান মুখলেছ। এ ব্যাপারে দালাল আক্তারের সঙ্গে মুখলেছ ২৫০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্পে চুক্তিও করেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর হাসপাতালের পরিবর্তে কফিলের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ দেয়া হয় তাদেরকে। নির্যাতন সইতে না পেরে ১৫/২০ দিনের মধ্যে দেশে ফিরে ঝর্না। তাকে ফিরিয়ে আনতেও দালালকে টাকা দিতে হয়েছে। হাসপাতালে মুক্তা সাংবাদিকদের জানান- তার কফিলের নাম মোহাম্মদ। কফিল থাকতো জেদ্দায় আর সে থাকতো আবহাতে। কফিলের বাড়ির সবাই তাকে মারধর করতো। তাদের আঙুরের বাগানেও কাজ করতে হয়েছে তাকে। নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মুক্তা জানায়- একদিন কফিল আমাকে চা বানাতে বলেছিল। একই সঙ্গে কফিলের স্ত্রী পিয়াজ ছুলতে বলে। চা বানাতে গিয়ে পিয়াজ ছুলতে দেরি হয়। কেন দেরি হলো এজন্য কফিলের স্ত্রী আমাকে ডেকে রান্না ঘরে নিয়ে যায়। হাত সামনে রাখতে বলে। এরপরই আমার বাম হাতের কব্জি বরাবর ছুরি দিয়ে আঘাত করে। একই সঙ্গে ডান হাতেও। মুক্তার বাম হাতের কব্জিতে ক্ষতের কলো চিহ্ন দগদগে এখনো। নির্যাতন শেষ হয়নি এখানেই। এর জেরে দুই দিন ফ্রিজের মধ্যে কয়েক মিনিট তার মাথা ঢুকিয়ে রাখা হয়। জুতা দিয়ে পেটানো হয়। ওয়ালের মধ্যে সজোরে তার মাথা ঠোকানো হয়। মুক্তা বলেন কাজ না করলেই তাঁরা মারতো। দুই পায়ের হাঁটুর নিচে এসিড দিছে অনেক বার। এসব অত্যাচারে আমি বাবাকে বলেছিলাম, যদি জীবিত দেখতে চাও নিয়ে যাও। পালাতে পারতাম। কিন্তু পালিয়ে যাব কোথায়। পাসপোর্ট মালিকের বাবা মো. আলীর কাছে ছিল।
নিদারাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে মুক্তা। আর ঝর্না ছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের বাবা মুখলেছ হরষপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের প্রচার সম্পাদক ও করাত কলের একজন শ্রমিক। ছয় ভাইবোন তারা। শনিবার রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় মুক্তাকে। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে ঢাকা পৌঁছে সে। তার বাম ও ডান হাতের কব্জিতে কাটার ক্ষত চিহ্ন, দুই পায়ে এসিডে পোড়ানোর কালো ক্ষতের চিহ্ন ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। মুক্তার বাবা মুখলেছ মিয়া জানান, এ ব্যাপারে তিনি মামলা করবেন
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |