| ০২ মার্চ ২০২২ | ১০:১২ পূর্বাহ্ণ
শেখ মুজিব নামটা শুনলে যাঁর চোঁখের সামনে ভেসে ওঠে ‘পরনে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা সাথে কালো ওয়েস্ট কোট, চোঁখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা।’
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুল হালিম। পিতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম ভূঁইয়া। মাতা- মরহুমা নাজনীন জাহান মীর্জা। জন্ম-১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ২০০৫ সালে ২৪তম বিসিএস-এ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। মেধার কারণে দেশ বিদেশের সর্বত্র আজ তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি ২০১৯-২১ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানের দারফুরে কমান্ডার হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধু ক্যাম্প ও বঙ্গবন্ধু হল নির্মাণ করেন। একনিষ্ঠ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর দুইবার ৫৬টি দেশের পুলিশের মধ্যে ‘বেস্ট কমান্ডার অফ দ্যা ইয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত হন।
অমর একুশে বইমেলা ২০২২ এ অসংখ্য নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। অধিকাংশই কবিতা, উপন্যাস,মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণামূলক। হাজারো নতুন বইয়ের ভীড়ে এক দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তার রোমাঞ্চকর কর্মজীবনের রোজনামচা “সুদান মিশন ও মুজিববর্ষ”। লেখকের সাথে আমার পূর্ব পরিচয় না থাকলেও বইটি পাঠে আমি একজন সত্যিকারের বাঙালির পরিচয় পেয়েছি। একজন দক্ষ ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পেয়েছি। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিকের দেখা পেয়েছি। যাঁকে নিয়ে গর্ব করা যায়। যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গর্ব, বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব এবং বাংলাদেশের অন্যতম এক গর্বিত সন্তান বলে বিবেচিত। বর্তমানে তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশ বান্দরবান রিজিয়নের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তবে ”সুদান মিশন ও মুজিববর্ষ” বইটি লিখে তিনি হাজারো বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করলেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতিতেও ইচ্ছা থাকলেই যে, ভাল কাজ করা যায়, নিজ মাতৃভূমির সুনাম সম্মান বৃদ্ধি করা যায় মোহাম্মদ আব্দুল হালিম তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বিজ্ঞানকবি হাসনাইন সাজ্জাদী কর্তৃক পূর্বাপর থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছে মোঃ ইমরানুজ্জামান রোমান। মুদ্রিত মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র তিনশত টাকা। লেখক, বঙ্গবন্ধু ও সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর বইটি উৎসর্গ করেন।
২০০৩ সালে আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দেশ সুদানের পশ্চিমে দারফুর প্রদেশে সংগঠিত গৃহ যুদ্ধ ও ইতিহাসের এক ঘৃন্য জেনোসাইডের প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে কাতারের দোহায় জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সুদানের বিবাদমান দলগুলোর মধ্যে ‘দারফুর শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। এতে ২০১৯ সালের ২৫ মে
জাতিসংঘ-আফ্রিকান ইউনিয়নের সম্মিলিত হাইব্রিড অপারেশনাল মিশন উনামিড (UNAMID) এ বাংলাদেশ ফর্মড পুলিশ ইউনিট BANFPU Rotation- ১১ সংযুক্ত হয়। বাংলাদেশ ফর্মড পুলিশ ইউনিটের কমান্ডার হিসেবে ২৯ জন মহিলা পুলিশ ও ১৪০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে তিনি দক্ষিণ দারফুরস্থ পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ মিশন সুপার ক্যাম্প নিয়ালাতে কার্যক্রম শুরু করেন। উল্লেখ্য যে, এর ৯ বছর আগে ২০১০ সালেও সুদানের দারফুরে তিনি প্লাটুন কমান্ডার হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। তখনও বিদেশের মাটিতে একটুকরো বাংলাদেশকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেবার বড় কোনো দায়িত্বে না থাকায় তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এবার সেই আশা পূরণের পালা। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। আসে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল হালিম কিন্তু তাই করলেন। তাঁর কাজ দেখে পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। জাগে বিস্ময়।
মোহাম্মদ আব্দুল হালিমের লেখা বইয়ের নাম “সুদান মিশন ও মুজিববর্ষ”। বইটির অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে সুদান ও মুজিববর্ষ সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা থাকা অপরিহার্য।
আফ্রিকা মহাদেশের এক প্রাচীন রাজ্যের দেশ সুদান। এটি মুসলিম প্রধান হলেও মিশরের মত এর ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রয়েছে। ধারণা করা হয় মিশরীয় ফারাওদের সাম্রাজ্য সুদানের মেরাে রাজ্য পর্যন্ত বিস্তার ছিল। তাই সুদানিজদের ঐ সময় ব্ল্যাক ফারাও বা কালাে ফারাও বলা হত। আফ্রিকা এটি এমন একটি সমৃদ্ধ মহাদেশ যে এটি সর্বদা ইউরােপীয় শক্তি দ্বারা চালিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপকার, কিংবদন্তি, স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ২০২০-২০২১ খ্রিস্টাব্দকে মুজিববর্ষ হিসাবে জাতীয়ভাবে পালনের ঘোষণা প্রদান করে। পরবর্তী পরিস্থিতিতে তা ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
জাতিসংঘের অন্যতম একটি অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো। মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে মুজিববর্ষ পালন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর অধিবেশন চলাকালীন ২৫ নভেম্বর ইউনেস্কোর সকল সদস্যের উপস্থিতিতে মুজিববর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বিশ্বের ১৯৫টি দেশে অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের পাশাপাশি ঢাকায় আমন্ত্রিত ছিলেন বিশ্বনেতারা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ৮ জানুয়ারি, ২০২০ সালে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মতো সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, “২০২০ সাল আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।”
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হালিম জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে একজন সারথি। সুদান মিশনে রুটিন বাঁধা কর্মকাণ্ডের সাথে মুজিববর্ষের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নেও তিনি ছিলেন সংকল্পবদ্ধ।
শুরুতে নিয়ালা সুপার ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বের পাশাপাশি লং রেঞ্জ পেট্রোল, ক্যাম্পের অভ্যন্তরস্থ ইউ এন পার্সোনেল এবং প্রপার্টি সিকিউরিটি নিশ্চিত করা, ভি আই পি এস্কর্ট ডিউটি,আইপিও (এটি মিশনে পুলিশের একটি ইউনিট যারা এককভাবে নিয়োগকৃত) সদস্যদের প্রটেকশনের মাধ্যমে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান, নিয়ালা সুপারক্যাম্পের সিকিউরিটি পেরিমিটারের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মোবাইল পেট্রোলিং, ফুট প্যাট্রলিং আরো কতো কাজ! এত ব্যস্ততার মাঝেও কিছু মানুষ সৃষ্টিশীল থাকে। মোহাম্মদ আব্দুল হালিম তাদেরই একজন। ভালো কাজে,সৃষ্টিশীল কাজে আছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। থাকে সীমাবদ্ধতা। তবু মিশন এরিয়ায় বাংলাদেশের পতাকাকে সমুজ্জ্বল রাখতে হবে,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নানামুখী কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে, এ চিন্তা লেখকের মনোজগতে ধারণ করে বাস্তবে রূপ দিতে নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাঁর কাজে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মিশন পুলিশ কমিশনারকে রাজি কিংবা বশিভূত করা। কারণ, তিনি ছিলেন পাকিস্তানী! একজন পাকিস্তানি মিশন কমিশনারের অধীনে থেকেও কী করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে তিনি এতএত কাজ করলেন তা জানতে পড়তে হবে এই বই।
২৫ মে ২০১৯, নিয়ালা সুপার ক্যাম্পে অবতরণ করার পরের দিন থেকেই সব্যসাচীর মত তিনি কাজ করে চলেছেন। ২৯ শে মে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা দিবস ঘটা করে পালন করেন। জুলাই/১৯ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ইতিহাসে প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে “বঙ্গবন্ধু হল” নামে নিয়ালা সুপার ক্যাম্পে একটি হল রুম উদ্বোধন হয়। উনামিড মিশন প্রধান জয়েন্ট স্পেশাল রিপ্রেজন্টেটিভ জনাব জেরেমিয়া মামাবলো উদ্বোধন করেন। এটি একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন।
শোকের মাস অগাস্ট ২০১৯ এ, জাতির পিতাকে সুদানে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেন। সারা মাস জুড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় “বঙ্গবন্ধু হল” এ জাতির পিতার জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের উপর নির্মিত ভিডিও, শর্ট ফ্লিম প্রদর্শন করা হয়।
অক্টোবর/১৯,এই মাসেই নিয়ালাতে অবস্থিত দারফুর জাদুঘর যা সুদানের সবচেয়ে পুরানো জাদুঘর নামে পরিচিত, সেই জাদুঘরে জাতির পিতার সুদৃশ্য প্রতিকৃতি আরবী ভাষায় জীবন বৃত্তান্ত লিখে সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষণের চমৎকার ঘটনার বর্ননা না পড়লে অজানা রয়ে যাবে অনেকিছু।
নভেম্বর, ২০১৯ নিয়ালা সুপার ক্যাম্প চিরদিনের মতো সুদান গস পুলিশকে হস্তান্তর করে এল ফাশের চলে আসার করুন চিত্র, না পড়লে অনুধাবন করা সম্ভব নয়।উল্লেখ্য, ২০০৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রায় ১২টি বছর সগৌরবে বাংলাদেশের পতাকা এই ক্যাম্পে উড়েছিল।
নিয়ালা সুপার ক্যাম্পে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হল,শেখ রাসেল খেলাঘর,বঙ্গমাতা স্পোর্টস রুম,শেখ কামাল ডাইনিং হল,বাংলাদেশ হল, বঙ্গবন্ধুর নামে ফ্রেন্ড অফ দা ওয়ার্ল্ড মেডিটেশন পার্ক নির্মাণের ধারাবাহিক বর্ণনা পড়ে পাঠক মাত্রই উজ্জীবিত হবেন।
নিয়ালা ক্যাম্প হস্তান্তর প্রোগ্রামে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মত কোন মিশন প্রধানকে জয়েন্টস্পেশাল রিপ্রেজন্টেটিভ কর্তৃক “বেস্ট কন্টিনজেন্ট কমান্ডার” স্বীকৃতি সার্টিফিকেট প্রদান করা হলো। কেন প্রধান করা হলো জানতে বইটি পড়া জরুরি।
এল ফাশের লগ বেজ ক্যাম্প পর্ব:
১৯ শে নভেম্বর ২০১৯ এ এল ফাশের লগ বেজ ক্যাম্পে এসে সেখানকার পরিবেশেও তিনি নতুনমাত্রা যোগ করলেন। ওখানকার পুরাতন গাম্বিয়া ক্যাম্পকে নতুন আঙ্গিকে সাজালেন। ক্যাম্পটিকে “বঙ্গবন্ধু ক্যাম্প” নামকরণের জন্য এল ফাশের লগ বেজের কর্ণধার ডাইরেক্টর মিশন সাপোর্ট কে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যাঁর চিন্তা চেতনায় সবার আগে এসেছে দেশ, দেশের মানুষ, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একটা দেশ উপহার দিতে চেয়েছেন যিনি,তিনিই বঙ্গবন্ধু। তাই ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে স্যালুটিং ডায়াস নির্মাণ, ফ্ল্যাগ ষ্ট্যান্ড নির্মাণ, জাতির পিতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে বানানো “বঙ্গবন্ধু গোল চত্ত্বর” তৈরী করা হয়। মূল গেটের বাম পাশে ক্যাম্প নামকরণ “বঙ্গবন্ধু ক্যাম্প” ও বাংলাদেশের পতাকা চিত্রায়িত করে সাজানো হয়।
২২ শে নভেম্বর মিশন পুলিশ প্রধান পুলিশ কমিশনার ড. সুলতান আজম তিমুরি কে দিয়ে “বঙ্গবন্ধু ক্যাম্প” ও “বঙ্গবন্ধু গোল চত্ত্বর” নামকরণ করে উদ্বোধন করানো হয়। এটি বাংলাদেশের মিশন ইতিহাসের প্রথম বারের মত জাতির পিতার নামে ক্যাম্প নামকরণ!
এল ফাশের লগ বেজ ক্যাম্পে “বঙ্গবন্ধু ক্যাম্প” উদ্বোধন অতঃপর সেখানে জয় বাংলা গেইট নির্মাণ,বঙ্গবন্ধু ক্যাম্প ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড পুনঃ নির্মাণ,সেলামী মঞ্চ নির্মাণ,বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য মঞ্চ নির্মাণ,বঙ্গবন্ধু গোল চত্বর নির্মাণ,বঙ্গবন্ধু কর্ণার নির্মাণ ও এল ফাশের আল কিদা গার্লস স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণের কথা পড়তে পড়তে আপনি আবেগাপ্লুত হবেন। বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বময় পরিচিত করার প্রয়াসে নিয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়, এল ফাশ ক্যাম্প ওয়েলফেয়ার ইউনিট লাইব্রেরি সহ বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘দি প্রিজনার্স ডায়েরি’ ও ‘দি অনফিনিশড মেমোরিজ’ বই প্রদান করেন।
সুদান মিশন ও মুজিববর্ষ” শিরোনামে ১২৮ পৃষ্ঠার বইটিতে ৭-৮ পৃষ্ঠায় ‘লেখকের কথা’ বিধৃত হয়েছে। যেখানে মিশন সংক্রান্ত তথ্যাদি, মিশন ও মুজিববর্ষে তিনি কী কী করেছেন,কেন করেছেন,কী পেয়েছেন,বইটি কেন লিখেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে লেখকের পারিবারিক অবদান এবং বইটি লিখতে যিনি কিংবা যারা লেখককে উদ্বুদ্ধ করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। বইটির মূল বিষয়বস্তুর বিশদ বিবরণে ৯ থেকে ৭৩ পৃষ্ঠার মধ্যে বিভিন্ন লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক প্রায় ৩৫১টি ছবি সংযোজিত হয়েছে। লেখার সাথে ছবির মিল থাকায় বইটি সুখপাঠ্য হয়েছে। ৭৪ থেকে ৭৭ পৃষ্ঠার মধ্যে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ মিশন থেকে যে সকল সম্মাননা /এ্যাওয়ার্ড / সার্টিফিকেট পেয়েছেন তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে। ২০১৯-২০২১ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকাকালীন তিনি অনন্ত ৩৩টি সম্মাননা /এ্যাওয়ার্ড /সার্টিফিকেট পেয়েছেন। যা বিশ্বের সকল শান্তি রক্ষীদের জন্য এক বিশেষ অনুপ্রেরণা।
বইটির ৭৭ থেকে ৮১পৃষ্ঠার মধ্যে জুন/২০১৯ হতে এপ্রিল /২০২১ পর্যন্ত দারফুরে BNFPU কর্তৃক মিশন ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের পাশাপাশি তাঁর সার্বিক নির্দেশনা ও পরিচালনায় তারিখ অনুযায়ী আর্থ-সামাজিকমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাওয়া যায়। এটিকে মিশন চলাকালীন একটি ইউনিটের কাজের ফিরিস্তিও বলা চলে।
সুদান মিশনে নিয়োজিত থাকাকালীন মুজিববর্ষ ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সংবাদগুলো বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক /জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে ছাপা হয়। উল্লেখযোগ্য ৬০টি নিউজের ছবি সম্বলিত সংবাদগুলো বইটির ৮২ থেকে ১২৩ পৃষ্ঠার মধো পাঠক দেখে নিতে পারবে। যা দলিল হিসাবে সংরক্ষিত হবে। এবং কাজের প্রতি স্বীকৃতির সার্টিফিকেটগুলোর ছবি সন্নিবেশিত হয়েছে বইটির ১২৪ থেকে ১২৮ পৃষ্ঠার মধ্যে।
কাব্য নয়,গল্প নয়,উপন্যাস নয়,গবেষণা পত্রও নয়। এটি সুদান মিশনে নিয়োজিত এক কর্মবীরের লেখা কীর্তি কাহিনি। এখানকার প্রতিটি পর্ব অনুপ্রেরণাদায়ক এক একটি ছোট গল্প। লেখক যেহেতু বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য, তাই এটি সকল পুলিশ সদস্যকে পাঠ করা উচিৎ। লেখক যেহেতু জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্যের পাশাপাশি অধিক অবদান রেখেছেন, তাই বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত সকলকে এ বই পড়া উচিত। এই বই বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সকলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। কবি কুসুম কুমারী দাশ (আদর্শ ছেলে) লিখেছিলেন, “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।” বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে কবি বেঁচে থাকলে এমন কবিতা লেখার সুযোগ পেতেন না। কারণ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় মোহাম্মদ আব্দুল হালিমের মত সোনার ছেলেরা আছে। যাঁরা সত্যিকার অর্থেই কাজের কাজী। আমি লেখকের দীর্ঘ কর্মময় জীবন ও নেক হায়াত কামনা করছি।
লেখক: এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।