লেখক : ড.মোহাম্মদ আমিন, প্রফেসর- উত্তরা ইউনিভার্সিটি | ১০ জানুয়ারি ২০২৩ | ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রজার ক্রিস্প একজন খ্যাতিমান দার্শনিক। ব্রিটেনের বাইরের শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর আলাদা একটা টান ছিল। এর কারণ তাদের কাছ থেকে নতুন কিছু শেখা। তাঁর মতো শেখাপাগল শিক্ষক আমি আর দেখিনি। তাঁকে দেখলে মনে পড়ে যেত সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতার শেষ কটি লাইন- বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র,………….
অধ্যাপক রজার ক্রিস্প আমার একটি গবেষণা সন্দর্ভের প্রদর্শক ছিলেন। উপমহাদেশের বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তার মোটামুটি ভালো একটা ধারণা ছিল। এখানকার বহু-ধাপীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনি সমর্থন করতেন না। তবে বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করতেন। বলতেন কোনটি কী সুবিধা এবং কী অসুবিধা। আমি শুনতাম, প্রশ্ন করতাম; কিন্তু মন্তব্য করার মতো প্রজ্ঞা আমার ছিল না বলে করতাম না।
তিনি প্রায়শ বলতেন, মোহাম্মদ, তোমার দেশের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সাধারণত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক বিবেচনায় অধিক পরিশ্রমী ও মেধাবী।
কীভাবে বুঝলেন?
তোমাদের চেয়ে তাদের অনেক বেশি পড়তে হয়, অনেক বেশি জানতে হয়।
আপনার এমন ধারণা কেন হলো?
তাদের পাঠ্যপুস্তক আর পাঠ্যসূচি দেখে।
কী দেখলেন?
সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দুটি ভাষা (বাংলা ও ইংরেজি) জানলে হয়। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে পাঁচটি ভাষা (বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, উর্দু) পড়তে হয় এবং জানতে হয়। তাদের গণিত পড়তে হয়, বিজ্ঞান পড়তে হয়, ইতিহাস পড়তে হয়। সমাজবিজ্ঞান পড়তে হয়। অথচ তাদের তেমন সুযোগ দেওয়া হয় না। গ্রামের মাদ্রাসাগুলো তো পুরোই নিজস্ব অর্থায়নে চলে। তাই না?
জি, স্যার।
সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো তাদেরও সমান সুযোগ দেওয়া উচিত।
সুযোগ দেওয়া হলে কী হতো?
সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মতো সুযোগ দিলে তোমরা তাদের ধারে কাছেও যেতে পারবে না। আমি কিন্তু ধর্মীয় বিষয় বাদ দিয়ে কেবল ভাষা আর অন্যন্য বিষয়ে নিয়ে সাধারণ মন্তব্য করলাম। তুমি লেভেল প্লেয়িং সুবিধা দাও। কুসংস্কার থাকলে তার রেশ টেনে ধরো। তখন দেখবে তারা তোমাদের কোথায় নিয়ে যায়।