• শিরোনাম


    সকল ভাষা’ই আল্লাহর সৃষ্টি

    মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১:২৮ অপরাহ্ণ

    সকল ভাষা’ই আল্লাহর সৃষ্টি

     

    আল্লাহ তাআলা মানুষকে যত নিয়ামত দান করেছেন সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত হল, কথা বলার শক্তি, মনের গভীরে গচ্ছিত ভাব ও ভাবনা প্রকাশ করার শক্তি। এ শক্তির মাধ্যমে মানুষ তার প্রয়োজন ও চাহিদা অপরের নিকট তুলে ধরতে পারে। পরস্পরে মতবিনিময় করতে পারে। মনের ইচ্ছা ও আবেগ, চিন্তা ও চেতনা সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। এব্যাপারে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন,
    ‘পরম দয়াময় তিনি, যিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানবজাতিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন ও বয়ান তথা বর্ণনা করার জ্ঞান দান করেছেন।’
    (সূরা: আর-রাহমান, আয়াত: ১-৪)



    বর্ণনা শক্তির আরেক নাম ভাষা। ভাষা একটি নয় অসংখ্য। পৃথিবীর একেক দেশের একেক অঞ্চলের মানুষ একেক ভাষায় কথা বলে। এর কোনোটিই মানুষের তৈরি নয়, বরং তা আল্লাহর অপার কুদরতের নিদর্শন। পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা।’

    আল্লাহ তাআলা যখন হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন, তাঁকে সব ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘অর্থাৎ আদম সৃষ্টির পর পৃথিবীতে যত ভাষা আছে সব কিছুর জ্ঞান তাঁকে দান করা হয়েছে।’
    ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো ভাষাই পর নয়। বিদেশী নয়। পৃথিবীর সকল ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি এবং প্রত্যেক ভাষারই রয়েছে নিজস্ব কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট্য।
    ভাষা বিদ্বেষ হল, জাহিলিয়্যাতের উত্তরাধিকার। কোনো ভাষা যেমন পূজনীয় নয়, তেমনি ঘৃণা-বিদ্বেষেরও পাত্র নয়। একমাত্র আরবী ভাষাই পেতে পারে পবিত্র ভাষার মর্যাদা। এছাড়া পৃথিবীর আর সব ভাষাই সমমর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ তাআলা মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন এবং যুগে যুগে মানুষের মুখের ভাষা উন্নতি ও সমৃদ্ধির বিভিন্ন সিঁড়ি বেয়ে বর্তমান রূপ ও আকৃতিতে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। তাই মুসলমান প্রতিটি ভাষাকেই শ্রদ্ধা ও মর্যাদার চোখে দেখে। কারণ, মনের ভাব প্রকাশে সব ভাষাই মানুষকে সাহায্য করে। তাই প্রয়োজনে যে কোনো ভাষা শিক্ষা করা ইসলামেরই নির্দেশ। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযি.) কে হিব্রু ভাষা শেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ হিব্রু ভাষা হচ্ছে নির্ভেজাল ইহুদী ভাষা। সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই বিদেশী ভাষা জানতেন। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, হযরত সালমান ফারসী (রাযি.) ফার্সি ভাষার লোক ছিলেন। তিনি আরবী ভাষাও শিখেছেন। হযরত বেলাল (রাযি.) হাবশার ভাষাও জানতেন, আরবী ভাষাও জানতেন। এই জাতীয় অনেক সাহাবীর নাম ইতিহাসে আছে, যারা আরবীর পাশাপাশি অন্য ভাষা জানতেন।
    দ্বীন ও দুনিয়ার প্রয়োজন ও উন্নতির জন্য যে কোনো ভাষা শেখা যাবে। ইসলাম এখানে কোনো বাঁধা সৃষ্টি করে না।
    পৃথিবীর সকল ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি ও কুদরতের নিদর্শন। কোনো ভাষাই পর নয়। ভাষা বিদ্বেষ জাহিলিয়্যাতের উত্তরাধিকার।

    ইসলামে মাতৃভাষা চর্চার গুরত্ব

    ভাষা হল, মনের গভীরে গচ্ছিত ভাব ও ভাবনা প্রকাশ করার শক্তি। প্রয়োজন ও চাহিদা অন্যের সামনে তুলে ধরার মাধ্যম। মনের ইচ্ছা ও আবেগ সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার মুখপাত্র। প্রতিটি মানুষ তার মায়ের ভাষায় নিজের ভাব প্রকাশ করে থাকে। ফলে তার অস্হি, রক্ত ও মাংসের সঙ্গে গড়ে উঠে ভাষার নিবিড় সম্পর্ক। মায়ের মায়াবী ডাক, স্নেহ-মমতা, আদর-সোহাগ যেমন শিশুর স্নায়ুতন্ত্রে শিহরণ জাগায়, তেমনি মাতৃভাষা তার হৃদয়তন্ত্রীতে আলোড়নের ঝঙ্কার তোলে।
    মাতৃভাষার চর্চা ও উৎকর্ষের মাধ্যমে মানুষ তার মনোজগতের সুপ্তভাব, চিন্তা-চেতনা বিকাশ ও আত্মপ্রকাশের মজবুদ বুনিয়াদ নির্মাণে সক্ষম হয়।
    মাতৃভাষা সকল ভাব প্রকাশ ও জগত জীবন উপভোগ-উপলব্ধির বড় অবলম্বন। মাতৃভাষা ও চিন্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উভয়টি একই সূত্রে গাঁথা। তাই সকল মানুষের জাগৃতি, ব্যক্তিত্বের উন্মেষ, স্বভাব আদর্শের যথাযথ বিকাশ সাধন একমাত্র মাতৃভাষাতেই সম্ভব। মাতৃভাষার যাদুস্পর্শে মানুষের সকল ভাব-চিন্তা যুগপৎভাবে জাগরিত হয়। অন্য ভাষায় তা সম্ভব হয় না। সুপ্ত মনের অব্যক্ত কথা, হৃদয়ের অদৃশ্য ব্যথা মাতৃভাষায় যেভাবে প্রকাশ করা যায়, অন্য ভাষায় তা পারা যায় না। আর সম্ভব হয় না বা পারা যায় না বলেই মাতৃভাষার এত গুরত্ব ও তাৎপর্য।
    পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক নবীকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি। যাতে সুন্দর ও সহজ করে আমার বাণী মানবজাতির কাছে তুলে ধরতে পারে।’
    আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো ছিলেন তার মাতৃভাষার সর্বোত্তম, সাবলীল ও মাধুরিময় ভাষার অধিকারী। তিনি বলেছেন, ‘আমি আরবের সর্বোত্তম সাহিত্যিক’।
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরসূরী হিসেবে দ্বীনের দাওয়াত সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হলে, আলেমসমাজকেও বাংলাভাষা ও সাহিত্য চর্চায় এগিয়ে আসতে হবে। এমনকি বাংলাভাষা ও সাহিত্যের নেতৃত্বও আমাদের হাতে নিতে হবে। আমাদের হতে হবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী লেখক, সাহিত্যিক ও সুবক্তা। ভাষা ও সাহিত্যের সকল শাখায় আমাদের থাকতে হবে দৃপ্ত পদচারণা।
    আমাদের লিখনী হবে যাদুময়ী, হৃদয়গ্রাহী, যেন আজকের ধর্মবিমুখ শিক্ষিত সমাজ অমুসলিম ও নামধারী মুসলিম লেখক-সাহিত্যিকদের ছেড়ে আমাদের সাহিত্য নিয়েই মেতে উঠে এবং আমাদের কলম যাদুতেই আচ্ছন্ন থাকে।
    আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।

    Facebook Comments Box

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
  • ফেসবুকে আওয়ারকণ্ঠ২৪.কম