| ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ | ১২:৫০ অপরাহ্ণ
বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোগীকে দেখতে গেলে সে যেন (সাক্ষাৎ) সংক্ষেপ করে।’ কেননা অনেক সময় সাক্ষাৎকারীদের কারণে রোগীর ভীষণ কষ্ট হয়, যা আমরা উপলব্ধি করি না। আর রোগীও কিছু বলতে পারে না সামাজিক কারণেই। এজন্য পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝেই তাকে দেখতে যাওয়া উচিত
হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, বোখারির প্রথম হাদিসে বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ বোখারির প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল কারি’তে মোল্লা আলী কারি (রহ.) আলোচ্য হাদিসটির ব্যাখ্যায় লিখেছেনÑ মানুষের নিয়ত এতটাই শক্তিশালী যে, তা ইবাদত নয়, এমন বিষয়কে ইবাদত বানিয়ে দেয়। যেমন ঘুম। মানুষ নিজ প্রয়োজনে ঘুমায়; কিন্তু যদি এ নিয়তে ঘুমায় ‘আমি ঘুমাব শরীর চাঙা হবে এবং সুস্থ শরীরে মহান আল্লাহর ইবাদত করব’, তাহলে যতক্ষণ ঘুমাবে ততক্ষণ তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে।
হাদিসটি উল্লেখের কারণ হলো, মানুষ কোনো না কোনো রুগ্ণ ব্যক্তিকে দেখতে যায়। এটা নিছক রুসম বা প্রথা পালন নয়; বরং শর্তসাপেক্ষে ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আমাদের রোগী ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (বোখারি)। সুতরাং মানুষ যদি মানবিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার উদ্দেশ্য পরিহার করে নবীজির সুন্নত পালনের নিয়তে রোগীকে দেখতে যায়; তবে এটা বিনিময়পূর্ণ একটি ইবাদতে পরিণত হবে।
মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেন, ‘এক মুসলমান অসুস্থ হলে অপর মুসলমান যখন তাকে দেখতে যায়, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতের বাগানেই থাকে।’ (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘কোনো মুসলমান অপর অসুস্থ মুসলমানকে সকালবেলা দেখতে গেলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে। আর সন্ধ্যায় দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য মাগফেরাত কামনা করতে থাকে এবং আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান বরাদ্দ করে দেন।’ (তিরমিজি)।
বাড়ির পাশের রোগীকে ক্ষণিকের জন্য দেখতে গেলেও এ বিরাট সওয়াবের মালিক হবে; তবে সেটা ইখলাসের সঙ্গে সুন্নত পালনের নিয়তে হতে হবে। রাজনৈতিক বা পারিপার্শ্বিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য রোগীকে দেখতে যাওয়া, তার সঙ্গে ফটোসেশন বা সেলফি তোলাÑ এটা চরম নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য।
অসুস্থ ব্যক্তি বিরাগভাজন ও ক্ষোভের পাত্র হলেও সুন্নত পালনের নিয়তে তাকে দেখতে যাওয়া উচিত। ফলে এ ক্ষোভ আল্লাহর রহমতের জোয়ারে ভেসে যাবে। আন্তরিক হৃদ্যতা গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করা বাঞ্ছনীয়। বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোগীকে দেখতে গেলে সে যেন (সাক্ষাৎ) সংক্ষেপ করে।’ কেননা অনেক সময় সাক্ষাৎকারীদের কারণে রোগীর ভীষণ কষ্ট হয়, যা আমরা উপলব্ধি করি না। আর রোগীও কিছু বলতে পারে না সামাজিক কারণেই। এজন্য পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝেই তাকে দেখতে যাওয়া উচিত।
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ফল বা কিছু একটা নিয়ে যেতেই হবে, এমন প্রবণতা আমাদের সমাজে বিদ্যমান। অথচ এটি নিছক সামাজিক প্রথা। শরিয়তে এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। উপরন্তু এ প্রথার বেড়াজালে আটকে অনেক মানুষই রোগীকে দেখতে যাওয়ার মতো ফজিলতপূর্ণ সুন্নতকে অবলীলায় ছেড়ে দেয়। হয়তো আর্থিক সংকটের কারণে রোগীর জন্য কিছু হাদিয়া নেওয়ার মতো তৌফিক কারও না-ও থাকতে পারে। কিন্তু এজন্য হীনম্মন্যতায় ভুগে গুরুত্বপূর্ণ এ সুন্নতটি বর্জন করা দুঃখজনক ব্যাপার। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন প্রয়োজন। সাক্ষাৎকারী অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কিছু না আনলে আমরা সেটা নিয়ে উপহাস করি। এটা অবশ্যই গর্হিত আচরণ।
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে বড় হাদিয়া হলো, তার কাছে গিয়ে রাসুুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক শেখানো তাৎপর্যপূর্ণ দোয়াগুলো পাঠ করা। এতে রোগমুক্তির একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালার কাছে ফরিয়াদ জানানো হবে এবং রোগীও মানসিক প্রশান্তি লাভ করবে।