লেখক: এম.ডি.সালাহ উদ্দিন | ০৪ এপ্রিল ২০১৯ | ১০:৫১ অপরাহ্ণ
যে কয়টি প্রশ্নের মাধ্যমে এই লিখাটির দ্বিতীয় পর্ব শেষ হয়েছিলো।
আমরা বলেছিলাম যে- যেহেতু মানুষ মাত্র’ই স্বনির্ভর প্রাণী, সে ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রের অধিনস্ততা, তাদের জন্য কতটুকু প্রয়োজনীয়?
অথচ – বিশ্ব মানবতার সুশৃঙ্খল, সুন্দরতম, সুরক্ষার দ্বায়িত্বের দাবি নিয়ে, নির্ধারিত নীতিমালা বা প্রণীত সাংবিধানিক পদ্ধতিতে, বিশ্বজুড়েই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে রাষ্ট্রব্যবস্থা।
এবং, এটাও প্রশ্ন ছিলো যে- বিশ্ব মানবতার কল্যাণের দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র গুলোর ভুমিকা কি সফল?
নাকি বিফল?
আমরা বলেছিলাম যে- উত্তর আপনারা খুঁজতে থাকুন, তারপর – আমাদের সাথে মিলিয়ে নেবেন।
তা হলে, সেই মর্মে এবার আমরা আলোচনা শুরু করতে পারি।
আমাদের প্রথম কথা হচ্ছে- মানুষ যেহেতু স্বনির্ভর প্রাণী, যেহেতু তারা তাদের শ্রম দিয়েই নিজেদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় রসদপত্র জোগাড় করতে সক্ষম এবং তাই করে চলেছে, সেই সূত্রে, রাষ্ট্রের অধিনস্ততা তাদের দরকারী হবার কথা নয়।
কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে- মানুষ স্বনির্ভর হবার কারনেই, ব্যক্তি মানুষ বা গোষ্ঠী মানুষেরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে গিয়ে, অপর ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মানুষের উপর আক্রমনাত্মক হয়ে উঠার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকতে দেখা গেছে, এবং পরস্পরের আক্রমনাত্মক এই চরিত্র’ই, মানবজাতির ধ্বংসের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আর, এ কারনেই দেখা যাচ্ছে, মানব সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকেই শুরু হয়েছিলো, গোত্র বা দলীয় শাসনব্যবস্থা, উদ্দেশ্য ছিলো, মানুষকে স্বেচ্ছাচারীতা থেকে রক্ষা করে পরিমিত একটা নীতির সীমানায় চলতে শেখানো, যেন – জাতীয়ভাবে মানবজাতি ধ্বংসাত্মক অবস্থা থেকে রক্ষা পায়।
এবং – তখনকার সেই শাসনব্যবস্থার আধুনিক সংস্করণ’ই হচ্ছে, বর্তমান রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা।
এখন আমরা দেখবো, তখনকার গোত্রীয় গোত্রপতি বা দলীয় দলনেতা থেকে শুরু করে বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত সরকার প্রধানেরা, সম্ভাবনাময় স্বেচ্ছাচারী মানুষদেরকে নিয়ন্ত্রণ বা শাসন করে, মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে কতটুকু সফল হয়েছেন।
একটু আগেই আমরা, মানুষের চরিত্র রুপায়ণের ক্ষেত্রে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মানুষকে সম্ভাবনাময় স্বেচ্ছাচারী হিসেবে দেখেছি, এবং এই চরিত্র জগৎজুড়ে সকল মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান।
অতএব – বলা যায় যে- তখনকার গোত্রপতি, দলনেতা, এবং বর্তমানের রাষ্ট্রীয় সরকার নামে পরিচিত সংগঠনের মানুষ গুলোর মধ্যেও, স্বেচ্ছাচারী চরিত্র বিদ্যমান, এবং বাস্তবতাও সেটাই।
যুগে যুগে, গোত্রপতি, দলনেতা বা রাষ্ট্রীয় সরকার হিসেবে মানুষের এই স্বেচ্ছাচারী চরিত্র নিয়ন্ত্রণ বা শাসনের দায়িত্ব যাদের হাতে অর্পন করা হয়েছে, তারাই আরো বেশি বেশি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন।
নিজেদের শক্তির প্রদর্শনী করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় নাগরিকদের জাতীয় কল্যাণে, রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রণীত সাংবিধানিক নীতিমালা গুলোকে বেশি বেশি পরিমাণ বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন তারা’ই।
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কখনো বা নিজেদের মতো করে নীতিমালা বদলে দিয়েছেন, কখনো বা মনগড়া ব্যখ্যা দিয়েছেন।
ফলে, সমাজে জন্ম হয়েছে, নানান ধরনের মতবিরোধ, বিভিন্ন দল মত ও সম্প্রদায়, নানান দল মতে বিভক্ত হয়ে গেছে মানুষ, উত্থান ঘটেছে, শ্রেণী বৈষম্যের, শ্রেণী বিশেষ হয়েছে বঞ্চিত, আর – সম্পদ সঞ্চিত হয়ে গেছে শ্রেণী বিশেষের হাতে, শুরু হয়েছে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বা দলে দলে, সাম্প্রদায়িক সংঘাত।
এবং, এ ভাবেই বিশ্বজুড়ে যাদের হাতে মানব জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছিলো, তাদের হাত দিয়েই মানবজাতির ধ্বংসের দুয়ারে লাগানো তালাটা খোলে গেলো।
সংঘটিত হলো, দু দুটি বিশ্বযুদ্ধ, ধ্বংস হলো অনেক কিছুই, এবং, সেই ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে, বিশ্বজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এখনো চলছেই।
বিশ্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বিশ্ব রাজনীতির আলোচনা আমরা আপাতত, এখানেই শেষ করলাম, প্রশ্ন রেখে গেলাম, বিশ্বজুড়ে আজ যারা আমাদের নিয়ন্ত্রক বা শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের হাতে মানবজাতির সুরক্ষা কি নিশ্চিত?
আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, কেমন চরিত্রের শাসক চাই?
ভাবতে থাকুন।
চোখ রাখুন, আগামী পর্বে, সেখানে আমরা বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে, ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার বিষয়ে আলোচনা শুরু করবো।