• শিরোনাম


    রাজনীতির প্রেক্ষাপট [] মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া

    | ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ৫:২৫ অপরাহ্ণ

    রাজনীতির প্রেক্ষাপট [] মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া

    রাজনীতি কি ও কেন?
    রাজনীতি কাকে বলে- এর সংজ্ঞা অনেকেই জানে না, কিন্তু তারপরও রাজনীতি করে যাচ্ছে। রাজনীতি হল ন্যায়নীতি ও আদর্শ অবলম্বন করে রাজ্যের জনগণের কল্যাণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা।

    রাজনীতি মানুষের জীবনকে শ্রেষ্ঠ পর্যায়ে নিয়ে যায়; আবার কোনো কোনো রাজনীতি মানুষের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস করে। সৎ কাজ ও সৎ অর্থ খরচ করে মানুষের কল্যাণে কাজ করাকে সুস্থ রাজনীতি বলে এবং এই রাজনীতি মানুষকে খ্যাতি ও সম্মানের উচ্চশিখরে পৌঁছে দেয়।



    অসৎ কাজ ও অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করলে যে কারও রাজনৈতিক জীবনের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তার স্ত্রী-সন্তানরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ জনগণের টাকা আত্মসাৎকারীরা হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী।

    বর্তমানে দেশে সৎ ও যোগ্য নেতার অভাব রয়েছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে সুশিক্ষিত সৎ যোগ্য আদর্শিক নীতিবান রাজনীতিবিদ প্রয়োজন।

    যদি রাজনীতির মধ্যে নীতিটাকে মানতে চান। নীতিটা হলো, নিজে সৎ থাকা, সততাকে উৎসাহিত করা, মেধা ও দক্ষতাকে উৎসাহিত করা। মানুষকে একত্র রাখা, মানুষকে উজ্জীবিত রাখা, মানুষকে শ্রমমুখী ও সততামুখী করা, পৃথিবীর বুকে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার তাগাদা সৃষ্টি করা; নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করা এবং আগামীর দিকে সুদূর দৃষ্টি প্রসারিত রাখা। এরূপ নীতিতে বহাল থেকে রাজনীতি করা খুবই কঠিন।

    নীতিহীন রাজনীতি দেশ ও জাতির মঙ্গল আনতে পারেনা। তাই সুস্হ ধারার রাজনীতি যা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির মধ্যেই দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনে।

    বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অসুস্থতা নিরাময় করার জন্যও চিকিৎসক প্রয়োজন। বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে বা সামাজিকভাবে অসুস্থ? আমার মতে- উত্তর হলো, সব আঙ্গিকে অসুস্থ হলেও কিছু কিছু আঙ্গিকে ‘গুরুতর অসুস্থ’। যেমন : শিক্ষা, সমাজ ও ব্যবসায় নৈতিকতায় গুরুতর অসুস্থ। জাতি গঠনের জন্য জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উপযুক্ত বন্ধু বেছে নেয়ার ব্যাপারে আংশিকভাবে হলেও অসুস্থ। জনগণের আবেগকে সম্মান করার ক্ষেত্রে এ রাষ্ট্র অসুস্থ। অবশ্যই বলতে হবে যে, পুরোপুরি সুস্থ নয়। সুস্থতায় ঘাটতি কতটুকু অথবা কতটুকু অসুস্থ, তার উত্তর একেকজন চিন্তাশীল ব্যক্তি বা বিশ্লেষক একেকভাবে দেবেন। যেহেতু বাংলাদেশও রুগ্ন সব আঙ্গিকে না হলেও অনেক আঙ্গিকে, অতএব এর জন্যও চিকিৎসক প্রয়োজন। চিকিৎসকের যুগে যুগে প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিক নিয়মে তথা নির্বাচনী পদ্ধতিতে ভালো চিকিৎসক পাওয়ার আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে, সেহেতু মানুষ গভীরভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

    পরিত্রাণের উপায় কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ
    বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অসুস্থতা থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। যেকোনো কাজ করতে গেলে শুধু শ্রম দিয়েও হয় না। মেধা, শ্রম, সময় ও অর্থ- এসব কিছুর সমন্বিত বিনিয়োগেই একটা ফল পাওয়া যায়। কিন্তু সব কিছুর আগে প্রয়োজন একটি সিদ্ধান্তের। ইতিহাসের একেকজন মহানায়ক, তার পারিপার্শ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতে একেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; সিদ্ধান্তগুলো ছিল যুগান্তকারী। উদাহরণ : জন্মস্থান মক্কা নগরী থেকে বাধ্য হয়ে হিজরত করেছিলেন তথা দেশান্তরী হয়েছিলেন বিশ্বনবী তথা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা:। দশ বছর পর তিনি যখন মদিনা থেকে বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে মক্কা নগরী বিজয় করেছিলেন, তখন তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, ইসলামবিদ্বেষী ও ইসলামবিরোধী মক্কাবাসীর সাথে তিনি কিরকম আচরণ করবেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
    দ্বিতীয় উদাহরণ: দীর্ঘ ২৭ বছর জেলে বন্দী থাকার পর, নেলসন ম্যান্ডেলা যখন মুক্ত হন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা নামক দেশটির নেতৃত্ব নেন, তখন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তিনি কী নিয়মে দেশ পরিচালনা করবেন, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ কালো চামড়ার মানুষদের ওপর দীর্ঘ দিন অত্যাচার করা সংখ্যালঘিষ্ঠ সাদা চামড়ার মানুষদের সাথে কীরকম আচার-আচরণ হবে, এ প্রসঙ্গে। ম্যান্ডেলা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে দেশ পরিচালনায় সহযোগী বানাবেন ওদের। তৃতীয় উদাহরণ তথা বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা; নয় মাসের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের নেতৃত্বকেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তারা নিকটতম প্রতিবেশী, একটু দূরের প্রতিবেশী, অনেক দূরের প্রতিবেশী-এরূপ রাষ্ট্রগুলোর সাথে কিরকম সম্পর্ক রাখবে এবং শাসনব্যবস্থা কিরকম হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাথমিক বছরগুলোতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো, পরবর্তী দশকগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করছে। ২০১৯ সালে এসে, সাংবিধানিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিপর্যস্ত, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দেশটি ভদ্রবেশী দুর্বৃত্তদের দখলে, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিবেশী দেশের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিস্ফোরণের অপেক্ষায় থাকা একটি আগ্নেয়গিরির মতো। আমাদের সাফল্য যা কিছু আছে, তার জন্য কৃতিত্ব যেমন আমাদের, তেমনি ব্যর্থতাগুলোর দায়ও আমাদের। এরূপ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। অতীতের ভুল সংশোধন প্রয়োজন। একটি দেশ রাজনীতিবিদেরা পরিচালনা করেন। তাই, রাজনীতি নামক কর্মপ্রক্রিয়ার চিকিৎসা প্রয়োজন।

    পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তাগুলো
    বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুণগত পরিবর্তন চাই। দেশে বিদ্যমান বহুদলীয় রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই এই গুণগত পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে হবে বলে বিশ্বাস করি। সৎ, মেধাবী, সাহসী ব্যক্তিরা রাজনীতিতে জড়িত হোক। সৎ, সাহসী, মেধাবী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জনগণের খেদমতের সুযোগ যেন পান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এমন হোক যেখানে সৎ, সাহসী, মেধাবী ব্যক্তিরা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন; জনগণের সামনে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন এবং জনগণকে আশ্বস্ত করে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে পারেন। যথেষ্ট বা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৎ, মেধাবী, সাহসী ব্যক্তি যদি পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন, তাহলে পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে একটি গুণগত পরিবর্তন সূচিত হবে। সে জন্য বাংলাদেশে সাহসী ভোটার প্রয়োজন,যারা সৎ, সাহসী, মেধাবী ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। সে জন্য বাংলাদেশে সাহসী মিডিয়া প্রয়োজন, যে মিডিয়া সৎ, সাহসী, মেধাবী ব্যক্তিদের উৎসাহিত করবে এবং প্রচারণায় পৃষ্ঠপোষকতা দেবে।

    পরিবর্তনের জন্য মূলনীতি
    বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের আরো কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ। প্রথম : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের চেতনা সম্মিলিতভাবে বা যুগপৎ বিদ্যমান থাকবে। দ্বিতীয় : ধর্মের ধর্মীয় নেতাগণ, মুক্তিযুদ্ধের নেতাগণ এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাগণ, জাতীয় ঐক্যের প্রেরণা হবেন, জাতীয় বিভক্তির কারণ হবেন না। তৃতীয় : সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায় ও সাম্য। চতুর্থ : জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস শুরু হবে। পঞ্চম : প্রতিহিংসা নয়, পারস্পরিক প্রতিযোগিতাই হবে উন্নয়নের এবং অবদানের কাঠামো। ষষ্ঠ : আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, সততা এবং প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সপ্তম : রাজনীতি ও ব্যবসার অঙ্গনে তারুণ্যকে তথা বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে উৎসাহিত করতে হবে এবং অগ্রাধিকার দিতে হবে। অষ্টম এবং শেষ : বাংলাদেশের মঙ্গল, বাংলাদেশের কল্যাণ, বাংলাদেশের নাগরিকদের উপকার কোন কোন পন্থায় এবং কিসে কিসে নিহিত, এ প্রসঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিকল্পিতভাবে সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি চালু করতে হবে।

    Facebook Comments Box

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
  • ফেসবুকে আওয়ারকণ্ঠ২৪.কম