| ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৯:৪০ অপরাহ্ণ
মাওলানা সা’দ সন্দেহাতীতভাবেই পথ হারিয়েছেন। শত বছরের তাবলিগকে তিনি কলুষিত করেছেন। কলঙ্খিত করেছেন। তাবলিগকে তিনি একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনে পরিণত করেছেন। সন্দেহ নেই তিনি একজন প্রচণ্ড ক্ষমতালোভী মানুষ। আজকের টঙ্গি প্রমাণ করল একই সাথে তাকে রক্ত নেশাও পেয়ে বসেছে। বাংলাদেশের সা’দপন্থিরা প্রমাণ করল তারা ইলিয়াসি তাবলিগ নয়, সা’দ সাহেবের গোমরাহি তাবলিগের ধ্বজাধারী। যে কারণে তারা প্রফেশনাল গুন্ডাদের মতো এমন ন্যাক্কারজনক হামলা করতে একবারও ভাবেনি।
সা’দ সাহেব অ্যান্টি-তাবলিগ অথবা অ্যান্টি ইসলাম কোনো গোষ্ঠীর পারপাস সার্ভ করছেন বলে এতদিন অনেক আলেমকেই সন্দেহ করতে দেখেছি। বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করেনি। আজ করছে। আজ তিনি প্রমাণ করেছেন আসলে তিনি কোন চিজ। আল্লাহপাক তাকে হেদায়ত দিন। কপালে হেদায়ত না থাকলে ধ্বংস করুন। দ্বীনি মেহনতের এই জামাতটি টিকে থাকুক। কিন্তু উলামায়ে কেরাম যারা জায়গায় জায়গায় ওজাহাতি জোড় করলেন, তাঁরা কতটা দূরদর্শিতার প্রমাণ রাখতে পারলেন, আজ যখন এই প্রশ্নটি ওঠছে, তখন বরাবরের মতো জবাব দেওয়ার মতো সামনে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দুই
তাবলিগে যারা সময় লাগায়, তাদের অভার নাইন্টি পারসেন্টই আওয়াম। তাদের কাছে একশজন শায়খুল হাদিস সমান তাদের একজন মুরব্বি। এই ব্যাপারটা কি বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম বুঝেন? তাহলে এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচানোর জন্য কী করা উচিত ছিল, অথবা তাঁরা যেভাবে যা করলেন, সেটাই কি সঠিক পথ ছিল?
উলামায়ে কেরাম তাবলিগের সাথীদের হিকমাহ এবং মাওইজায়ে হাসানার মাধ্যমে লাইনে আনার চেষ্টা না করে সরাসরি প্রতিপক্ষ বানিয়ে মাঠে-ময়দানে ঝাপিয়ে পড়লেন। তাদেরকে কোথাও দাঁড়াতে না দেওয়ার হুংকার ছুড়লেন। কাজটা ঠিকই ছিল?
বললে তো বড় কথা বলে ফেলতে মন চায়। সামান্য কমন সেন্সও যদি না থাকে, তাহলে কে বলেছে এসবে জড়াতে? মাদরাসা মাদরাসায় বসে বসে বীরে বুজা আর বীরে মাউনার ফারাক বয়ান করে দিন কাটালেই হয়।
তিন
আমরা এখনো জানি না টঙ্গিতে আজ কোনো মায়ের বুক খালি হল কিনা, অথবা কতজনের! শুধু জানি এ নিয়ে কাউকে কষ্ট পেতে দেখা যাবে না। বরং ছেলেটি শহিদ হবার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করল বলে এক ধরণের তৃপ্তি প্রকাশ করবেন। কেউ কেউ রক্তের বদলা বাণিজ্যেও মেতে ওঠতে পারেন। অসম্ভব না। ২০১৩’র শাপলা বাণিজ্যর কথা তো আমরা ভুলে যাইনি।
আমরা জানি না টঙ্গিতে আজ কত রক্ত ঝরল। কার ঝরল। তবে হলফ করে বলতে পারি যারা যে কোনো মূল্যে টঙ্গিতে ইজতেমা করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন, যারা স্থানে স্থানে ওয়াজাহাতি জোড়ে মাইক গরমকরা বক্তৃতা করছিলেন, যারা কোনো রকম সমঝোতার পথ না খুঁজে অ্যাক্সট্রিম অবস্থান ধরে রাখলেন, তাদের কারো শরীর থেকে আজ একফোটা রক্তও ঝরেনি।
চার
টঙ্গির ঘটনায় আমরা যতটা না মর্মাহত, তারচে বেশি বিস্মিত। বিস্ময়ের কারণ, সা’দ সাহেবের বাংলাদেশি খলিফারা এবং তাদের অনুসারীবৃন্দ কয়েকদিন থেকেই রণসজ্জা গ্রহণ করে আসছিলেন। প্রায় প্রতিদিনই তারা ঘোষণা দিচ্ছিলেন টঙ্গির মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না। গতকাল তো ব্যাপারটি মোটামুটি স্পষ্টই হয়ে গিয়েছিল। তারপরেও ওয়াজাহাতি নেতৃবৃন্দকে ব্যাপারটি চিন্তিত করল না। তারপরেও তাঁরা ভাবলেন না সেখানে যদি দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাজে, এবং বাজাটাই যখন অবধারিত, তখন ছেলেদের মার খাওয়ার জন্য সেখানে ছেড়ে দেওয়াটা কি ঠিক?
আজকের ঘটনার প্রকৃত অবস্থা এবং হতাহতের ব্যাপারে এখনো আমাদের হাতে সঠিক কোনো তথ্য নেই। সুতরাং পুরো ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলবার জন্য আমাদেরকে আরো অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য ততক্ষণে আরো রক্ত ঝরে কিনা, সেটাই হল ভাবনার বিষয়। মনে রাখতে হবে সবসময় সকল ক্ষেত্রে বদলানীতি কল্যানকর হয় না।
পাঁচ
উলামায়ে কেরামের কি উচিত ছিল না তাবলিগের অস্বস্থিজনক এবং বিব্রতকর অবস্থার গভীরে যেতে চেষ্টা করা! এই অস্বস্থি কৃত্রিম কিনা, সা’দ সাহেবকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তাবলিগের ইজতেমা সরিয়ে নেওয়ার অথবা সরিয়ে দেওয়ার দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ কিনা, বিরোধের দোহাই তুলে ‘যে যার ঘরে অথবা নিজস্ব মসজিদে তাবলিগ করো’- এমন কোনো ফরমান জারির পরিবেশ তৈরি করবার পরিকল্পিত আয়োজন কিনা… ভাবতে চেষ্টা করা!
আমাদের ধারণা ভুল হোক। মনে হচ্ছে বাংলাদেশ সেদিকেই আগাচ্ছে। তাবলিগের ইজতেমা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, সবই করা হচ্ছে। আর এই কাজে আমরা সবাই ব্যবহৃত হচ্ছি। কেউ হচ্ছি সরলতায়, কেউ আবার আবেগে।
উই নীড আ ডীপ থট।