| ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ
বগুড়ার মাঠ এখন সরিষা ফুলে হলুদ রঙে সেজেছে। অপরূপ দৃশ্য। চোখ মেললেই মন জুড়িয়ে যায়। মৌমাছি, প্রজাপতির অবিরাম খেলা গ্রামীণ জনপদকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে হলুদ গালিচায়। চাষিদের পদচারণায় প্রকৃতি যেমন সেজেছে, ঠিক সেই সঙ্গে মেতে উঠেছে মধু সংগ্রহে মৌয়ালরা।
সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন এসব মৌয়াল। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
এই অপরূপ দৃশ্য যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমী মানুষকে আকৃষ্ট করে তুলছে।
সরজমিন দেখা গেছে, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা রানীরহাট এলাকা, দুপচাঁচিয়া উপজেলা এবং নন্দীগ্রামের বিজরুল, ভাটগ্রাম, কাথম, জামালপুর, চানপুর, পুনাইল এলাকার মাঠে মাঠে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে সরিষার ফুল ফুটেছে আরো সপ্তাহ দুয়েক আগেই। এসব ফুলের মধু আহরণে নেমেছেন পেশাদার মৌয়ালরা। তাদের বাক্স থেকে দলে দলে উড়ে যাচ্ছে পোষা মৌমাছি। ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুলে ফুলে। আর সংগ্রহ করছে মধু। মুখভর্তি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরছে বাক্সে রাখা মৌচাকে। সেখানে সংগৃহীত মধু জমা করে আবার ফিরে যাচ্ছে সরিষার জমিতে। এভাবে দিনব্যাপী মৌমাছিরা যেমন মধু সংগ্রহ করে, আবার বিভিন্ন ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে পুরো জমির পরাগায়নেও সহায়তা করে। এ মৌসুমে মৌয়ালরা পোষা মৌমাছি দিয়ে প্রচুর মধু উৎপাদন করে যেমন লাভবান হচ্ছেন, ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় চাষিরাও বাড়তি আয়ের আশা করছেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বিজরুল মাঠে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে আসা পাবনা চাটমোহরের পেশাদার মৌয়াল ওমর ফারুক জানান, তিনি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও পোষা মৌমাছির ১৫০টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে বিজরুলে এসেছেন। তিনি এ বছর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি মধু সংগ্রহ করতে পারছেন।
বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার নারীরহাট এলাকায় মাঠে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে আসা সিরাজগঞ্জের পেশাদার মৌয়াল নূরবক্স জানান, তিনি ২০ দিন ধরে পোষা মৌমাছির ১১০টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছেন। এখানে সরিষার ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে তিনি যেমন লাভবান হচ্ছেন, ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় স্থানীয় চাষিরাও খুশি হচ্ছেন।
আরেক জন চাষি মাসুদ রানা জানান, এবারে সরিষা চাষ কম হওয়ায় উৎপাদন কম হবে। এরপর কালো জিরা মৌসুম শুরু হবে। তখন উৎপাদন বাড়বে বলে তিনি জানান।
কথা হয় বগুড়া মৌচাষি সমবায় সমিতির সভাপতি শাহাদত হোসেনের সঙ্গে, তিনি জানান, বগুড়ায় প্রায় ১০০ পরিবার মৌ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার নিজের ফার্মে এবার ১১৫ বক্সে মধু সংগ্রহ করছেন। তিনি জানান, প্রতিবক্সে ৬ থেকে ১০ লাখ মাছি। চলতি সরিষা মৌসুমে তিনি ১৫০০ লিটার মধু সংগ্রহের আশা ব্যক্ত করেছেন। ইতিমধ্যে তার ফার্ম থেকে ৫০০ লিটার সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশে বছরে ৩ মৌসুমে মধু সংগ্রহ করা যায়। এখন চলছে সরিষা এরপর কালোজিরা এবং লিচুর মৌসুম শুরু হবে। তিনি আরো জানান, কালোজিরার মধু সংগ্রহের জন্য দেশের প্রায় চাষিরা শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর যায়। সেখানে কালোজিরা চাষ বেশি হয়ে থাকে। আর লিচুর জন্য বগুড়া, শেরপুর ও দিনাজপুরে ভিড় জমান এসব চাষি।
বগুড়া আঞ্চলিক কৃষি অফিস জানায়, এবার বগুড়া জেলায় এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরষের আবাদ করা হয়েছে। এবার সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৬ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমি।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, লাভজনক শস্যবিন্যাস পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে অধিকবার ফসল ফলানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এসব উদ্ভাবনী কৌশলে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করানোর ফলে এখন অনেক জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ হচ্ছে। এছাড়া রোপা আমন কেটে বোরো ধান রোপণের আগে একটি বাড়তি অর্থকরি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আবার ওইসব সরিষার ফুল থেকে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে লাভবান হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পেশাদার মৌয়ালরা
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |