মাওঃ মুজিবুর রহমান হামিদী, | ০৩ অক্টোবর ২০১৮ | ৫:২৬ অপরাহ্ণ
উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও ১০৫ বছরের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সুযোগ্য মুহতামিম, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, লেখক, গবেষক, মুফতী, মুফাসসির ও মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতি মুবারক উল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ। তিনি ১৩৬০ বাংলা হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার দৌলতপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী ক্বারী মুলফতুল্লাহ রহ.। দাদা নিয়াজ মোহাম্মদ। তারা ভাই-বোন ছয় জন। তিনি সর্ব কনিষ্ঠ।
প্রাথমিক শিক্ষা :তিনি সর্বপ্রথম দৌলতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা শুরু করেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা : অতঃপর তিনি ১৩৮৮ হিজরী মোতাবেক ১৯৬৮ইং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মালিহাতা তাজুল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হয়ে সেখানে জামাতে পানজাম (১০ম শ্রেণি) পর্যন্ত অধ্যায়ন করার পর ১৯৭৩ইং উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইসলামী বিদ্যাপিঠ ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জামাতে চাহারম (একাদশ শ্রেণী) ভর্তি হয়ে উক্ত জামিয়া থেকে ১৯৭৭ইং অত্যন্ত সুনামের সাথে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন।
উচ্চ শিক্ষা : জামিয়া ইউনুছিয়া থেকে ফারেগ হওয়ার পর তদান্তিন একমাত্র ইফতা বিভাগ আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম থেকে ইফতা ও পুনরায় দাওরায়ে হাদিসের ডিগ্রি অর্জন করেন। জামিয়া আরজাবাদ ঢাকার আল্লামা শামসুদ্দিন কাসেমী রহ. এর নিকট উচ্চতর তাফসীরের বিশেষ কোর্স সমাপ্ত করেন ও ইসলামী রিচার্স সেন্টার বসুন্ধরা (ঢাকা) থেকে শরীয়তসম্মত সুদ মুক্ত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
জেনারেল শিক্ষা : কওমী মাদরাসায় লেখাপড়া শেষ করার পর তাঁর তালিমী মুরব্বি আল্লামা মুফতী নুরুল্লাহ রহ. এর পরামর্শ ক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানাধীন শ্রীপুর আলীয়া মাদরাসা থেকে যথাক্রমে দাখিল, আলিম, ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর কুমিল্লা জেলাধীন ধামতী আলীয়া মাদরাসা থেকে ১৯৯১ইং অত্যন্ত সুনামের সহিত কামিল পাস করেন।
কর্মজীবন : ১৯৭৮ঈসায়ী মোতাবেক ১৩৯৯ হিজরী ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের পাশাপাশি সহকারী মুফতী ও এদারায়ে তালিমিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর সহকারী নাজেমের দায়িত্ব লাভ করেন। কয়েক বছর পর তিনি মুহাদ্দিস হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। রঈসুল মুফাস্সিরীন আল্লামা সিরাজুল ইসলাম (বড় হুজুর রহ.) এর ইন্তেকালের পর যখন আল্লামা মুফতী নুরুল্লাহ রহ. জামিয়া ইউনুছিয়ার মুহতামিম ও এদারার ছদর হলেন- তখন তিনি এদারার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর গত ২০১০ঈসায়ী থেকে উক্ত জামিয়ার মুহতামীম ও প্রধান মুফতীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি মুরুব্বীদের প্রদত্ত দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সুনামসহকারে পালন করে যাচ্ছেন।
তিনি বাংলাদেশ বেফাকুল মাদারিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্যসহ বেফাক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও এদারায়ে তালিমিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর সিনিয়র সহ-সভাপতি। তিনি একজন শীর্ষস্থানীয় ও অন্যতম আলেমে বরহক, গবেষক, লেখক ও সম্পাদক, হাদীস ও তাফসীর বিশারদ, অত্যন্ত মুখলেস ও মুশফিক, দ্বীনদরদী, উন্নত মানুষ গড়া এবং উম্মতের কল্যাণে সার্বণিক চিন্তায় ব্যাকুল। খোদাভীতি তাকওয়া পরহেজগারীর মূর্ত প্রতিক। একেবারে সাদাসিধে জীবন যাপনকারী। গত ২৩ শে ডিসেম্বর ২০০৬ ঈসায়ী ফিদায়ে মিল্লাত আউলাদে রাসূল সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাইয়্যেদ আল্লামা আসআদ আল মাদানী রহ. এর সুযোগ্য খলিফা বাংলার আধ্যাত্মিক রাহবার আল্লামা মুফতী নুরুল্লাহ রহ. কর্তৃক সুলুক ও মারেফতের লাইনে এযাজত প্রাপ্ত খলিফা হন। অতঃপর তিনি একে একে বাংলাদেশ বেফাকুল মাদারিসের সম্মানিত চেয়ারম্যান দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) এর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. ও মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা শাহ আবরারুল হক রহ. এর সুযোগ্য খলিফা অধ্যক্ষ : মিজানুর রহমান চৌধুরী দা.বা. (পীর সাহেব কাপাসিয়া, গাজীপুর) এবং শায়খুল হাদিস আল্লামা এমদাদুল হক হবিগঞ্জী দা.বা. (লন্ডন প্রবাসী) থেকে খেলাফত লাভ করেন। সেই সুবাধে তরিকতের ময়দানে প্রচুর কাজ করে যাচ্ছেন।
বর্তমানে তার একশতের উপর এজাযতপ্রাপ্ত খলিফা ও হাজার হাজার মুরিদ রয়েছে। গত ২২ জানুয়ারী ২০১৪ইং ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলাধীন বড়াইল রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিয়া মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে আমি অধমকেও (মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী) সুলুক ও মারেফতের লাইনে এজাযত- খেলাফত প্রদান করেন।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র টেংকের পাড়স্থ জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব, বহু হাফেজ ক্বারী, মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিস ও কবি-সাহিত্যিকের উস্তাদ। বিশিষ্ট ইসলামী কলম সৈনিক অর্ধ শতাধিক ধর্মীয় গ্রন্থের প্রনেতা। এই মহা মনীষী আমার উস্তাদ, শায়খ ও মুরুব্বী। তিনি অল্প সময়ে দাওয়াতের ময়দানে অবিশ্বাস্য বিস্তৃত অবদান রাখছেন। তালিমের ময়দানে নিরলস নিবেদিত প্রাণ। তাযকিয়ার ময়দানে দিকভ্রান্ত নাবিকের বাতিঘর। আল্লাহ তায়ালা আখেরী নবীর উম্মতের দরদী এই ছায়াদার বৃক্ষকে আমাদের উপর দীর্ঘজীবি করুন। আমিন।