| ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ | ৯:৪১ অপরাহ্ণ
বয়স নব্বইয়ের কাছাকাছি। ছয় মাস আগেও তিনি টগবগে তরুণের মতো ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় বিশ মাইল সাইকেল চালিয়ে গ্রামের বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার ইসলামগাঁও (রানাগাঁও) থেকে কিশোরগঞ্জ শহরে আসা-যাওয়া করতেন। জেলা শহরে তাঁর একটি ছোট্ট হোমিওপ্যাথির দোকান ছিল। প্রায় বিনা পয়সায় তিনি রোগীদের চিকিত্সা করতেন। অনেক সময় দুস্থ রোগীদের ওষুধ কেনার টাকা-পয়সা দিয়েও সাহায্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী মাস্টার। ৩৭ বছর প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৯৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকার সময় অবসর সময়ে তিনি হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করতেন। এক সময় তিনি হোমিও মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি পুরোপুরিভাবে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত হন। এলাকায় ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।
গত জুলাই মাসে বাথরুমে পড়ে গিয়ে কোমরে ভীষণ চোট পান তিনি। এরপর থেকে তিনি শয্যাশায়ী। এখন হুইলচেয়ারে নতুবা বিছানায় শুয়ে-বসে সময় কাটে তাঁর। গত শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গুপ্তচর বৃত্তির কাজ করতেন। উর্দু ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারা এবং মুখভর্তি দাড়িগোঁফ থাকার কারণে পাক সেনারা তাঁকে ‘সাচ্চা পাকিস্তানি’ মনে করতেন। তিনি বিনা বাধায় পাক আর্মি ক্যাম্প কিংবা রাজাকারদের ক্যাম্পে ঢুকে যেতে পারতেন। শত্রুপক্ষের গতিবিধি ও ভেতরের খোঁজ-খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে কয়েকবারই তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। তাঁর জীবন বাজি রেখে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার জন্য পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন এবং মুক্তিবার্তায় তাঁর নাম তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিটি বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর ডাক পড়ে। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় তাঁর তিন সন্তান সরকারি চাকরি লাভ করে। তিনি দুঃখ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মিললেও এখনো পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য ভাতা তাঁর ভাগ্যে জুটেনি। দ্বারে দ্বারে ঘুরে শুধু আশ্বাস ছাড়া আর কিছু মিলেনি। কোনো কোনো পক্ষ থেকে মোট অঙ্কের অর্থ দাবি করা হয়। কিন্তু ‘ঘুষ’ দিয়ে তিনি ভাতা বরাদ্দ পেতে রাজি নন। এ ব্যাপারে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।