ইবরাহীম খলিল : | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১০:১৯ অপরাহ্ণ
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন। কমলাপুর স্টেশন ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত। এটি ঢাকার সাথে বাংলাদেশের অন্য জায়গার মধ্যে যোগাযোগের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল। এছাড়া এটি অত্যাধুনিক ভবন যার নকশা করেছেন মার্কিন স্থপতি রবার্ট বাউগি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬০ সালে এবং চালু হয় ১৯৬৯ সালে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দৈনিক ৫০টি ট্রেন বাংলাদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। দিন রাত সব সবসময় এখানে মানুষের যাতায়াত থাকে। যাত্রীদের সেবাদানের জন্য কমলাপুর স্টেশনে শতাধিক এবং বিভিন্ন বিভাগে বহুসংখ্যক কর্মচারি কর্মরত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভারত ভাগের আগে ফুলবাড়ীয় একটি মাত্র রেলওয়ে স্টেশন ছিল। বাংলা বিভক্তীকরণের পর ঢাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শহরে রূপান্তরিত হয়। তাই ১৯৬০ এর দশকে ফুলবাড়িয়ায়, ঢাকার একমাত্র রেলস্টেশনের স¤প্রসারণের উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন স্থাপনা গড়ে তোলে । স্থানীয়রা মুরব্বীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এর বর্তমান জায়গাটি ছিল বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। লোকজনের বসবাস ছিল না। নিচু জমি ভরাট করে মানুষ গড়ে তুলতে থাকে বসতি। পূর্ব দিকের মানুষ মতিঝিল আসা-যাওয়া করে এ রেল লাইনের ওপর দিয়ে। রেল রাস্তা পারাপারের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য রেল লাইনের ওপর গড়ে তোলা হয় ওভারব্রিজ। বাংলাদেশের এটাই সর্ববৃহৎ রেল ওভারব্রিজ।
কমলাপুর স্টেশনের অবয়ব: রেলওয়ে স্টেশনটিতে ৮ টি প্লাটফর্ম রয়েছে। প্রত্যেকটির সম্মুখে কোন প্লাটফর্ম থেকে কোন অঞ্চলের কোন ট্রেন ছেড়ে যায় তার তথ্য দেওয়া রয়েছে। প্লাটফর্মে যাত্রী ব্যতিত অন্য কেউ প্রবেশের জন্য ২০ নম্বর কাউন্টার থেকে দু টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয় । প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের প্রবেশের ও বাহির হওয়ার প্রবেশ পথটি পূবালী ব্যাংকের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। রেলওয়ে পোস্টাল ব্যবস্থা রয়েছে। ২য় শ্রেণীর যাত্রীদের বিশ্রামাগারের বাম পাশে এর অবস্থান। এখানে সেবা পেতে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ ও আর্মডগার্ড প্লাটফর্মগুলোতে সি সি টিভি ক্যামেরা ব্যবস্থা রয়েছে। ট্রেনে দু’ভাবে মালমাল পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রী নিজের সাথে নিয়ে যেতে পারেন অথবা মেইল ট্রেনে পাঠাতে পারেন। ব্যবসায়িক মালমাল হলে প্রতি কেজিতে ১ টাকা করে চার্জ দিতে হয়। ১নং প্লাটফর্মের পাশেই রয়েছে মেইল ট্রেনে মালামাল পরিবহনের বুকিং কাউন্টার। পণ্য অনুসারে মালামাল পরিবহনের মূল্য নির্ধারিত হয়। ট্রেন আসলে মাইকে ঘোষনা দেওয়া হয়। প্লাট ফরমে নিরাপদ পানি পানের ব্যবস্থা রয়েছে। পানি পানের জন্য একটি স্টিলের মগ আঁটকানো রয়েছে।
ব্যাংক ও এটিএম বুথ: রেলওয়ে স্টেশনে পূবালী ব্যাংকের ১ টি শাখা রয়েছে। তার পাশে রয়েছে পূবালী ব্যাংকের এটিএম বুথ। তাছাড়া রয়েছে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ। এটি ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের বুথ হলেও এই বুথ থেকে নিম্নের ব্যাংকগুলোর টাকা উত্তোলন করা যায়।
ক) মিউচুয়াল ব্যাংক, খ) স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, গ) ব্যাংক এশিয়া, ঘ) এন সি সি ব্যাংক, ঙ) কমার্শিয়াল ব্যাংক, চ) প্রাইম ব্যাংক, ছ) ইউনাইটে
পার্কিং ব্যবস্থা; স্টেশনের সামনেই রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইজারা দেওয়া সি.এন.জি স্টেশন ও রিক্সাস্ট্যান্ড যেখানে প্রতিবার যাত্রী বহনের সময় প্রত্যেক সি.এন.জি কে ৫ টাকা করে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া রয়েছে গাড়ী পার্কের ব্যবস্থা। যাত্রীদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে গাড়ী পার্কের জন্য কোন টাকা পয়সা দিতে হয় না। উল্লেখিত অবস্থানে ১০০ গাড়ি পার্কিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রবেশ পথ; প্রয়োজনে কেউ কোন মালামাল বা ব্যাগ জমা রাখতে চাইলে টাকার বিনিময়ে মালামাল জমা রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের প্রবেশপথের বাম পাশে এর অবস্থান। ২য় শ্রেণী সুলভ ও শোভন শ্রেণীর যাত্রীদের প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য কফি শপের দক্ষিণ পাশে রয়েছে আলাদা প্রবেশ পথ। ভিআইপি যাত্রীদের প্রবেশের জন্য রেল স্টেশনের উত্তর দিকে আলাদা একটি প্রবেশ পথ রয়েছে। টিকেট সম্পর্কিত তথ্য; এই স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ও সিটি উভয় ধরনের ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য ২০ টি এবং সিটি ট্রেনের জন্য আলাদা ১ টি কাউন্টার রয়েছে। মোবাইল টিকিট ও ঢাকা-কলকাতার টিকিট কাউন্টার রয়েছে। ঢাকা-কলকাতার টিকিটের ক্ষেত্রে ভিসা পাসপোর্ট নিয়ে দাঁড়াতে হয়। ৭,৮, ৯ ও ১০ নম্বর কাউন্টার মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। সিটি ট্রেনের জন্য টিকেট সংগ্রহ করতে হলে ৮ নং প্লাট ফর্মের পাশের কাউন্টারে যেতে হয়। সিটি ট্রেনের মাসিক ভিত্তিতেও টিকেট দেওয়া হয়। ২০ নং কাউন্টার থেকে প্লাটফর্মে প্রবেশের টিকিট ও সামরিক বাহিনীর টিকেট দেওয়া হয়। এছাড়া বাকী কাউন্টারগুলোতে রয়েছে অন্যসকল শ্রেণীর টিকিট দেয়া হয়।টিকিট অগ্রিম বুকিং দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এছাড়া ট্রেন ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তেও কাউন্টার গুলো থেকে টিকেট সংগ্রহ করা যায়। যাত্রী বিশ্রামাগার কমলাপুর রেল স্টেশনে মোট তিনটি বিশ্রামাগার রয়েছে। ২য় শ্রেণীর মহিলা যাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা বিশ্রামাগার। এ বিশ্রামাগারে একটি লাগোয়া বাথরুম রয়েছে। এখানে ৪০ জন যাত্রী একসাথে বসতে পারে। প্রথম শ্রেণীর এসি/ নন এসি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশ্রামাগার রয়েছে। ভি আই পি যাত্রীদের জন্য ও রয়েছে আলাদা বিশ্রামাগার। এছাড়া প্লাট ফর্মে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। স্টেশনের মূলভবনের ৩য় তলায় আবাসিক হোটেল রয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মোবাইল- ০১১৯১-০০২১৩৫, ০১৯২২-৪৩৮৯৬৯। খাবার ব্যবস্থা ; স্টেশনের ভেতরে বাইরে বেশ কিছু খাবারে দোকান রয়েছে। মূল স্টেশনের ২য় তলায় রয়েছে বিরতি রেস্তোরা ৮ নং প্লাট ফর্মে রয়েছে রেলওয়ে ক্যাফেটেরিয়া। যেখানে সবার জন্য খাবার ব্যবস্থা রয়েছে।এছাড়া রয়েছে ১ টি কপি শপ ও ৭ টি ফাস্টফুডের দোকান। কুলি ব্যবস্থা; রেল স্টেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পোষাক ও ব্যজ ধারণকৃত কুলি রয়েছে এবং মালমাল পরিবহনের চার্জ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হতে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে হুইল চেয়ার ব্যবস্থা। মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রলির ব্যবস্থা রয়েছে। পরিমাণ ধরণ চার্জ (টাকা) ২৮ কেজি ১ টি ব্যাগ ১৫ টাকা ২৮ কেজি ২ টি ব্যাগ ২০ টাকা ৩৭ কেজি ১ টি ব্যাগ ২০ টাকা ৩৭ কেজি ২ টি ব্যাগ ২৫ টাকা, ৫৬ কেজি ১ টি ব্যাগ ৩০ টাকা, ৫৬ কেজি ২ টি ব্যাগ ৩৫ টাকা, ট্রলি যাত্রী দ্বারা বহন করলে ১৫ টাকা, ট্রলি কুলি দ্বারা বহন করলে ২০ টাকা, হুইল চেয়ার যাত্রী দ্বারা বহন করলে ১০ টাকা, হুইল চেয়ার কুলি দ্বারা বহন করলে ২০ টাকা।