মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:২২ পূর্বাহ্ণ
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে সুরা মুমিনুনে ইরশাদ করেন,
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃতিকার উপাদান থেকে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রুপে এক সংরক্ষিত আধারে স্হাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরুপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিণ্ড থেকে অস্হি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্হিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রুপে দাঁড় করিয়েছি।
( সূরা মুমিনুন: আয়াত-১২-১৪)
আল্লাহ তাআলা তিনি কত মহান। আলোচ্য আয়াতে মানবজাতির সৃষ্টির সূচনা বর্ণনা করেছেন। কিভাবে মানুষের বিকাশ ও উন্মেষ ঘটে। কিভাবে মানুষকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেন, তাঁর বিবরণ স্হান পেয়েছে। যাতেকরে মানুষ তার স্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনে ও আনুগত্য প্রকাশ করে, তাঁর অবাধ্য অকৃতজ্ঞ না হয়। আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) এ আয়াতের তাফসীরে মুসনাদে আহমদ হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আঃ) কে এক মুষ্টি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যা সারা পৃথিবী থেকে বাছাই করে নেয়া হয়েছে। আর একারণেই আদম সন্তানের বর্ণ হয়েছে বিভিন্ন। কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ অন্যকোনো বর্ণের আর তাদের মধ্যে কেউ নেক, কেউ বদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের সারা শরীর পচেঁ যায় শুধু পৃষ্টের হাড় পচেঁ না। ঐ হাড়ের উপর ভিত্তি করেই সৃষ্টি কর্ম অব্যাহত থাকে। হাড়ের উপর গোশতের আস্তরন রাখা হয় যাতে তা গোপন এবং শক্তিশালী থাকে। এরপর তার মধ্যে রুহ ফুকে দেয়া হয় তখন সে জীবন্ত মানুষে রুপান্তরিত হয়। আল্লাহ তাআলার কুদরতের কি মহিমা। তারঁ সৃষ্টি নৈপুণ্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হলো মানুষ।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, মানুষ পৃথিবীতে অহংকার করে, রক্তপাতঘটায়, ও দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি করে, যুদ্ধ বিগ্রহ করে, অন্য মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করে, সে তার অতীত ইতিহাস স্বরণ করে না। তাই মানুষকে আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্বরণ করে দিয়েছেন। হে বিভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট মানুষ। সত্য ভুলে যেওনা যে তোমাকে আল্লাহ তাআলা অপবিত্র পানি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর ঐ অপবিত্র পানি বা শুক্রবিন্দু পর্যায়ক্রমে প্রথমে জমাট রক্ত, গোশত, অস্হি হয়। এবং অস্হির উপর গোশতের আস্তারণ দেয়া হয় এরপর আল্লাহ তাআলার বিষ্ময়কর কুদরত হেকমতে সে মানুষের আকৃতি ধারণ করে।
আল কুরআনে বর্ণিত মানব সৃষ্টির উপাদান:
১.
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।
(সূরা: আন-নিসা, আয়াত-১)
২.
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?
(সূরা: আম্বিয়া, আয়াত-৩০)
৩.
নিশ্চয় আমি আকাশে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছি এবং তাকে দর্শকদের জন্যে সুশোভিত করে দিয়েছি।
(সূরা: হিজর, আয়াত-১৬)
৪.
যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।
(সূরা: সেজদাহ্ ; আয়াত-৭)
৫.
অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।
(সূরা: সেজদাহ্ ; আয়াত-৮)
৬.
আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, তাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিনতর, না আমি অন্য যা সৃষ্টি করেছি? আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে।
(সূরা: আসসাফ্ফাত, আয়াত-১১)
৭.
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে।
(সূরা: আর-রাহমান, আয়াত-১৪)
৮.
আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?
(সূরা: ছোয়াদ, আয়াত-৭৫)
৯.
অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
(সূরা: সেজদাহ্ ; আয়াত-৯)
১০.
তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ?
(সূরা: যুমার, আয়াত-৬)
১১.
আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।
(সূরা: আন-নূর, আয়াত-৪৫)
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য:
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে সূরা যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
‘আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এ জন্য যেন তারা শুধু আমারই ইবাদাত বন্দেগী করে।’
এই আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে যে, মানুষ ও জ্বীন জাতির সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো স্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ তাআলার ইবাদাত-বন্দেগী করা। আর এই বন্দেগীর মাধ্যমেই মানবতার উৎকর্ষ সাধন সম্ভব হয়।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |