| ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১২:৫৭ অপরাহ্ণ
ইকামাতে দ্বীন ও দাওয়াতে তাবলিগের প্রচার এবং প্রসারে মাতৃভাষার উত্কর্ষ সাধনে ইসলামে যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামের নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা মানুষকে বিভিন্ন ভাষা চর্চায় দারুণভাবে উত্সাহিত করেছে ও বিশেষ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। বিদ্যাশিক্ষা ও জ্ঞানার্জন করতে হলে মানুষের অবশ্যই প্রয়োজনীয় ভাষা জ্ঞান থাকতে হবে। প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী-গুণী হতে হলে মাতৃভাষা সম্পর্কে ব্যাপক অনুশীলন করা উচিত। পড়াশুনার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের সাথে দ্বীন প্রচারে মাতৃভাষা চর্চাও যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনের বাণী থেকে মাতৃভাষা চর্চার প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম নাজিলকৃত প্রারম্ভিক ‘ইকরা’ আয়াতে জ্ঞানার্জন তথা বিদ্যাশিক্ষার জন্যে মানবজাতির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠে মানবজাতির আগমনের সাথে সাথে ভাষার উত্পত্তি হয়েছে। পৃথিবীতে আগত আদিমানব ও সর্বপ্রথম নবী হজরত আদম (আ) এবং বিবি হাওয়া (আ) নিজেদের মনের কথা প্রকাশের জন্য বেহেশত থেকে আরবি ভাষা শিখে এসেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েই দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি (আল্লাহ) আদমকে যাবতীয় নাম (ভাষা) শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত:৩১)
আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সত্পথ প্রদর্শনের জন্য ইসলাম প্রচার ও প্রসারে দুনিয়াতে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা আল্লাহর অমিয় বাণী মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁঁছে দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে এসেছেন। মহান সৃষ্টিকর্তা যুগে যুগে যেসব অঞ্চলে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন তাঁদেরকে সেই অঞ্চলের মানুষের ভাষাভাষী করেছেন এবং নবী-রাসূলদের নিজস্ব মাতৃভাষায় আসমানি কিতাব নাজিল করে তাঁদের ভাষাকে সম্মানিত করেছেন। মহান আল্লাহর বাণী সহজ, সুন্দর, সাবলীল ও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য সংশ্লিষ্ট জাতির ভাষাভাষী করে নবী-রাসূলদেরকে প্রেরণ করা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সত্পথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা ইবরাহীম, আয়াত:৪)
প্রত্যেক জাতির ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে তাদের স্বীয় মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। ইসলামের দৃষ্টিতে সব ভাষাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সমানভাবে মর্যাদাসম্পন্ন। সব ভাষা মহান আল্লাহর দান। আল্লাহর কাছে সব ভাষাই গ্রহণযোগ্য। মহান সৃষ্টিকর্তা সব ভাষাভাষী মানুষের কথা শোনেন ও বোঝেন। মাতৃভাষার মাধ্যমে যতো সহজে মানুষকে কোনো বিষয় বুঝানো যায়, তা অন্য কোনো ভাষায় ততো সহজে করা যায় না।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রধান চারটি আসমানী কিতাবের মধ্যে হজরত মূসা (আ)-এর প্রতি ‘তাওরাত’ হিব্রু ভাষায়, হজরত ঈসা (আ)-এর প্রতি ‘ইঞ্জিল’ সুরিয়ানি ভাষায়, হজরত দাউদ (আ)-এর প্রতি ‘যাবুর’ ইউনানি ভাষায় এবং বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি ‘আল-কোরআন’ আরবি ভাষায় নাজিল হয়। রাসূলুল্লাহ (স)-এর মাতৃভাষা ছিল আরবী। তাঁর কাছে মানবজাতির দিশারি এবং সত্পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে সর্বশেষ আসমানি কিতাব ‘আল-কোরআন’ অবতীর্ণ হয়। এ ঐশী ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের ভাষা আররি। বিশ্বনবীর মাতৃভাষায় পবিত্র কোরআন নাজিল হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আমি কোরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি তা দিয়ে মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার।’ (সূরা মার্য়াম, আয়াত: ৯৭)
তাওহিদ বা আল্লাহর একত্বের আহ্বান সফলভাবে ধর্মপ্রাণ লোকের কাছে ইকামাতে দ্বীন ও দাওয়াতে তাবলিগের মাধ্যমে পৌঁছাতে হলে সেই জনপদের জনগোষ্ঠীর নিজস্ব মাতৃভাষায় মুবাল্লিগদের দ্বীনের প্রচার কাজ চালানো দরকার। প্রয়োজনীয় ভাষাজ্ঞান না থাকলে সফলভাবে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো সহজ নয়। পবিত্র কোরআনে বুদ্ধিমত্তা ও উত্তম বাক্য দ্বারা দ্বীন ইসলাম প্রচারের আহ্বান জানিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে হিকমত (বিজ্ঞানসম্মত) ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান কর এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে আলোচনা কর।’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত:১২৫) তাই নবী করিম (স) সুস্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী জানলেও তোমরা তা পৌঁছে দাও।’ (বুখারি)
পরবর্তী সময়ে যুগে যুগে দ্বীন ইসলামের প্রচারক তথা মুবাল্লিগগণ পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও প্রসার করতে গিয়েছেন। তাদের মাতৃভাষায় মুসলমানদের অনুসৃত প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘আল-কোরআন’ অনুবাদ করে অনুসারীদেরকে পবিত্র কোরআন-হাদীসের জ্ঞান দান করেছেন এবং ইসলামের বিধি-বিধান ও নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিয়ে চলেছেন। ইকামাতে দ্বীন ও দাওয়াতে তাবলিগের প্রচার ও প্রসারে মাতৃভাষা চর্চার উপর ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করার কারণে ইসলাম প্রচারক মুবাল্লিগদের মননে মাতৃভাষা প্রীতি ব্যাপকভাবে সঞ্চারিত হয়েছে নিঃসন্দেহে।
lলেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউট অব ল্যাংগুয়েজ স্ট্যাডিজ। প্রফেসর ও এডভাইজার, ইসলামিক স্ট্যাডিজ ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, স্কুল অব লিবারেল আর্টস, ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, উত্তরা, ঢাকা
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ |
৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ |
১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ |
২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |
২৯ | ৩০ |