| ০৭ অক্টোবর ২০১৮ | ৫:৩৫ অপরাহ্ণ
সূত্র এবং মাত্রাহীন, যুক্তি দিয়ে বিচার করলে যে সব কাজের মৌলিক কোন অর্থ খোঁজে পাওয়া যায়না, সেসব কাজ কর্মকেই বলা হয় ভূতুরে কর্মকাণ্ড।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, রাষ্ট্র কি ভাবে ভৌতিক?
শিক্ষা ব্যবস্থা কি ভাবে ভূতুরে?
চলুন আলোচনায় যাই, শিক্ষা ব্যবস্থা কি ভাবে ভূতুরে?
আলোচনা শেষে নিজেই প্রমাণ পেয়ে যাবেন, রাষ্ট্র কি ভাবে ভৌতিক।
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুস্কাল ৬৫ বৎসর, এই সময়কাল থেকে শিশু এবং কৈশোর কালের ১৮ বৎসর বাদ দিলে থাকে ৪৭ বৎসর, এটুকুই মূলতঃ মানব জীবনের মৌলিক অংশ।
জীবনকে উপভোগ্য আর কার্যকরী করে তুলবার জন্য এই সময়টুকুকে পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগানো জরুরী এবং এটুকু সময়কে পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগাতে হলে ১৮ বৎসর বয়সকালের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করাটাও জরুরী, মানে এই বয়সকালের মধ্যেই ধরা বাঁধা বাধ্যতামূলক শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হওয়া উচিৎ।
এরপর শুরু হবে কর্মজীবন, লোকেরা কাজের মাধ্যমে, কাজের প্রয়োজনে, কাজের ভিতর দিয়েই অর্জন করবে প্রয়োজনীয় শিক্ষা।
কিন্তু, বুর্জোয়াঁ রাষ্ট্রব্যবস্থা পুঁজিপতিদের সেবা দাসে পরিণত হবার ফলে নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে তাদের ঘারে চাপিয়ে দিয়েছে অযৌক্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা।
খেয়াল করে দেখুন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আজ হচ্ছেটা কি?
৫ বৎসর বয়স থেকে এক বোঝা বই তুলে দেয়া হয় একটি শিশুর কাঁধে, কর্মঘণ্টা অথবা নিজের একটু আয়েশকে নষ্ট করে সেই বোঝা টেনে নিয়ে স্কুলে যেতে হয় মা বাবাকে, অথবা নিয়োগ দিতে হয় কাজের লোক।
এখানে শিক্ষকেরা শিক্ষার নামে করেন বই বানিজ্য, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণ বিষয়টা বুঝতে পারেন কিন্তু কিছুই বলতে পারেন না।
শিক্ষার্থীরা সেটা অনুভব করতে পারার ফলে,শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের অন্তরে জন্ম নেয় গভীর এক অনীহা আর অনাস্থা।
শিশুকাল থেকেই একজন শিক্ষার্থীর চিন্তায় জন্ম নেয় দুর্নীতির মনোভাব, ভৌতিক রাষ্ট্র এখানে সম্পূর্ণ নির্বিকার।
চলতে থাকে রাষ্ট্রের বেঁধে দেয়া বাধ্যতামূলক শিক্ষা জীবন, চলতে চলতে বয়স ৩৫ থেকে ৪০শে গিয়ে গড়ায়, পেরিয়ে যায় যৌবনের অর্ধেক সময়, ঘটে যায় অনেক ঘটনা এবং অঘটন।
পর্যাপ্ত পরিমাণের এই সময় ব্যয় করে কি শিক্ষা অর্জন হয় একজন শিক্ষার্থীর? মূলতঃ কিছুই না।
কারণ, নির্দ্দিষ্ট একটা বয়সসীমার পরে পড়ালেখা বলতে সে শুধু বুঝে কোন রকমে একটা সারর্টিফিকেট ভাগিয়ে নেয়া, বই পড়ে জ্ঞানার্জন করা নয়, নোট, গাইড, সাজেশন পড়ে পড়ে পরীক্ষায় পাস করাটাই হয়ে উঠে তার কাছে মূখ্য বিষয়।
বইয়ের দোকান চালাতে গিয়ে স্বচক্ষে দেখা হয়েছে আমার, বই কিনতে এসে ক্রেতা তার বন্ধুকে ফোন করে জেনে নিচ্ছে, আগামীকাল কি পরীক্ষা?
এর জন্য কি বই পড়তে হবে?
এর নাম কি শিক্ষা?
ধরে বেঁধে, বাধ্যতামূলক এই শিক্ষা অর্জনে বাধ্য করার মানে কি?
এটাও রাষ্ট্রের কাঠামোগত অব্যবস্থাপনার ফলাফল।
যে শিক্ষার্থী জানে যে, এখানে শিক্ষার কোন মূল্য নেই, ঘুষ না দিলে চাকরি পাওয়া যায়না, তাকে শিক্ষা গিলিয়ে দিলেও সে শিক্ষা গিলার প্রয়োজন বোধ করবে না।
রাষ্ট্রের বেঁধে দেয়া শিক্ষা জীবন শেষে রাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রাপ্ত এক টুকরো কাগজ হাতে নিয়ে শুরু হয় চাকরির পিছনে দৌড়ঝাঁপ, অনেকে ছুটে যায়, ঝুলিয়ে রাখা বি,সি,এস নামের মুলার রসাস্বাদনের পেছনে।
বি,সি,এস এবং চাকরির জন্য দৌড়ঝাপ আর জেনারেল নলেজের নামে হিলো অলমের শশুরের নাম কি?
এইসব বিষয়ের উপর নানান ধরনের বই পড়তে পড়তে বয়স গিয়ে পৌঁছায় ৪০ এর উপরে।
অতপর, চাকরি নামের একটা সোনার হরিণ যদি কোন ভাবে জোটে যায়, তখন আর পিছনে ফেরার সময় কই?
সঙ্গিনী আর সংসার, এই নিয়ে সামনে যাবার ভাবনা ভাবতে গিয়ে যেখানে যা পাওয়া যায়, সবি গিলে খায়, দেশ, জাতি, মানুষ, মানবতা সবকিছুই তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়।
ক্ষেত্র বিশেষে, শিক্ষা জীবন শেষে শিক্ষার্থীকে যখন বাবার হালের বলদ বিক্রি করে চাকরির জন্য ঘুষের টাকা জোগাড় করতে হয়, তখন তার পক্ষেও আর সৎ থাকা সম্ভব নয়।
এই যদি হয় বাস্তবতা, তা হলে এই শিক্ষা কি ভূতুরে নয়?
ভূতুরে কর্মকাণ্ড যেখানে সংঘটিত হয়, সেটাকেই ভৌতিক এলাকা বলা হয়।