| ১৯ নভেম্বর ২০১৮ | ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ
ভিক্ষার ঝুলি হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হকের স্ত্রী নূরজাহান ও বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত চিঠি
অশীতিপর নূরজাহান বেগম টিভিতে দেখেছেন শেখ হাসিনা সবাইকে ঘর দিচ্ছেন, গরিব মানুষের চোখের পানি মুছে দিচ্ছেন। নূরজাহানের প্রশ্ন, তাহলে তিনি কী দোষ করলেন? তার মুক্তিযোদ্ধা স্বামীকে রাজাকাররা মেরে ফেলেছে। তিনি বেঁচে থাকলে তাকে তো আর এই বয়সে ভিক্ষা করে খেতে হতো না। যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। তারপর তিনি আর কিছু পাননি। এর পরও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবসে কোরআন খতম করেন তিনি। আল্লাহর কাছে দোয়া করেন সব শহীদের আত্মার মাগফিরাতে। তার শুধু একটাই আবেদন, ‘আমনেরা শেখ হাসিনারে একটু কন আঁরে ভিক্ষা থন মুক্তি দিতে, আঁই যেন ঘরে বই মইরতে ফারি।’
১৯৭১ সালে রাজাকারদের হাতে নিহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হকের স্ত্রী নূরজাহান। সোনাগাজীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদের তালিকায় নাম রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের। সব প্রমাণাদি দেওয়ার পরও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বামীর নাম সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাতে পারেননি। তাই মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে বঞ্চিত ৮০ বছর বয়সী নূরজাহান বেগমকে আজ অন্যের দুয়ারে হাত পেতে খাবার জোগাড় করতে হয়। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ পাওয়া বাড়িটিও দখল করেছে প্রভাবশালীরা। এখন উপজেলার চরসাহাভিকারী গ্রামে খাস জমির ওপর নির্মিত একচালা কুঁড়েঘরে এক পঙ্গু ছেলেসহ তিন সন্তানকে নিয়ে কাটে তার জীবন।
নূরজাহানের ভাষ্যমতে, তার স্বামী শামছুল হক ওরফে আবুল খায়ের ও দেবর আবু নাছের ১৯৬৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ‘৭১-এ যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বন্দরে আক্রমণ চালায়। তখন তারা দুই ভাই পালিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। এদিকে এলাকায় আবদুর রবের নেতৃত্বে রাজাকাররা নির্যাতন শুরু করলে তারা আহচান মাস্টার, মানিক, নাছির কমান্ডারের সঙ্গে পালিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে চলে যান। সেখান থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের সঙ্গে দেশে প্রবেশ করে সোনাগাজীর সোনাপুরে ঘাঁটি গেড়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। ছেলে সন্তান জন্মের খবর পেয়ে শামছুল হক ভাইকে সঙ্গে নিয়ে রাতে বাড়িতে এলে রাজাকাররা খবর পেয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট সকাল ১১টায় রাজাকার হাবিব সরকার ও আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ১০/১২ জন দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। ছোট ফেনী নদীতে ফেলে দেওয়া হয় লাশ। রাতে জোয়ারের পানিতে সেই লাশ ভেসে এলে দাফন করতে চাইলে রাজাকাররা সেটাও করতে দেয়নি। পরে গোপনে বেড়িবাঁধের পাশে তাদের দাফন করেন তারা।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু তার কাছে চিঠি দিয়ে সমবেদনা জানিয়ে দুই হাজার টাকা পাঠান। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আর কেউ খবর নেয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অন্যান্য শহীদ পরিবারের সঙ্গে তাকে সংবর্ধনা দিয়ে ক্রেস্ট দেন।
২০০৪ সালে সব প্রমাণাদি দেওয়ার পর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি শামছুল হককে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে নাম সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অথচ দীর্ঘ ১২ বছর পরও সেটি অমীমাংসিত থেকে যায়। ২০১৭ সালে আবার তিনি স্বামীর নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। তবে এখনও তার কোনো ফল জানানো হয়নি তাকে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘শহীদ শামছুল হক ও তার ভাই আবু নাছের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। শামছুল ও আবু নাছেরের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতকিছুর পরও গেজেটে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া খুবই দুঃখজনক।
সূত্রঃসমকাল
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |