| ২৫ নভেম্বর ২০১৮ | ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ
করাচিতে চীনা কনস্যুলেটে সন্ত্রাসীদের হামলা প্রতিহত করে দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা। গত শুক্রবার করাচির কূটনৈতিক এলাকায় এ হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। হামলা প্রতিহত করতে অভিযান পরিচালনাকারী দলের নেতৃত্ব দেন পাকিস্তান পুলিশের সিনিয়র
সুপারইন্ডেন্ট সুহাই আজিজ তালপুর।
নয়টি গ্রেনেড, অ্যাসল্ট রাইফেল ও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হামলাকারীরা একটি গাড়ি নিয়ে কনস্যুলেটে ঢোকার চেষ্টা করে। ভেতরে থাকা চীনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করার পরিকল্পনা করেছিল হামলাকারীরা। তবে তল্লাশী চৌকিতেই তাদের থামিয়ে দেয়া হয়। দ্রুত তার দল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সুহাই। সুহাই ও তার দলের সাহসী ভূমিকার জন্যই সেদিন কনস্যুলেটের ভেতরে ঢুকতে পারেনি সন্ত্রাসীরা। এ সময় তিন হামলাকারীকে হত্যা করে তার টিম। এতে দুই পুলিশ সদস্যও নিহত হন।
ডন পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সুহাই বলেন, সকাল ৯টার দিকে তিনি কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। হামলার খবর পেয়ে সরাসরি কনস্যুলেটে চলে আসেন তিনি। তার সাথে আগে থেকেই গার্ড ছিল।
সাফল্যের সাথে অভিযান পরিচালনা করায় প্রশংসায় ভাসছেন সুহাই আজিজ। পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রী শেখ মেহমুদ কোরেশী এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘পাকিস্তান এসপি সুহাই আজিজের মত সাহসী কন্যাদের জন্য গর্বিত। কনস্যুলেটে পৌঁছানোদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম, তার সফল নেতৃত্বের জন্যই করাচিতে এই সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করা গেছে।’
সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মুরাদ আলী শাহ তার সাহসিকতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতার প্রশংসা করেন। ঘৃণিত এই হামলা নস্যাৎ করতে সুহাই আজিজ তালপুরির ভূমিকার প্রশংসা করে টুইটারে পোস্ট করেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলাওয়াল ভূট্টো জারদারি।
সাহসিকতার জন্য কায়েদ-ই-আজম পুলিশ পদকের জন্য তার নাম সুপারিশ করা হয়েছে। তিনিই প্রথম নারী পুলিশ অফিসার যাকে এই সুপারিশ করা হল।
সিন্ধুর নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের এই নারী ২০১৩ সালে পুলিশে যোগ দেন। অনেক বাধা পেরিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করা সুহাইকে একসময় পড়াশোনার জন্য গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল। তার আত্মীয়-স্বজন মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে অন্য লেখাপড়াকে ভাল চোখে দেখত না। সুহাইকে স্কুলে ভর্তি করায় তার বাবা-মাকে নানা কটাক্ষের শিকার হতে হয়। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে গ্রাম ছাড়েন তারা। তবে হাল না ছেড়ে লেগে থাকেন সুহাই। বি.কম পাস করেন তিনি। চার্টাড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার জন্য লেখাপড়া করলেও দেশের জন্য কিছু করার লক্ষ্যে ছিল তার। এজন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিএসএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পুলিশে নাম লেখান তিনি। নিম্ন সিন্ধু অঞ্চল থেকে পুলিশে যোগ দেয়া প্রথম নারী তিনি।
সূত্র : দ্য ডন