• শিরোনাম


    বিভিন্ন বয়সে মৃত্যু হওয়ার কারণ

    মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৮:০৯ অপরাহ্ণ

    বিভিন্ন বয়সে মৃত্যু হওয়ার কারণ

     

    মানুষ মাত্রই মরণশীল। পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি বা জীব-জন্তু নেই যে তার মৃত্যু একদিন হবে না। তবে কেউ আগে কেউ বা পরে। এটা আল্লাহর এক লীলাখেলা। এখানে কারো কোন হাত নেই আর হাত দিয়েই বা ফায়দা কি! মহান আল্লাহ তাআলা যখন যাকে ইচ্ছা করেন তখন তাকেই ডাক দিয়ে তার কাছে নিয়ে যাবেন, এটাই চিরসত্য।



    আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘তিনিই তো (আল্লাহ) যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা, অতঃপর শুক্রবিন্দু দ্বারা, অতঃপর জমাট রক্ত দ্বারা, অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরুপে, অতঃপর তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর, অতঃপর বার্ধক্যে উপনীত হও। তোমাদের কারো কারো এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং তোমরা নির্ধারিত কালে পৌছ এবং তোমরা যাতে অনুধাবন কর।
    (সূরা: মু’মিন, আয়াত-৬৭)

    মৃত্যু কখন উপস্থিত হবে কেউ তা জানে না।

    মৃত্যু বিনা আমন্ত্রণে মানুষের দরজায় এসে হাজির হয়। মৃত্যু যখন মানুষের নিকট উপস্থিত হয়, তখন সে তাকে নিয়েই চলে যায়। কোন ওজর আপত্তিই তখন চলবে না। কিন্তু মানুষ বড় দুর্বল, তার জীবনের প্রতি এক মিনিটের ভরসা রাখা চলে না। দুনিয়ার জীবন মনে করেছো দীর্ঘ জীবনের; কিন্ত না, এ নশ্বর দুনিয়ার মোহে ডুবে থাকা তোমার সব কিছু মূহুর্তের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে। মৃত্যু ও কবরের কথা ভুলে তোমার লোভের মাত্রা এত দূর পৌঁছে গেছে যে, যদিও তোমার কাছে কারুণের মত সম্পদ জমা আছে তবুও ছবরের রশি সংযত করতে পারলে না; বরং আরো বেশী ধন-সম্পদ সংগ্রহ করতে দ্বিগুণ বেগে কাজ করে যাচ্ছ। যতই তোমার আয়ূ শেষ হয়ে যাচ্ছে, ততই তোমার আশা আকাঙ্খা ও যৌবনত্ব বেড়ে যাচ্ছে।

    নফসের শিক্ষা দান এমনি ভাবেই হয়ে থাকে, যত আশা ভরসা ছিল মৃত্যুর আগমণে সব আশা নিষ্ফল হয়ে গেল।
    মানুষ তো এতটুকু চিন্তা ও ধারণা করার জন্য প্রস্তুত নয় যে, এখানকার জীবন যাত্রা মাত্র কিছুক্ষণের জন্য। তাহলে জীবন বাজী রেখে বিভিন্নভাবে ছলচাতুরী, মিথ্যা প্রতারণা, কম বেচাকেনা, মোট কথা স্বীয় জীবনের উপরে জুলুম বে-রহম হয়ে মালামাল একত্রিত করছে, তা মৃত্যুর পর তার কোন কাজেই আসবে না।

    হে মানুষ তোমার সংগ্রহীত মালামাল কি তোমার সাথে কবরে যাবে? আর এসব করণে ঈমান, ইজ্জত, ধর্ম ইত্যাদি সবই বিসর্জন দিলে? পরকালও নষ্ট করে ফেললে? সুতরাং এ দুনিয়াদারীর ধন-সম্পদ উপার্জন করে কি লাভ হলো? কতই না ভাল হতো যদি তোমার জিন্দেগীটা পরকাল উপার্জনের জন্য যদি দুনিয়াদারীর মতো চেষ্টা করতে? আর এখানে মালামাল উপার্জন করেছো, তা যদি গরীবদের মাঝে কিছু বিতরণ করতে বা অন্য কোন সৎ কাজে ব্যয় করতে, তাহলেও তোমার পরকালে নাজাতের জন্য একটা উপায় হতো।

    আল্লাহর কুদরতের অবস্থা কতই না আশ্চর্য।

    দেখা যাচ্ছে যে, একই শহরে একই স্হানে কোথাও গোলাপ ফুলের বাগান, আবার কোথাও কাটাদার বাবলা বন, কোথাও বিবাহ শাদীর ওলিমা খানাপিনা হচ্ছে, আবার কোন স্হানে মৃত্যু ব্যক্তির জন্য বরই পাতা দিয়ে গরম পানি প্রস্তুত হচ্ছে। কোন কোন স্হানে আনন্দে নতুন বর বাজনাসহ পালকী চড়ে বাড়ীর দিকে যাচ্ছে, তারই পাশে এক সুন্দর যুবক কাফনের কাপড় পড়ে (বর বেশে) চার পায়া খাটের উপর চড়ে কবর দেশে রওয়ানা হয়ে যাচ্ছে। ঘটনাক্রমে দুনিয়ার বাজারে জীবিত ও মৃত্যুর মধ্যে এরুপ একটি বিশেষ মিল আছে।

    হে খোদা! তোমার কি শান। তোমার রহস্য বড়ই আশ্চর্যের। একদিকে আনন্দ, অপরদিকে ভীষণ দুঃখ। একস্হানে নতুম জনপদের পতন, অপরদিকে বিশাল জনপদের (বিরানভাব) একদিকে পালকীর মধ্যে নতুন বর, সাথে আপন জনেরা আনন্দ-উল্লাসে আত্মহারা। অপরূিকে জানাযার চারপায়া খাটের উপর মৃত্যু ব্যক্তির কবরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। সাথে ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনেরা কান্নাকাটি করতে করতে যাচ্ছে। আবার কেউ ছেলের বা মেয়ের আকিকা করার জন্য আনন্দে বকরী সংগ্রহ করছে। আর একজন নিজের নওজোয়ান পুত্রকে মৃত্যু কাফন পরায়ে খাটে করে কবর স্হানে নিয়ে যাচ্ছে, কবরের পোকার খাদ্য হিসেবে। একজন নতুন জামাইয়ের নতুন পোষাক খরিদ করে বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিচ্ছে। অপর ব্যক্তি নিজের বোনের জন্য কাফনের কাপড় সংগ্রহ করে বাড়ী ফিরছে। এখানে কাউকে চৌকির উপরে বসায়ে সুগন্ধি সাবান মাখায়ে গোসল দেয়া হচ্ছে। আবার কাহারো মৃত্যুর খাটে চিৎ করে শোয়ায়ে জীবনের শেষ গোসল দেয়ার ব্যবস্হা করা হচ্ছে। কেউ মখমলের বিছানায় শয়ন করে ঘুমাচ্ছে, আবার কেউ কবরের মাটির ভিতর শুয়ে ভিষণ কষ্ট অনুভব করছে। কারো ঘরে হাজারো বাতির আলো জ্বলছে, আবার কেউ গভীর অন্ধকার কবরে আলো বিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
    আল্লাহ তাআলা আপনি আমাদের সকলকে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তির পথে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।

    Facebook Comments Box

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    নিয়ত অনুসারে নিয়তি ও পরিনতি

    ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

    আর্কাইভ

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
  • ফেসবুকে আওয়ারকণ্ঠ২৪.কম