| ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৫:৪৬ অপরাহ্ণ
পাখি শিকার করে কেউ শখের নেশায়, কেউ পেশায়। আমি উভয় শ্রেণির বিরুধী। বিশেষ করে যে সব পাখিজগত আমাদের এই অপরূপ বাংলায় প্রাকৃতির রূপের শোভাবর্ধক কাজের সহায়তা করছে, সেসকল পাখির শিকারের বিপক্ষতা আমি আজীবন করে আসছি। কারন এই পাখিজগত আমাদের চারদিকস্থ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সুন্দর্য্য বর্ধন সহ নানান উপকারী কর্ম সম্পাদন করে আসছে।
বকপাখি শিকারি পাখিদের অন্যতম। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পাখিদের বসবাস। বিশেষ করে নদী-নালা, খাল-বিল, হৃদ, পুকুর-দীঘি সহ এই জাতিয় বিভিন্ন জলাসয়ে বকের উপস্থিতি সর্বাধিক। বর্ষাঋতু শেষের দিকে শরতের শুরুলগ্নে এই বকপাখির সমাগম অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে। বর্ষার পানিতে তলিয়ে থাকা ধানি জমি-জামা যখন শুকিয়ে যেতে থাকে, মাছের সম্ভাবনা তখন চারদিক পূর্ণতায় ভরে যায়, ঠিক তখনই বক পাখি সেই এলাকায় ঝাকের ঝাক উড়ে এসে বসে। সন্ধা অবধি বকের চলে মাছ শিকারের অসাধারণ দৃশ্যপট। অনাহার কিবা অর্ধাহারে নয়, পেট পূড়িয়ে নেয় কাছা মাছের অমৃত আহার্য্যে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো এই মাছ শিকারি বকপাখি প্রায়শই নিজে শিকারের জালে আবদ্ধ হয়ে যায়। বকপাখি শিকারের আশায় এদেশের বিল বা হাওর এলাকায় শত শত শিকারি বিভিন্ন কৌশলে বকপাখির শিকার করায় মহাব্যস্ত। কেউ শিকারি বকপাখি দিয়ে, কেউ শিকার কল অথবা বন্ধুক জাতিয় কোন যন্ত্র দ্বারা। এই কাজ অনেকেই পেশার চেয়ে শখের নেশায় করে বেশি। তথাপিও অনেক এলাকায় নেশার চেয়ে পেশায়, এমন কি বাজারজাত করতেও দেখা যায়।
আমাদের এলাকায়(বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) বাজারজাত হয়না, কিন্ত বেশ কিছু বক শিকারি রয়েছে। এসব বক শিকারি নেশার মতো বক শিকারের বের হয়ে দিনের সকাল-সন্ধা এতেই মেতে থাকে। এতেই যেন এদের চরম সুখ, শান্তি ও পরম বিনোদন নিহীত। এদের অনেকেই আবার বড় বড় গাছের মগডাল থেকেও বকপাখির বাচ্ছা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। একবার বকপাখির নেশা যার ভেতর ডুকেছে, তার আর নিস্তার নেই। ডজনখানেক পাখি অন্তত শিকার করা পর্যন্ত এই নেশার ঘোর কাটেনা।
একটা সময় ছিল আমি নিজেই বক শিকারের প্রতি আসক্ত ছিলাম। বয়স তখন আর কেমনই বা হবে, এই দশ কি এগারো। এই বয়সে এমন শখ থাকাটাই সাভাবিক। কিন্ত আমি কখনোই বকপপাখি শিকার করতে পারিনি। বলা যায় আমি একজন ব্যার্থ বকপাখির শিকারি। কিন্ত একটা ঘটনা আমার এই শিকারের চিন্তায় বাজ ফেলে, ইহা হলো টুনটুনি পাখি শিকার। ছোট সময় শখের বশে একটা এলাস্টিকের গুলাইল(আঞ্চলিক নাম) কিনেছিলাম, সামনে যে কোন পাখি পেতাম মাটির তৈরিকৃত গুলি ছুড়তাম। কখনোই কোন কিছুকে লক্ষ্যবেধ করতে পারিনি। তবুও শখের বশে এই কাজটি করে খুব মজা পেতাম। কিন্ত একটা ঘটনা অন্তরে রেখাপাত করে, আর সেটা হলো একটা টুনটুনি পাখির শিকার। শিমগাছের আড়ালে একটা টুনটুনি পাখি বসা ছিল, যেই গুলি করলাম, সেই ধপাস। কান্ডজ্ঞান হারিয়ে অনেক্ষণ মাথায় পানি ঢেলেও বাঁচাতে পারিনি। দিনটি শোকের বিষন্নতায় কেটে গেলেও রেখাপাত করে গেলো আজীবনের তরে। তারপর থেকে আর কখনোই পাখি শিকারের চেষ্টা করিনি। গুলাইলটি ফেলে দেয়। অতপর যখনই কোন শিকারিকে দেখি, খুবই কষ্ট লাগে। ভাবতে থাকি, এই পাখিদের জন্য আমাদের চারপাশ কি সুন্দর, সাবলীল, মনোমুগ্ধকর লাগে, তবে কেন আমরা সামান্য অর্থলাভ করার জন্য এসব পাখিদের মেরে প্রাকৃতির সুন্দর বিনষ্ট করবো কেনই বা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা পাখিদের সহায়তা করবো না??
তিতাসগ্যাস যেমন আমাদের এই বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক চাহিদা পূরন করতে বিশাল ভূমিকা রাখছে, ঠিক তেমনিভাবে তিতাস নদীর মাছধরা দিয়েও দেশের মাছের চাহিদার ভারসাম্য আনতে বিশাল অবদান রাখছে। এই মাছের যোগানিত কারন শুধু তিতাস নদীই নয়, এই তিতাসপাড়ের অসংখ্য পুকুর-দীঘি এতে অংশীদার রয়েছে। প্রতি বছর শতসহস্র মেট্টাটন মাছ আমাদের এই তিতাসপাড়ের বিভিন্ন জলাসয় থেকে ধরা হচ্ছে, যার জন্যেই হয়তবা দেশের মাছের চাহিদা অনেকটা পুর্ণ। এই মাছের জন্যেই এই অঞ্চলে বকপাখির পরিমাণ অনেক বেশি। আর এই সুযোগে অনেক অসাধু, অবুঝ ও লোভী প্রাকৃতির লোক বকপাখি শিকারের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে। জেলাশহরের শিমরাইলকান্দি, পুর্বকান্দিপাড়া, ভাদুঘরের নদীর এলাকা, গুকর্ণঘাট সহ তিতাস নদীর আশেপাশে অসংখ্য এলাকায় সন্ধার শেষ দিগন্তে বকেরঝাক বাসায় ফেরার পথে শিকারের সমাগম চোখে পড়ার মতো। এছাড়া বিজয়নগর সহ তিতাসের বিস্তৃত সকল শাখার প্রত্যেক এলাকায় বক শিকারের জন্য রয়েছে অসংখ্য শিকারি। শৌখিন, কৃষক থেকে নিয়ে বেকার শ্রেনির অনেকেই সময় ও আঞ্চলিক অভিজ্ঞতার শুযোগে বকপাখি শিকারে অভ্যস্ত।
এই বকপাখির শিকার রোধ করতে হবে। এই বকপাখি আমাদের দেশের অন্যতম একটা প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রশাসন সহ সকল সচেতন শ্রেনি ইচ্ছে করলেই বকপাখি ধরা, শিকার করা, বাজারজাত করা সহ বকপাখির ধ্বংসাত্মক সব কিছুই রোধ করা সম্ভব।
_____________________________________
#লিখক; বিএসএস অনার্স(অর্থনীতি), ডাবল এমএ(হাদিস)!
বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।
ই-মেইল ; kazianam20@gmail.comcomcomcom