| ১৩ অক্টোবর ২০১৮ | ৩:৩৯ অপরাহ্ণ
“ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি” : দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার (ঘটনার ক্রমপঞ্জিকা)
২৭ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৯১ :
দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ৯ টি বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর আসে সেই মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ।
আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার থেকে রাতদিন টানা চষে বেড়াতে শুরু করেন সারাটি দেশ। ১৮০০ টি জনসভা ও পথসভা শেষে ২৫ শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার শেরেবাংলা নগরের সমাবেশে নির্বাচনীয় প্রচারণা শেষ করেন। এ সময় দিনে ৩৮টি জনসভায় বক্তৃতা, নির্ঘুম ৪৮ ঘন্টা কাটিয়ে রেকর্ড করেন তিনি।
সেদিনের সেই শ্লোগান বাংলাদেশী গণতন্ত্রকামী জনতার কানে আজও প্রতিদ্ধনিত হয়,
“নেত্রী মোদের খালেদা, গর্ব মোদের আলাদা।”
২৭ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ, বিএনপি এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য একটি অবিস্মরণীয় দিন।
বেগম জিয়া আপোষহীন থেকেই যার চিরটাকালের সংগ্রামী জীবন কেটে গেলো আজও কেবল মাত্র এই দেশের মুক্তিকামী মানুষদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।
৭ ই মার্চ, ১৯৮৭ :
যুবদলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নেত্রী সেদিন বলেছিলেন,
“ক্ষমতা চাইলে এখানে, ঠিক এখানে এসে হাজির হবে। কিন্তু ক্ষমতা নয় সংগ্রাম।”
স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পুরো শাসনামলে বিএনপি’র রাজনীতি ছিলো মূলত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন।
৩০ শে মে, ১৯৮২ :
শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে তার মাজারে গিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য দেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে মাজার প্রাঙ্গণে ছাত্রদলকে শপথ বাক্য পড়ান।
১৭ ই সেপ্টেম্বর :
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত হিসেবে শিক্ষাদিবসে স্বৈরাচারবিরোধী প্রথম মিছিলটি করে ছাত্রসমাজ।
ছাত্রদলের ব্যানারে ছিলো : “এরশাদের পতন চাই।”
২৩ শে সেপ্টেম্বর :
তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করলে এর বিরোধিতা করে ছাত্রদল আন্দালনের সূচনা করে।
১৪ ই ফেব্রুয়ারী :
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের বটতলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, আইউব, দিপালী সাহা, ফারুকসহ ৭ জন শহীদ হন।
১৫ ই ফেব্রুয়ারী :
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মিছিল হলে পুলিশের গুলিতে ১৫ জন নিহত হয়।
১৮ ই ফেব্রুয়ারী :
ছাত্ররা গায়েবানা জানাজা আদায় করে।
১৯ শে ফেব্রুয়ারী :
মৌন মিছিল।
২০ শে ফেব্রুয়ারী :
সারাদেশে হরতাল করে। বৈঠক থেকে ১৫ দলীয় জোট নেতাদের এবং কর্ণেল অলিসহ বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্ররা পলাতক, নেতারা কারাবন্দী তবু বেগম খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে যাওয়ার সিদ্ধ্যান্ত নেন।
সকাল ৮টা ৩০ মিনিট :
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মৌন মিছিল শহীদ মিনারে যায়, তাকে প্রধান অতিথি করে বটমূলে হয় জাসাসের আলোচনাসভা। ঘরোয়া রাজনীতির সুযোগে বেগম জিয়া দেশ সফরে বের হয়ে প্রথম সভা করেন খুলনায় ইউনাইটেড ক্লাবে।
২৮ শে নভেম্বর :
সচিবলায় ঘেরাও কর্মসূচীতে আহত হন খালেদা জিয়া। সেই রাতেই আটকাদেশ দিয়ে তাকে স্ব বাসভবনে আন্তরীন রাখা হয়। এরশাদ তখন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে লোভ ও ভয় দেখান।
৩ রা ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৫ :
হরতাল পালিত হয়।
১১ ই ফেব্রুয়ারী :
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে দলের বর্ধিত সভায় বেগম জিয়া নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ তুলেন।
১৪ ই ফেব্রুয়ারী :
জনসভা থেকে নির্বাচনের তারিখ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান করেন খালেদা জিয়া।
২১ শে ফেব্রুয়ারী :
শহীদ মিনারের সভায় ৫ দফার কোন আপোষ অস্বীকার করেন।
২৪ শে ফেব্রুয়ারী :
উভয় জোটের জনসভায় একই দাবী।
৮ ই মার্চ :
হরতাল পালিত হয়।
১৮ ই মার্চ :
চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে শেখ হাসিনা নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান।”
২১ শে মার্চ রাত ১টা ৪০ মিনিট :
শেখ হসিনা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
(সেই সময় এরশাদের পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যোগ দেয়। আর বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাথে ঠিক একই ভাবে পাতানো নির্বাচনে যোগ দেয় এরশাদ। একাল আর সেকাল ঘটনা কিন্তু একই সূত্রে গাঁথা। সেই আওয়ামী লীগ আর এরশাদ একই সূত্রে বাঁধা।)
৩১ শে মার্চ :
ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে বিএনপি’র বর্ধিত সভা হয়।
৬ ই এপ্রিল :
বিচারপতি নুরুল ইসলাম তফসিল ঘোষণা করে ও সরকার সামরিক আদালত বিলুপ্ত করে।
২ রা মে :
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত অসম্মানজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়।
৭ ই মার্চ, ১৯৮৭ :
যুবদলের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। এ সময় ছাত্রদল সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলুকে হত্যা করা হয় ও ছাত্রদলের উপর অপরিসীম নির্যাতন নেমে আসে। বেগম খালেদা জিয়া আখ্যায়িত হন “আপোষহীন নেত্রী” অভিধায়।
১১ ই নভেম্বর :
দুপুরে পূর্বানী হোটেলের বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করে গৃহবন্দি করা হয়।
১ লা জানুয়ারী, ১৯৮৮ :
সরকার ২৮ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। এদিন টিএসসিতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বেগম জিয়া “এক দফার” ঘোষণা দেন। সে সঙ্গে ২২টি ছাত্রসংগঠন নির্বাচনকে সামাজিক ও রাজনৈতিকবাবে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়।
১২ ই জানুয়ারী :
একদফায় অনঢ় থেকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দেশব্যাপী জনসংযোগ শুরু করেন। একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তিন-চতুর্থাংশ আসন পায়।
২৪ শে মার্চ, ২৫ শে এপ্রিল, ২৮ শে নভেম্বর :
হরতাল পালিত হয়।
১৬ ই ডিসেম্বর :
বিজয় সমাবেশে বেগম জিয়া জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার কায়েমের আহ্বান জানান।
৮-৯ মার্চ, ১৯৮৯ :
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপি’র জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্টের বিভক্তি নিয়ে যুগান্তকারী এক রায় আসে।
২৫ শে মে :
ফারাক্কা অভিমুখে মিছিল করেন।
১ লা নভেম্বর :
৭ দলীয় জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গুলিস্তানে ১০ ঘন্টা প্রতীক অনশন করে। এ সময় জেহাদের লাশকে সামনে রেখে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠিত ও ক্যাম্পাসে ডাঃ মিলন ও নূর হোসেন নিহত হলে সেনাসদর দপ্তরে সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক করে তিন বাহিনী প্রধান এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এরশাদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানাতে চায়। তিনি বলেন, “১ লা ডিসেম্বর থেকে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার ও প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন এবং ১৫ দিন আগে নিরপেক্ষ উপ-রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।”
বিবিসিকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া অবিলম্বে এরশাদের পদত্যাগ দাবি করেন।
৬ ই ডিসেম্বর :
এরশাদ পদত্যাগ করলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ।
এরশাদের আমলে অনুষ্ঠিত ২টি জাতীয়, ১টি প্রেসিডেন্ট, ১টি গণভোট ও ২টি উপজেলা নির্বাচনের সবই প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি।
রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই নানা প্রতিকূল পথ অতিক্রম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি হয়ে উঠে অন্যতম একটি প্রধান শক্তি।
সেদিনের মতো করে আরও একটি আলোক উজ্জ্বল সোনালী ভোর মুক্তির কাহিনী হয়ে জন্ম নেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে। ইতিহাস সাক্ষী রবে আপোষহীন শব্দটাকে অমরত্ব দিয়ে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ |
৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ |
১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ |
২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |
২৯ | ৩০ |