আলোচকঃ -মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১০:১১ অপরাহ্ণ
কেউ যদি কোন দাবি পূরণ করেন তিনি অভিনন্দন প্রাপ্য এবং তাকে অভিনন্দন দেয়া উচিত। আশা করি এ কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন না কেউ। এই সূত্র অনুযায়ী কওমি সনদের মান প্রদান করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা পেতেই পারেন। প্রশ্ন থেকে যায় অভিনন্দন দিবেন কারা? যারা যুগ যুগ ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারাই অভিনন্দন দেবেন, সোজা কথা! বেফাকুল মাদারিসের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী দলগুলো যেহেতু এ দাবির পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন তারা সবাই অভিনন্দন জানাবেন, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু একটি শিক্ষা বোর্ড ও একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অভিনন্দন জানানোর পথ পদ্ধতি ও ভাষা কি একই হবে? না তাদের অভিনন্দন এর পথ পদ্ধতি ও ভাষা ভিন্ন রকমের হবে? রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা বিবৃতি ও ভাষা কি এক? না এক্ষেত্রে সবগুলোকে গুলিয়ে একাকার করে ফেলা হবে?
একটি শিক্ষাবোর্ড-এর জন্য তার শিক্ষা ব্যবস্থার মানের বিষয়টি এক নম্বর বিষয় হতে পারে, তাই সে যতটা সহজে উদারভাবে অভিনন্দন জানাবে এটা হয়তো অন্য কারো জন্য সম্ভব হবে না। আবার একটি অরাজনৈতিক সংগঠন যে স্লোগান নিয়ে তার আত্মপ্রকাশ হবে, যে কর্মসূচির ভিত্তিতে মানুষ তাকে সমর্থন দিবে সেই কর্মসূচি কে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন একটি দাবিতে চাই সেটা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন নিজেকে ভাসিয়ে দেয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত?
রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম করা, জালিম শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটানো। এখন সে কি তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বাইরে গিয়ে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক রাখে এমন দাবি কে কেন্দ্র করে মুল উদ্দেশ্য বিসর্জন দেবে?
জালেমি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ন্যায় ও ইনসাফের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলাকালে অবস্থার পরিপেক্ষিতে কখনো কখনো সহায়ক দাবী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তবে কালক্রমে সে দাবির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দাবি সামনে চলে আসতে পারে। যেমন বর্তমানে দেশের এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতি। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতা পালাবদলের মসৃণ কোন পথ বের না করা যায় তাহলে দেশে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ক্ষমতা কারো হাতে চিরদিন থাকে না। পালাবদল হবেই। আজ না হয় কাল। এছাড়া মানুষ মরণশীল, কেউ কেয়ামত পর্যন্ত কোথাও টিকে থাকতে পারবে না। পরিবর্তন হবেই। সেই পরিবর্তনটা যদি কোন এক্সিডেন্ট এর মাধ্যমে হয় সেটা এ জাতির জন্য বড় কোনো দুর্ঘটনা হতে পারে।
বিতর্ক টা শুরু হয় এখান থেকেই। কোন ব্যক্তি বা দল যদি নিজেকে রাজনৈতিক ময়দানে হাজির করে কারেন্ট ইস্যুতে যোক্তিক অবস্থানে থেকে কথা বলতে না পারে, নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জাতিকে পরিষ্কার ধারণা দিতে না পারে, বক্তৃতা-বিবৃতি যে মঞ্চ’ থেকেই দেয়া হোক না কেন তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। নতুন করে ডালপালা মেলতে পারে আলোচনা সমালোচনার।
বাকি কর্মী সমর্থকদের কথা কি বলবো। প্রতিপক্ষের সমর্থকেরা প্রতিপক্ষ বলেই যে কোন কাজের সমালোচনা করে। অন্যদিকে নিজ দলের সমর্থকেরা নিজের দলের নেতা বলে সব কাজেই সমর্থন দেয়। বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে অনেকেই সমালোচনা বা সমর্থন করে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, সমালোচনা যদি গঠনমূলক হয় তাতে সত্যান্বেষীদের জন্য পাথেয় আছে। আর সমালোচনা যদি হয় প্রতিহিংসামূলক, তবে সেই সমালোচনা সমালোচনাকারীর জন্যই ক্ষতিকর হবে, তাতে সমালোচিত ব্যক্তির কোনো যায় আসে না।