| ০৬ নভেম্বর ২০১৮ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ
এমন কোনো সৃষ্টি নেই যা কোনো না কোনোভাবে মানুষের কল্যাণে কর্মরত নেই। যদিও মানুষের বিবেচনায় তা নেই। তাই বুঝে হোক না বুঝে হোক। পশুপাখিকে আমরা কষ্ট দিই। তাদের হত্যা করতেও বিবেকে বাধে না। পাখির ডানা কেটে ফেলা হয়। কারণ এতে পাখি পোষ মানানো সহজ। পাখি উড়ে যেতে পারে না।
পশুপাখির অঙ্গহানি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন যে প্রাণীদের অঙ্গচ্ছেদ করে। (বুখারি, ৫১৯৫)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, জীবিত অবস্থায় যে প্রাণীর কোনো অংশ কাটা হয় সেটা হারাম হয়ে যাবে। (তিরমিযি-১৪৮০)।
বাক-শক্তিহীন প্রাণীদের বিষয় সতর্ক থাকা কাম্য। কষ্ট দেয়া, প্রহার করা, হত্যা করা যাবে না। মহানবী (সা.) বলেছেন, এসব বাক-শক্তিহীন প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। সুস্থ অবস্থায় এগুলোতে আরোহণ কর। সুস্থ অবস্থায় জবাই কর। (আবু দাউদ-২৫৪৮)। পশুপাখিকে অযথা বিরক্ত করা যাবে না। তাদের ধরা, আঘাত করা নিন্দনীয়। শিকার করাও ভালো নয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না। (মুসলিম-১৯৫৭)। সাঈদ ইবনে যুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত একবার হজরত ইবনে ওমর (রা.) কোরাইশ গোত্রের একদল বাচ্চাকে দেখতে পেলেন যে তারা পাখি শিকার করছে। এটা দেখে ইবনে ওমর (রা.) তাদের তাড়িয়ে দেন এবং বলেন, মহানবী (সা.) ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন যে কোনো প্রাণবিশিষ্ট বস্তুকে অহেতুক লক্ষ্যবস্তু বানায়। (মুসলিম-১৯৫৮)। পশুপাখির প্রতি দয়া দেখভালে পুণ্য মিলে। এক সময় লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব আছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক প্রাণবিশিষ্ট জীবের (প্রতি দয়া প্রদর্শনে) সওয়াব রয়েছে। (বুখারি-২৪৬৬, মুসলিম-২২৪৪)। মহানবী (সা.) বলেছেন, একবার এক পিপাসা কাতর কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। পিপাসায় তার প্রাণ বের হতে চাচ্ছিল। হঠাৎ বনি ইসরাঈলের এক ব্যভিচারী নারী তা দেখতে পায়। সে পায়ের মোজা খুলে কুকুরটিকে পানি তুলে পান করায়। এ কারণে তার অতীত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারী-৩৪৬৭)। কোনোভাবেই পোষা বা বন্য যেটাই হোক পশুপাখিকে কষ্ট দেয়া যাবে না। পশুপাখিকে কষ্ট দেয়া ভয়াবহ অন্যায়। এ প্রসঙ্গ হাদিসে এসেছে- একজন মহিলা বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খাবার দিত না আবার বাইরে বেরিয়ে খাবার সংগ্রহের সুযোগও দিত না। এ কারণে তাকে জাহান্নামে ফেলা হয়েছে। (বুখারি-৩৩১৮)।
ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা পশুপাখির নেই। কোনো কারণে সম্পদের; বিশেষ করে ফসলের ক্ষতি করতে পারে। এ জন্য এর মালিক যিনি বা সঙ্গে রাখাল যিনি থাকবেন তাকে জরিমানা দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চতুস্পদ জন্তুর অনিষ্ট ক্ষমাযোগ্য। (বুখারি-৬৯১২)।
হুতোমপ্যাঁচা দেখলে বিপদ হবে। কুপ পাখি যে বাড়ির ওপর বসে ডাকবে, সে বাড়ির কারও বিপদ হবে। এমন কুসংস্কার প্রচলিত আছে। পাখির ডাকের সঙ্গে বিপদের কোনোই সম্পর্ক নেই। বিপদ দেয়ার মালিক আল্লাহ, দূরও কেবল তিনিই করতে পারেন। পাখির ডাককে বিপদের সংকেত মনে করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। এমনকি প্যাঁচার ডাক বা সফর মাসেও কোনো কুলক্ষণ নেই। (বুখারি)। তাই পশুপাখির প্রতি সদয় হতে হবে আমাদের। কোনো কারণে পশুপাখি যেন কষ্ট না পায়।
লেখক : প্রাবন্ধিক