লেখক: ড. এস এম শাহনূর | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২:১৮ অপরাহ্ণ
ভ্রমণ কাহিনী পাঠের মাধ্যমে মুক্তিযুূ্দ্ধের ইতিহাস আবিস্কার বিষয়ক গ্রন্থ “মুক্তিযুদ্ধে অমোচনীয় ত্রিপুরা” বইটির লেখক লোকমান হোসেন পলা। সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠক লোকমান হোসেন পলা ১৯৭৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাধীন খাড়েরা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হন। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন বিকাশ এর সম্পাদনা করে আসছেন, বতর্মানে মাসিক পূর্বাপর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক বহুমত এর মফস্বল সম্পাদক, নিডস নিউজ ২৪ ডটকমের সম্পাদক, সভাপতি -বিশ্ববাঙালি সংসদ -বাংলাদেশ, কসবা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক, অনলাইন বিটিসি নিউজ ডট কম ডট বিডি, বিডি ভয়েজ ডট কম, এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, মানবাধিকার ও পরিবেশ সাংবাদিক সোসাইটির যুগ্ম মহাসচিব। কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ, ভারত বাংলাদেশ মৈত্রি সম্মাননা ২০১৮, দৈনিক নব অভিযান সম্মননা পদক ২০০৯ (সফল সংগঠক) মাপসাস মহাত্নাগান্ধী শান্তি পদক ২০১০ (ইভটিজিং ও মাদক বিরোধী প্রচারে বিশেষ অবদানের জন্য) অনলাইন লিটারেচার সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ লাভ করেন। তিনি সৌদি আরব, সিগাংপুর, ভারত, নেপাল, ভুটান ভ্রমণ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধে খাড়েরা ইউনিয়ন, এক জনমে, প্রিয় কবিতা, ডিজিটাল সংসার, শান্তির পথে’ আমার এই পথ চলাতে আনন্দ”। তিনি প্রতিভা সাহিত্য সংগঠণ ও পাঠাগার এর প্রতিষ্ঠাতা। গীতিকার কসবা উপজেলা থিম সংগীত।
মুক্তিযুদ্ধে অমোচনীয় ত্রিপুরা গ্রন্থের সূচীপত্র ৯ টি অধ্যায়ে সাজানো। ৪ ফর্মার এই বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ শেষে পাঠক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সন্নিকটবর্তী ভারতের ত্রিপুরার মানুষের অবদানের কথা জানতে পারবে। লেখক বইটির সূচীপত্রের শুরুতেই পাঠকের মনে বাঙালির অমোঘ ইতিহাসের কথা বলেছেন। যে ইতিহাস, দুখের, বেদনার ও গৌরবের। তিনি লিখেছেন, “মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা বিপদের দিনের সেই বন্ধুত্বই আজ ইতিহাস” অতঃপর বাকি ৬ টি অধ্যায়ে লিখেছে যা তিনি স্বচোখে দেখেছেন।
✪ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণার উৎস।
✪ ত্রিপুরার রাজপ্রাসাদে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রহশালা।
✪ মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের সারথি মেলাঘরের ক্র্যাক প্লাটুন।
✪ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরায় বাংলাদেশ হাসপাতাল।
✪ সীমান্তের শূন্যরেখায় অরক্ষিত ২৫০ শহীদের গণকবর।
✪ মুক্তিযুদ্ধ ও ত্রিপুরার ভালোবাসা
✪ মুক্তিযুদ্ধে মং রাজা মং প্রু সেইনের অবদান এবং
চাকমা রাজা ত্রিবিদ রায়ের ঘৃণ্য অধ্যায়।
✪ বীর শহীদ পরম বীর চক্র এলবার্ট এক্কা।
পূর্বাপর থেকে প্রকাশিত এই ইতিহাস গ্রন্থের প্রকাশক বিজ্ঞান কবি হাসনাইন সাজ্জাদী বইটির ভূমিকায় লিখেছেন, “মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম প্রভাতে উদিত যে নাম তা ত্রিপুরা। কালুরঘাট থেকে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রটি প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় সাক্রম নিকটবর্তী হরিনা হেডকোর্টারে। হরিনা ১নং সেক্টরে হেডকোর্টার বাংলাদেশ অংশে রামগড় উপজেলা। রামগড় খাগড়াছরি জেলার একটি উপজেলা। সেখানে এখন নির্মিত হয়েছে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণা ত্রিপুরা জেলাতে সাব্রুম ও হরিনা বাজার। তারপর এদিকে এগিয়ে এলে বিলোনীয়া
সীমান্ত। বিলোনীয়াতে এবং রাজনগর। রাজনগরে ত্রিপুরা সরকারের পার্লামেন্ট ভবন। তার নিকটেই ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান নির্মিত হয়েছে মহান
মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে। ২০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গণবনে নির্মিত উদ্যানটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধকালিন ভারত সরকারের মহীয়সী
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশাল দু’টি মোরাল প্রমাণ করে এ বিশাল দু’জন মানুষই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত করেছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে ২৩ বছররের বঞ্চনার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লড়েছেন জেল খেটেছেন, মৃত্যুর প্রহর গুনেছেন, তবুও হাল ছাড়েননি। যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে তিনি যখন অত্যাশিতভাবে পশ্চিমাদের হাতে বন্ধী তখন বাঙালি
জাতি তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। নৈতিক আর্থিক ও সামাজিক সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে যে সময় ইন্দিরা মহীয়ষী নারীতে নয়, মহান নেতার পরিণত হন তিনি বিশ্ববাসীর দরবারে। দাড়ালে বাংলাদেশের পক্ষে।
সফল করলেন সে অধ্যায়। তাদের দু’জনের প্রতিকৃতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আকাশচুম্বী করে রেখেছেন।
লেখকের কথায় সাংবাদিক লোকমান হোসেন পলা লিখেছেন, “ত্রিপুরার আগরতলার নাম শোনেনি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমরা ছোটবেলায় প্রবাদ শুনেছি, ‘কোথায় আগরতলা, আর কোথায় চোকির তলা!’ এই প্রবাদের মধ্যদিয়েও কিন্তু আগরতলার শ্রেষ্ঠত্বকেই প্রকাশ করা হতো। বহু কারণে আগরতলা বিখ্যাত। সবেচেয়ে বেশি বিখ্যাত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দায়ের করা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র কারণে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের আগরতলায় আশ্রয় নেওয়া, সেখান থেকে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার স্মৃতিও আগরতলাকে বাঙালির হৃদয়ের আসনে ঠাঁই দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হোসাইন তৌফিক ইমাম (এইচটি ইমাম) এক স্মৃতিচারণে বলেছিলেন, আগরতলা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। অর্থাৎ আগরতলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা
পালন করেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে আগরতলা হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের অলিখিত রাজধানী। কেবল লাখ লাখ শরণার্থীর নয়, রাজনৈতিক ও সশস্ত্র প্রতিরোধ নেতৃত্বের বড় অংশের প্রথম আশ্রয়স্থল হয়েছিল আগরতলা। শান্ত নিস্তরঙ্গ পাহাড়ঘেরা মনোরম সৌন্দর্যমণ্ডিত এই অঞ্চলের মানুষ যে ভালোবাসা ও
আন্তরিকতা নিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী ও যুদ্ধসমাজকে বরণ করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আগরতলা ও ত্রিপুরাবাসীর ভূমিকা মূল্যায়ন নিয়ে এই প্রজন্মের কাছে ধরে তুলে ধরার জন্য আমাদের পরম্পরা কাজ করে যেতে হবে। আমরা একটি ক্ষুদ্র দল মুক্তিযুদ্ধে আগরতালার নানা চিত্র আবিস্কারের জন্য ঘুরেছি আগরতলা ও ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকায় আলাপ করেছি বহু বিশিষ্ট ও সাধারণজনের সঙ্গে, সংগ্রহ করেছি নানা তথ্যমালা, লিপিবদ্ধ করেছি বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার। দীর্ঘ শ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ভেতর দিয়ে রচিত মুক্তিযুদ্ধে অমোচনীয় ত্রিপুরা।” বইটি অধ্যায়ন শেষে লেখকের কথার সাথে শতভাগ মিল খুঁজে পেলাম। সত্যিকার অর্থেই তিনি
মুক্তিযুদ্ধে আগরতালার নানা চিত্র আবিস্কারের জন্য ঘুরেছেন, আগরতলা ও ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকার বহু বিশিষ্ট ও সাধারণজনের সঙ্গে আলাপ করেছেন, সংগ্রহ করেছেন নানা তথ্যমালা, লিপিবদ্ধ করেছেন ওখানকার বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার।
লেখক আর পাঠক এক নয়। একজন গুণী লেখকের চিন্তা শক্তি ও জ্ঞানের গভীরতা উপলব্ধি করতে হলে তার সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। অধ্যায়ন করতে হবে তার রচনাবলী। “মুক্তিযুদ্ধে অমোচনীয় ত্রিপুরা” লেখককে খ্যাতির চরম শিখরে পৌঁছে দিবে। বইটির পাঠক লেখকের চোখে দেখা স্মৃতিস্তম্ভ ও মুক্তিযুূ্দ্ধকালীন ত্রিপুরাবাসীর সহযোগিতার ইতিহাস পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: ড. এস এম শাহনূর, কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |