• শিরোনাম


    ন্যায়পরায়ণতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

    মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১২:১৬ অপরাহ্ণ

    ন্যায়পরায়ণতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

    আদল শব্দটি আরবী। এর অর্থ ইনসাফ, সুবিচার, সমতা রক্ষা করা ইত্যাদি। পরিভাষায় শরীআতের দৃষ্টিতে যেসব কাজ নিষেধাজ্ঞা তা থেকে বেঁচে থাকা, হক পথের উপর অবিচল থাকার নাম হল আদল বা ন্যায়পরায়ণতা।
    বস্তুত ইসলামী সমাজ-ব্যবস্হায় আল্লাহর নির্দেশিত বিধান অনুযায়ী যার যা হক ও অধিকার আছে তা যথাযথভাবে পালন ও আদায়ের নামই হল আদল বা ন্যায়পরায়ণতা। ইসলামে আদল ও ন্যায়পরায়ণতার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, আদল ও ন্যায়পরায়ণতা ছাড়া ব্যক্তিজীবন থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো জীবনেই শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ মহৎ গুণের অধিকারী হলে মানুষ মানবিক মর্যাদাবোধ এবং পারস্পারিক দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। তখন সমাজ দেহ থেকে জুলুম তিরোহিত হয়ে যায়।

    কুরআন মাজীদে আদল ও ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বনের ব্যপারে বহু তাগিদ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালঙ্ঘন ; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।’



    ব্যক্তি জীবনের ন্যায় জাতীয় জীবনেও ইনসাফের গুরুত্ব অপরিসীম। রাষ্ট্র ব্যবস্হায় রাষ্ট্রীয় প্রশাসন মানুষের জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করে।
    ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জিম্মাদারী শাসক শ্রেণীর উপর। দেশের প্রশাসন যদি ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তবে জাতীয় জীবনে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়। সুতরাং জাতীয় জীবনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন,
    ‘তোমরা সুবিচার করো, তা তাকওয়ার নিকটতর।’
    ‘যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে।’
    আরও ইরশাদ হয়েছে,
    ‘আর তুমি যদি বিচার নিষ্পত্তি কর, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।’

    ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা যেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন, ন্যায়ের মানদণ্ড অবশ্যই কায়েম রাখতে হবে।
    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষী স্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়, সে বিত্তবান অথবা বিত্তহীন হোক, আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হবে না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে তোমরা যা কর আল্লাহ তো তার সম্যক খবর রাখেন।’

    হাদীসেও আদল এবং ন্যায়পরায়ণতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    ‘ন্যায়পরায়ণ মানুষ আল্লাহর নিকট নূরের মিম্বরের উপর আরোহিত থাকবে। অর্থাৎ যারা নিজেদের পরিবার-পরিজন এবং কর্তৃত্বাধীন জনসাধারণের প্রতি হুকুম দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করে হুকুম প্রদান করে।’

    অপর এক হাদীসে আছে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন, মাখযুমী সম্প্রদায়ের এক মহিলা চুরিতে ধরা পড়ার পর তার এই কাজ কুরাইশ বংশীয় লোকদেরকে খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। অতঃপর তারা এ ব্যাপারে পরস্পর আলাপ-আলোচনা করেন এবং বলেন যে, কে এমন আছে, যে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়পাত্র উসামা রাযি. ছাড়া কেউ তাঁর সামনে কথা বলার সাহস করবে না। অতঃপর হযরত উসামা রাযি. এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁর বক্তব্য শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর দেওয়া শাস্তি বিধানের ক্ষেত্রে সুপারিশ করছ? এরপর তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করলেন এবং বললেন, হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কেননা, তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, কোনো সম্মানিত লোক চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত, তখন তারা তার উপর শরীয়তের শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ-এর কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে, তবে মুহাম্মাদ অবশ্যই তার হাত কেটে দিবে। এই হল ইসলামের ইনসাফ।

    ন্যায়বিচার থেকে বিচ্যুতি একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়। ন্যায়বিচার ছাড়া কখনোই সভ্য সমাজ ও উন্নত রাষ্ট্র গড়ার কল্পনাও করা যায় না। তাই ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সর্বক্ষেত্রে আমাদের ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার কায়েম করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

    Facebook Comments Box

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    নিয়ত অনুসারে নিয়তি ও পরিনতি

    ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

    আর্কাইভ

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
  • ফেসবুকে আওয়ারকণ্ঠ২৪.কম