| ২৬ অক্টোবর ২০১৮ | ২:২১ অপরাহ্ণ
সুপারি’ এশিয়ায় বেশ পরিচিত। পানের সাথে মিলিয়ে সুপারি খাওয়ার প্রচলন এশিয়া মহাদেশে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তবে বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠির প্রায় এক-দশমাংশ সুপারি খান।
‘আরেকা পাম’ নামক গাছ থেকে সংগৃহীত এ খাবারটিতে উদ্দীপক উপাদানের উপস্থিতির কারণে অনেকেই নিয়মিত এটি চর্বণ করে থাকেন।
জানা যায়, সুপারির কার্যক্ষমতা প্রায় ছয় কাপ কফির সমান। কোনো কোনো জায়গায় এটিকে দেখা হয় ভালোবাসার প্রতীক এবং বদহজম এবং বন্ধ্যাত্ব সমস্যার প্রতিকারক হিসেবে।
যদিও উপকারী বলা হচ্ছে তবু এই সুপারিতে মৃত্যুও হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। এটির কার্যক্ষমতা এতটাই বেশি যে নিকোটিন, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনের পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানসিক বিভ্রমকারী মাদক হিসেবে সুপারিকে বিবেচনা করা হয়।
তুলনামূলকভাবে কর্মক্ষম পুরুষদের মাঝেই সুপারির ব্যবহার বেশি। গাড়ি চালানো, মাছ ধরা কিংবা নির্মাণকাজের মতো কর্মকাণ্ডে বেশী সময় জেগে থাকার জন্য তারা সুপারি চিবান।
তবে কিছু নির্দিষ্ট সময়ের সুবিধা পাওয়ার এই উপাদানটি শেষ পর্যন্ত ধরা দেয় বেশ চড়া মূল্যে।
নিয়মিত সুপারি ব্যবহার করছেন এমন মানুষদের মুখে ক্যান্সার হচ্ছে। আর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন। এমনকি প্রথমবার সুপারি ব্যবহার করার কয়েক দশক পরেও ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এমন মানুষও দেখা যাচ্ছে।
এশিয়ার যে কয়টি দেশে সুপারি খুব বেশি জনপ্রিয় তার মাঝে একটি দেশ তাইওয়ান। সুপারি সেখানে ‘তাইওয়ানের চুইং গাম’ হিসেবে বেশ পরিচিত।
সুপারির এত ক্ষতিকর দিকের কথা ভেবে সে দেশের সরকার হাজার জীবন রক্ষার জন্য নিয়েছে নানা পদক্ষেপ।
এশিয়ার অনেক অঞ্চলে সুপারি স্থানীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটিকে তাজা, শুকিয়ে কিংবা পানপাতা দিয়ে মুড়িয়ে খিলি বানিয়ে ব্যবহার করা হয়।
যদিও পানের খিলি বানানোর নিয়ম একেক দেশে একেক রকম। তবে সাধারণত: চুন, পানপাতা, এলাচি বা দারচিনির মতো মশলা এবং তামাকের সাথে মিশিয়ে এই খিলি তৈরি করা হয়।
আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা পানের খিলিতে থাকা সকল উপাদানের মধ্যে এলাচি এবং দারচিনি ছাড়া বাকি সকল উপাদানকে ‘কার্সিনোজেন’ বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
চুন ব্যবহারে মুখের ভেতর ছোট-ছোট অনেক ক্ষত তৈরি হতে পারে। আর তাই এটিকেও জানা হয় বিশেষ সমস্যা হিসেবে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অনেক উপাদান এসব ক্ষতের মাধ্যমে চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
তাইওয়ানের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হান লিয়াং-জুন বলেন ‘প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো জানেই না যে সুপারির কারণে মুখে ক্যান্সার হতে পারে’।
উচ্চমাত্রায় সুপারি ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে প্রথম তিনের তালিয়ার একদম শুরুতে আছে তাইওয়ান। তবে সে দেশের সরকারের উদ্যোগে এটি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এছাড়া ভারত এবং থাইল্যান্ডও চেষ্টা করছে এর ব্যবহার কমানোর।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা