এসএম অলিউল্লাহ নবিনগর থেকেঃ | ১৭ জুলাই ২০১৮ | ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ
ক্রমেই সংকট ঘনিভুত হয়ে আসছে নবীনগরের রাজনীতিতে। আগামি ২৬ জুলাই বিকেল ৩টায় নবীনগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠেয় মহাজোটের অন্তর্ভূক্ত জাসদ আয়োজিত ‘রাজনৈতিক জনসভা’কে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে হেফাজতে ইসলাম ও জাসদ।একই স্থানে একই সময়ে জনসভা করতে বদ্ধপরিকর উভয় দল! অপরদিকে আজ জাসদের জনসভা বর্জনের ডাক দিলেন স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা অাওয়ামীলীগের সভাপতি ফয়জুর রহমান বাদল। ত্রিমূখী সংকটে এখন নবীনগরের রাজনীতি। জাসদের ওই জনসভায় মহাজোটের অংশীদার বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
ওই জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মহাজোটের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা এডভেকেট শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন।
ওই জনসভাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে নবীনগরের বিভিন্ন স্থানে লাগানো শতশত পোস্টারে “নবীনগরের সাধারণ মানুষের মান, সম্মান, মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হোন” – এমন উস্কানীমূলক লেখার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই সাংসদ বাদল সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওই রাজনৈতিক জনসভা জোড়ালোভাবে বর্জনের ডাক দেন।
আজ সোমবার (১৬/০৭/১৮) দুপুরে স্থানীয় ডাক বাংলোর ভিআইপি কক্ষে জনাকীর্ণ ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল দৃঢ়তার সঙ্গে জনসভা বর্জনের এ ঘোষণা দেন।
সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, গত সাড়ে চার বছরে আমার কোন্ কর্মকান্ডে নবীনগরের সাধারণ মানুষের মান সম্মান মর্যাদা বিনষ্ট হয়েছে, সেটি আমি বিনয়ের সঙ্গে জনসভার উদ্যোক্তাদের কাছে জানতে চাই।
ক্ষুব্দ এই সাংসদ বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, মহাজোটের মাননীয় তথ্যমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা তাঁকে বরণ করে নেবে।
কিন্তু জাসদের ওই পোস্টারে নবীনগরের শান্ত রাজনীতিকে পরিকল্পিতভাবে অশান্ত করে তোলার প্রয়াসে এসব নোংরা ও উস্কানীমূলক কথাবার্তা লেখা হয়েছে। আর এ কারণে স্থানীয় আওয়ামীলীগ আজ বিশেষ জরুরী বর্ধিত সভা ডেকে আগামী ২৬ জুলাইয়ের ওই জনসভা বর্জনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাংসদ বাদল আরও বলেন, কেবল জাসদের ওই সভা বর্জনই নয়, আজকের বিশেষ বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতভাবে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে আওয়ামীলীগের বাইরে থেকে মহাজোটের অন্য কোন প্রার্থীকে কোনভাবেই মেনে নেয়া হবেনা।
প্রয়োজনে এ বিষয়টি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বিনয়ের সঙ্গে লিখিতভাবে জানানো হবে।
সাংসদ বলেন, নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ মনে করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নবীনগরের তৃ্ণমূলে থাকা স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর মনের এই আকুতি ও ইচ্ছে ‘সদাশয়’ হয়ে গ্রহণ করে এই (নবীনগর) আসনে আগামি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকেই ‘প্রার্থী’ দেবেন।
সাংসদ জোর গলায় বলেন, নবীনগরে আওয়ামীলীগ এখন সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ। তাই এই আসনে আওয়ামীলীগ দলীয় যে প্রার্থীকেই ‘মনোনয়ন’ দেয়া হবে, স্থানীয় আওয়ামীলীগ তাদের সর্বশক্তি দিয়ে নৌকার সেই প্রার্থীকেই বিজয়ী করে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে এই আসনটি উপহার দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মলনে উপস্থিত নবীনগরের কথা পত্রিকার সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুুর এক প্রশ্নের জবাবে “নবীনগরের উন্নয়নের রূপকার” হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি লাভ করা এই সাংসদ সুস্পষ্টভাবে বলেন,”আগামি নির্বাচনে আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইবো এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে আমাকে এবারও মনোনয়ন দেয়া হলে, আমি ইনশাল্লাহ নির্বাচন করবোই। বিগত সাড়ে চার বছরের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষাকল্পের জন্যই আমি এ আসন থেকে আগামি নির্বাচন করতে চাই।”
সাংবাদ সম্মেলনে এসময় সাংসদের পাশে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিমসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় উর্ধতন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।