| ১৯ আগস্ট ২০১৮ | ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ
আজকের গল্প একজন হামাগেরি ফিকিরমান্দ
ব্যাক্তিত্বকে ঘিরে। আকাবিরে দেওবন্দের এক
দীপ্তমান প্রতিচ্ছবিকে ঘিরে ।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক ব্যক্তি। ধরে
ধরে হাটাতে হয় তাঁকে। হুইলচেয়ারে করেও
কভু দেখা যায়। এই দৃশ্যটা রাজপথ খুব ভাল
করে দেখেছে। পল্টন এলাকার রাস্তাগুলোর
যদি ব্যাক্তিগত ডায়েরী থেকে থাকে তবে হয়তো
তাদের সবচে’ দামি কলমটা দিয়েই এই বীরের
গল্পটা লেখে রাখবে। গল্পের সেই রাজকুমারের
নাম ‘নূর হুসাইন কাসেমী’। একটি চেতনাময়
আলোকবর্তিকা। প্রেরণাময় গুল বাগিচা।
হযরতের ব্যাপারে কম আর বেশি সবাই অবগত
যে, তিনি দ্বীনের সকল লাইনে কাজ করার জন্য
সর্বদা সবাইকে উৎসায়িত করে থাকেন। প্রত্যক্ষে-
পরোক্ষে নিজেও শরিক থাকেন। এবং নিজ কানে বহুবার তাঁকে বলতে শুনেছি যে, ‘তুমি যেই লাইনে দ্বীনের কাজ করছো সেটাই দ্বীন, এমন বলবেনা;
বরং বলবে এটাও দ্বীন’নিজে এক জায়গায় জমে থেকে কাজ করবে। অপরদের সাধ্যমত সহায়তা করবে। সমর্থন দিবে।
তালীম তরবিয়ত..
তিনি দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর একাধিক মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। শায়খুল হাদীস। সদরুল মুহতামিম। সর্বক্ষণ সময় দেন জামেয়া মাদানিয়া বারিধারায়।
গত কিছু দিন আগের কথা মাদরাসায় ফজর শেষে হযরত মাদ্রাসা থেকে বের হলেন। চলে গেলেন সাভারের হরিণধরা মাদ্রাসায়।
সবকের ইফতেতাহ করলেন । তারপর মিরপুর
মাদ্রাসাতুল ইহসানেও সবকের ইফতেতাহ করলেন। উত্তরার বাকিয়াতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসায়ও সবকের ইফতেতাহ করলেন। এভাবে আরোও বেশ
ক’টি মাদ্রাসায় সবক ইফতেতাহ শেষে যোহর বাদ মাদ্রাসায় ফিরে আসলেন।
ইসলামী সিয়াসাত..
দুপুরে সামান্য বিশ্রাম সেরেই রওয়ানা করলেন
পল্টনের উদ্যেশ্যে। জমিয়ত কার্যালয়ে। তিনি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামা মাশায়েখের সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব। গত ১৪ জুলাই দলটির জাতীয় কাউন্সিল ছিল, এই উপলক্ষে দেশব্যাপী সাংগঠনিক প্রোগ্রামসমুহের তদারকি করেছেন। কোথায়ও নিজে উপস্থিত হয়েছেন, আবার কোন জায়গায় প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র জমিয়তের কাউন্সিলে প্রধান অতিথির গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখলেন। ছাত্র সমাজকে সঠিক ইসলামী সিয়াসাত করার প্রেরণা দিলেন। দেশ-
জাতীর ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এখলাসের সাথে কাজ করে যাওয়ার আদেশ
দিলেন। পরে বিকাল চাঁরটার দিকে মাদ্রাসায় চলে আসলেন।
দাওয়াত ও তাবলিগ..
পুরো পৃথিবীতে দাওয়াতে তাবলীগের মত মোবারক মেহনত আজ করুণ অবস্থায় পতিত। এক বিতর্কিত সা’দ সাব ও তার অন্ধানুসারিদের কারণে। বাংলাদেশের নানা জায়গায় একেরপর এক গেঞ্জাম করার
চেষ্টা চালাচ্ছে তার অনুসারীরা। আর উলামায়ে
কেরাম তা বুদ্ধিদীপ্তের সাথে প্রতিহত করে যাচ্ছেন।
এতে নূর হুসাইন কাসেমী ও বারিধারা জামিয়ার
অবদান শুরু থেকেই উল্লেখযোগ্য ছিল।
সা’দ সাহেবপন্থীরা চেয়েছিল সাবগুজারীকে
কেন্দ্রকরে এসে ইজতেমার মাঠটাকে
তারা দখলে নেবে। এ খবর এসে যায় আল্লামা কাসেমীর নিকট। তিনি বাদ আছর পাঁচশতাদিক ছাত্রের এক কাফেলা সেখানে প্রেরণ করেন
তাদের সে দৃষ্টতাকে প্রতিহত করতে। হযরত
সেখানে নিজে উপস্থিত না হতে পারলেও
হযরতের প্রতিনিধিত্ব করেন বারিধারা জামিয়ার স্বনামধন্য নায়েবে মোহতামিম হযরত মাও. নাজমুল হাসান। সন্ধেরাতে ইজতেমা মাঠে সাদপন্থীরা জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু প্রভূর মেহেরবানিতে ছাত্রদের কঠিন প্রতিরোধে তারা
চলে যেতে বাধ্য হয় । এটা হামাগেরি চিন্তার
নিরেট ফসলই বলা চলে।
তাযকিয়ায়ে নফস..
আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী একজন হক্কানী পীরও বটে। তিনি মুফতী মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. এর খলিফা। মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতি ইংরেজি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার হযরতের তরবিয়তি ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হযরতের মুরিদানরা এইদিন আগমন করেন। হযরতের পাক জবান থেকে নসিহত শ্রবণ করেন। গত কিছুদিন পূর্বের ঘটনা, বাদ মাগরীব শত শত মুরিদানে মাদ্রাসার আঙিনা ভরে উঠল। শুভ্রসফেদ জামাধারী হযরত আল্লামা কাসেমী আত্মশুদ্ধি নিয়ে তাৎপর্যবহুল বয়ান করলেন। ইশা পর্যন্ত চলল সে বয়ান । ইশার আগে-পরে মিলিয়ে চলতে থাকলে নতুনদের মুরিদ করার কাজ। এ যেন নতুনকরে জেগে উঠা এক খানকায়ে মাহমুদিয়া !
দ্বীনের সকল তরিকায় এভাবে কাজ করাটা বিরল। তবে নূর হুসাইন কাসেমীদের মত ব্যাক্তিত্বদের
জন্য এটা একেবারে সহজ সাধ্য। সাধারণ বিষয় ।
এই বটবৃক্ষ আরও বহুকাল জুড়ে আমাদের ছায়াদার হয়ে থাকুক। জগতজুড়ে সর্বদা দেওবন্দিয়্যাতের সরল শিক্ষা দান করতে থাকুক ।