| ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ
নারীরা দুটি উপায়ে শিশুর জন্ম দিতে পারেন— স্বাভাবিক প্রসব পদ্ধতি ও সিজারিয়ান পদ্ধতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, গর্ভকালীন সমস্যা বা প্রসবে জটিলতা দেখা দিলে মা ও সন্তানের জীবনরক্ষায় সিজার বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। আর একটি জনগোষ্ঠীতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ সন্তান প্রসবে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অথচ বাংলাদেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুজন্মের হার এখন ডব্লিউএইচও নির্ধারিত হারের দ্বিগুণ। অপ্রয়োজনীয় সিজারের কারণে এটি হয়েছে। শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে এ প্রবণতা। এ পরিস্থিতি শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক তো বটেই, ভবিষ্যতের জন্যও সমান ঝুঁকিপূর্ণ।
আমাদের দেশে যেভাবে সিজারিয়ান অপারেশন বাড়ছে, সে হারে এর নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা হয় না। অথচ এর ফলে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর যে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে, তা অনুধাবন করে বহু দেশ এ অপারেশন গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি সুইডেন, নরওয়ে ও জার্মানিতে পরিচালিত গবেষণার তথ্যানুযায়ী, সিজারিয়ান শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া শিশুর চেয়ে কম হয়। এছাড়া এ ধরনের শিশুর ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও বিভিন্ন অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। অন্যদিকে প্রতিটি সিজারিয়ান ডেলিভারিতে প্রসবে জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সিজারের সঙ্গে অতিরিক্ত অপারেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। এছাড়া প্রসূতির সেরে উঠতে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে বেশি সময় লাগে। অপারেশনের সময় ব্যবহূত ওষুধ অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া অপারেশনের পর প্রজননক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে। সার্বিকভাবে মায়ের শরীর গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি তো রয়েছেই, বিশেষ করে দরিদ্রদের ক্ষেত্রে। এমন বহু সমস্যা থাকার পরও আমাদের দেশে অপ্রয়োজনীয় সিজারের হার বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। এজন্য মূলত দায়ী একশ্রেণীর চিকিৎসক এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। অধিক মুনাফার আশায় তারা সিজারকে ব্যবসায় পরিণত করে ফেলেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যথাযথ পদক্ষেপের অনুপস্থিতিতে এ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। একশ্রেণীর চিকিৎসকের প্ররোচনায় অনেক রোগী বা তার পরিবার সিজারে রাজি হয়। এ চর্চা বন্ধ করতে হবে। আবার অনেক মা-ই প্রসবের যন্ত্রণা নিতে নারাজ। নির্মম বাস্তবতা হলো, এমন মায়ের সংখ্যা বাড়ছেই। অনেক সময় পরিবারের পক্ষ থেকেও সিজারের জন্য চাপ দেয়া হয়। এসব রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। চিকিৎসককে সিজারের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে রোগী ও তার পরিবারকে বিস্তারিত জানাতে হবে। সঙ্গে অবগত করতে হবে স্বাভাবিক প্রসবের সঠিক তথ্যও। চিকিৎসকরা শুধু প্রয়োজন পড়লেই সিজার করবেন, এটি কঠোরভাবে নিশ্চিত করা চাই। আর সিজার করার প্রয়োজন পড়লে কেন তা করা হবে, সেটিসহ আনুষঙ্গিক তথ্য প্রসূতি ও তার পরিবারকে লিখিতভাবে দেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। যেসব চিকিৎসক ও ক্লিনিক অপ্রয়োজনীয় সিজার করাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া চাই। আমাদের প্রশিক্ষিত নার্স বা মিডওয়াইফ তৈরিতে জোর দিতে হবে। এজন্য সরকারকে আরো পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
অপ্রয়োজনীয় সিজার অপারেশন বন্ধে সরকার, সংবাদমাধ্যম, চিকিৎসক সংগঠন, শিক্ষিত মানুষসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে জোর দিতে হবে। আগামী দিনের সুস্থ প্রজন্মের জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে