-মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া। | ২২ অক্টোবর ২০১৮ | ৬:৫৪ অপরাহ্ণ
হযরত আদম (আ.) থেকে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যুগে যুগে যখনই মানুষ আল্লাহ ও তাঁর দীন ভুলে গেছে, তখনই আল্লাহ তাআলা হেদায়েতের জন্য তাঁর নির্বাচিত নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আর কোনো নবী-রাসুল আগমন করবে না এবং আর কোনো কিতাবও অবতীর্ণ হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব মানবের জন্য এ দীনকে আল্লাহ তাআলা আদর্শ হিসেবে মনোনীত করে দিয়েছেন। তাই এ দীনী আমানত ধারণ, বহন ও সংরক্ষণের নিমিত্তে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উলামায়ে কেরামকে তাঁর উত্তরসূরী মনোনীত করে গেছেন। এ উত্তরসূরীরাই কিয়ামত পর্যন্ত নবী কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।
সর্বযুগেই উলামায়ে কেরাম এ দায়িত্ব পালনে তৎপর ছিলেন। দীনের যে কোনো প্রয়োজনে তাঁরা সর্বোচ্চ কুরবানী স্বীকার করেছেন। বাতিলের রক্ত চক্ষু, শয়তানিয়্যাতের উদ্ধত অহংকার, ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন, কুচক্রীদের প্রলোভন, জাগতিক ভোগ বিলাসের মোহ কোনো কিছুই তাঁদেরকে আপন কর্তব্য থেকে সামান্যতম বিচ্যুত করতে পারে নি। আমাদের এ উপমহাদেশের উলামায়ে কেরামও এ ক্ষেএে পিছিয়ে ছিলেন না। কোনো কালেই। বরং ইসলামের হেফাজত ও বাতিল প্রতিরোধে তাদের রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। এ পর্যায়ে আমি তা আলোকপাত করার কিঞ্চিত প্রয়াস চালাব ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় সুধী ! ভারতবর্ষে ইসলামের দাওয়াত পৌছেছে সাহাবায়ে কেরামদের যুগেই। তখন থেকেই ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের খন্ড খন্ড প্রয়াসও চলে আসছিল। একসময় হিন্দু প্রধান ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ মুসলিম শাসনামলে মোগল সম্রাট আকবরের যুগে তার মূর্খতার সুযোগ নিয়ে হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদীরা যখন ক্ষমতা লোভী সম্রাটের ছএ ছায়ায় নিজেদের কুটিল চানক্য মূর্তিকে আড়াল করে, হিন্দুয়ানী দর্শন-উপাদানে গঠিত দীনে এলাহির নামে নিঃশেষ করে দিতে চাইল ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম ও মুসলিম উম্মাকে, তখন সেই ধারারই উত্তরাধীকারী এক মর্দে মুমিন আল্লাহর উপর ভরসা নিয়ে বলিষ্ঠ ঈমানী চেতনায় এগিয়ে এলেন এবং ছিন্ন করে দিলেন তাদের সব ষড়যন্ত্রের জাল। ফলে মনগড়া দীনে এলাহির মূলোৎপাটন ঘটে এবং পুনঃ ইসলামী বিশুদ্ধ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
এরপর কালক্রমে যখন আবারও মুসলিম সমাজ ইসলামী আদর্শ বিচ্যুত হয়ে পড়ে, তখন শাহ ওয়ালী উল্লাহ রহ. আরেকটি সংস্কার আন্দোলন গড়ে তুলেন। এ আন্দোলন চলমান অবস্হায় উপমহাদেশের উপর নেমে আসে আরেক বিপর্যয়ের ঘনঘটা। খৃষ্ট অষ্টাদশ শতকে বণিকবেশী বর্বর ইংরেজ শ্বেত ভল্লুকের গোষ্ঠি ছলে-বলে-কলে-কৌশলে এ উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে নেয়।চুরমার করে দেয় ৭০০ বছরের গৌরবময় মুসলিম শাসন। এমনকি ক্ষমতার আসনকে পাকাপোক্ত করার জন্য তারা সর্বব্যাপী আগ্রাসী তৎপরতা শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে ইংরেজরা ভারত বর্ষে ব্যবসার উ্দ্দেশ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে, ২ বছর পারহতে নাহতেেই, হুকুম জারী করল যে, ‘সৃষ্টি আল্লাহর, দেশ বাদশা বাহাদুরের, আর হুকুম চলবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির’, তখন শাহ ওয়ালী উল্লাহর সুযোগ্য উত্তরসূরী হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহ. জিহাদের ডাক দেন। ঘোষণা করলেন, ‘ভারত এখন দারুল হরব বা শত্রু কবলিত। সুতরাং প্রতিটি ভারতবাসীর কর্তব্য হল একে স্বাধীন করা’।
দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়ল এ ফতোয়ার ঘোষণা। সৈয়দ আহমদ শহীদ ও শাহ ইসমাঈল শহীদ রহ. -এর নেতৃত্বে মুজাহিদ বাহিনী দলে দলে যোগদান করলেন বালাকোটের প্রান্তরে। প্রথম দিকে মুজাহিদদের ব্যাপক বিজয় সাধিত হলেও শেষ দিকে ইংরেজদের হীন চক্রান্তে ও কতিপয় সরদারের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে তাঁদের পক্ষে শিখ ও ইংরেজদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৮৩১ সালের ৬ মে বালাকোট যুদ্ধে সায়্যিদ আহমদ শহীদ নিজের বহু সঙীসহ শাহাদাত বরণ করেন।
বাংলায় হাজী শরীয়তুল্লাহ ও মাওলানা সায়্যিদ নিসার আলী ওরফে তিতুমীর ছিলেন সেই ধারারই মুজাহিদ। বালাকোট যুদ্ধের ঐ বছরই
বাংলায় নারিকেল বাড়িয়ার যুদ্ধে তিতুমীর শাহাদাত বরণ করেন।
বালাকোট যুদ্ধের পর আলেমদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ থেমে যায় নি। বরং ধারাবাহিকভাবে চালু ছিল। কেননা বালাকোটের যুদ্ধ গোটা ভারতে স্বাধীনতার এক অপ্রতিরোধ্য চেতনা বিলাতে সক্ষম হয়। বলতে গেলে তারপর শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব।
এগিয়ে আসেন শাহ ইসহাক, শাহ আব্দুল গণি, হযরত মাওলানা মামলুক আলী,
হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী, মাওলানা এনায়েত আলী, মাওলানা বেলায়েত আলী, মাওলানা জাফর থানেশ্বরী, মাওলানা কাসেম নানুতবী ও রশীদ আহমদ গাঙুহী রহ.-এর মতো আত্মত্যাগী মুজাহিদবৃন্দ।
তাঁদের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলে সারা দেশের আনাচে -কানাচে ইংরেজদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। ফলে সারা দেশের আলেম-উলামা-সেনাবাহিনী ও সর্বস্তরের স্বাধীনতাকামী মানুষ একাত্ম হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৮৫৭ সালে যা চরম বিদ্রোহের রুপ ধারণ করে। কিন্তু ইংরেজদের বিশাল সৈন্যবাহিনী, অত্যাধুনিক মারণাষ্ত্র ও দেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের গাদ্দারীর কারণে এ অভ্যুথান আপাদঃ ব্যর্থ হয়ে যায়। ক্রমান্বয়ে সব এলাকাই আবার ইংরেজদের দখলে চলে যায়। গণমানুষের রক্তের বন্যার উপর দিয়ে ইংরেজ সরকার পুনঃতাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে নেয়। আগের চেয়ে আরও সুসংহত করে উপমহাদেশে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ।
ইংরেজদের কাছে এ কথা দিবালোকের মতো ষ্পষ্ট ছিল যে, মূলতঃ আলেমসমাজই মুসলমানদের শক্তি ও প্রেরণার মূল উৎস এবং ইংরেজ বিরোধী চেতনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে তারাই অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছেন। ফলে তারা আলেমদের উপর লোমহর্ষক নির্যাতন শুরু করে দেয়। প্রায় অর্ধ লক্ষের চেয়ে বেশি আলেম-উলামাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। শেরশাহী গ্রান্ডট্রাংক রোডের কোনো একটি বৃক্ষ বাকী ছিলনা, যেখানে শহীদানদের লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয় নি। আন্দমান, মাল্টা,সাইপ্রাস ও কালাপানিতে দ্বীপান্তর করা হয় হাজার হাজার আলেম-উলামাকে। তাদের সহায়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়, ঘর-বাড়ী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।ধ্বংস করা হয় কুরআন হাদীস তথা ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র মাদরাসা সমূহ।চারদিকে তখন ভীষণ দুর্দিন। চরম হতাশায় মুহ্যমান হয়ে পড়ে ইসলামপ্রিয় জনতা।
সে কঠিন দুর্যোগময় মুহুর্তে এগিয়ে এলেন ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত, ওয়ালী উল্লাহী চিন্তাধারার মূর্তপ্রতীক হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত কাসিম নানুতবী রহ., ফকীহে উম্মত হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙুহী ও তাদের সহযোদ্ধারা।
পৃথিবীর সমগ্র পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ সমূহের পূর্বাপর পর্যালোচনা করে নববী তালীম ও শিক্ষার আলোকে ইসলামী পুনঃর্জাগরণ এবং সংস্কারের এক সার্বিক কার্যকর কর্মসূচী গ্রহণ করলেন তাঁরা। এরই প্রেক্ষিতে ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দের ৩০ মে, মুতাবেক ১৫ ই মহররম ১২৮৩ হিজরী সনে ভারতের উত্তর প্রদেশস্হ সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ বস্তিতে ঐতিহাসিক ডালিম বৃক্ষের নীচে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক এক ইলহামী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। যার নাম দারুল উলূম দেওবন্দ।
দারুল উলূমের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয় আযাদী আন্দোলনের আরেক নয়া অধ্যায়। পাঠদানের পাশাপাশি আযাদীর দীক্ষাও চলতে থাকে। শিক্ষার্থীদেরকে ইসলামের বিশুদ্ধ শিক্ষা ও আদর্শের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তাদেরকে মন-মানসিকতার দিক থেকে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদসহ সর্বপ্রকার বাতিলের বিরুদ্ধে সচেতন করা ও প্রতিকারের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সৈনিক রূপে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। ফলে অল্পদিনেই তৈরি হয়ে গেল এক নতুন সংগ্রামী কাফেলা। সুসংগঠিত হয়ে আবার তাঁরা ঝাপিয়ে পড়েন ইংরেজবিরোধী নয়া জিহাদে। হযরত শায়খুল হিন্দ রহ. ছিলেন সেই রুমাল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ইংরেজ সরকার শায়খুল হিন্দকে মদীনা থেকে গ্রেফতার করে ভূমধ্য সাগরীয় একটি দ্বীপে অবস্হিত ইংরেজদের আন্তর্জাতিক কারাগার মাল্টায় বন্দী করে রাখে। মাল্টায় শাইখুল হিন্দের সঙে আরও নির্বাসিত হন মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. ও মাওলানা ওযায়ের গুল অন্যতম।
চার বছর নানা লোমহর্ষক নির্যাতন ভোগ করার পর অবশেষে ১৯২০ সালের ৮ জুন মুক্তি লাভ করে ভারতের মাটিতে ফিরে আসেন। মাল্টা থেকে প্রত্যাবর্তনের মাত্র ৫ মাস ২২ দিনের মাথায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
শাইখুল হিন্দের ওফাতের পর মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ, মাওলানা হিফযুর রহমান, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী প্রমুখ স্বাধীনতাকামী আলেমগণ জমিয়তে উলামার মঞ্চ থেকে সংগ্রামী তৎপরতা অব্যাহত রাখেন।
ইংরেজ সরকার তাঁদের উপরও বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায়। সকল নির্যাতন-নিপীড়ন উপেক্ষা করেই তারা এগিয়ে যান। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বাধীনতার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। এ দেশের মানুষ আবার বুঝতে শিখে- স্বাধীনতা তাদের হারানো অধিকার, তা অবশ্যই ছিনিয়ে আনতে হবে। সার্বজনীন প্রচেষ্টায় একদিন ইংরেজরা ভারতের মাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। ফলে স্বাধীনতার মুক্ত পতাকা নীল আকাশে পত্ পত্ করে উড়ে বিশ্বের দরবারে এ দেশের স্বাধীনতার পয়গাম ঘোষণা করে।
বলতে গেলে দারুল উলূম দেওবন্দ ও তার অনুসারীরাই পরাধীনতার নিকষ কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন অমানিশায় স্বাধীনতার চেরাগ জালিয়েছিল।জাগিয়ে তুলেছিল এ দেশের মৃতপ্রায় মানুষের মাঝে স্বাধীনতার প্রদীপ্ত চেতনা। তৎকালে আলেমদের আন্দোলন না হলে ভারত স্বাধীন হত না, পাকিস্তান হত না, এবং পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটত না।
শুধু তাই নয়, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যখনই কোনো বাতিল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তখনই এ দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভুমিকা পালন করেছেন। দীনের সংরক্ষণ ও হেফাজতের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে তার সন্তানদের সরব উপস্হিতি বিদ্যমান ছিল না। ইসলাম ও মুসলমানদের উপর যেখানেই আক্রমণ হয়েছে, সেখানেই তারা ব্যাঘ্রের ন্যায় বজ্র কঠিন হুন্কার দিয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং ইসলামের দুশমনদের সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছেন। সকল বাতিলের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন সুস্পষ্টভাবে। শিয়া, কাদিয়ানী, বিদআতী,মওদূদী, লামাযহাবী,ফিতনাসহ সকল ফিতনার বিরুদ্ধে মুনাজারা ও কলমী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং হককে হক আর বাতিলকে বাতিল হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছেন পরিস্কারভাবে।
কেবল উপমহাদেশেই নয় উলামায়ে দেওবন্দ সমগ্র মুসলিম জাহানেই পাশ্চাত্যের নাস্তিকতা ও জড়বাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, আমল-আখলাক রক্ষার মুজাদ্দেদী দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আজকে বিশ্ব মুসলিমের মাঝে কুরআন-সুন্নাহর প্রতি যতটুকু আস্হা ও বিশ্বাস পরিলক্ষিত হয়, তা নিঃসন্দেহে দেওবন্দী চিন্তধারার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান।
বন্ধুগন ! বিশ্বব্যাপী ইহুদী-খৃষ্টান ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করতে এক জোট হয়েছে। একের পর এক মুসলিম রাষ্ট ওদের হিংস্র থাবার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ হিসেবে সর্বদাই ওদের টার্গেটে। সাম্রাজ্যবাদীরা ভালো করেই জানে, যতদিন উলামায়ে দেওবন্দ এ দেশে থাকবেন, আর যতদিন কওমী মাদরাসা টিকে থাকবে, ততদিন এ দেশে তাদের শিকড় গাড়তে পারবে না। সফল হবে না কিছুতেই। কেননা তারা জানে এসব আল্লাহ ওয়ালাগণ তাঁদের রূহানী শক্তিবলে যে কোনো ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ার আগেই গন্ধ পেয়ে যান। আর দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ তাদের সঙে থাকার কারণে তারা বাতিলের যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাই আলেম-উলামা ও কওমী মাদরাসাগুলোকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র তারা শুরু করে দিয়েছে। মৌলবাদী, ফতওয়াবাজ, জঙি ইত্যাদি ব্যঙ-বিদ্রুপের মাধ্যমে জনগণের কাছে আলেমদেরকে ঘৃণ্য ও অস্র দিয়ে ভারাটিয়া সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে যত্রতত্র সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে তার দায় ভার জোর করেই কওমী মাদরাসার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য তৎপরতা চালাচ্ছে।
পরিশেষে বলতে চাই, এ ষড়যন্ত্র শুধু আলেম উলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে নয়, বরং এ ষড়যন্ত্র ইসলামের বিরুদ্ধে। কওমী মাদরাসা হল ইসলামের প্রচার প্রসার ও সংরক্ষণের বলিষ্ঠ দুর্গ। বলার অপেক্ষা রাখে না, মাদরাসা ধ্বংস করা গেলে ইসলাম এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। তবে, সাম্রাজ্যবাদী নাস্তিক মুরতাদদেরকে মনে রাখতে হবে আলেম উলামাদের উপর নির্যাতন করে, মাদরাসা বন্ধ করে, ইসলামকে ধ্বংস করা যাবে না। অতিতে যারা ইসলামকে মসজিদ মাদরাসাকে ধ্বংস করতে এসেছে তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং মুসলমান ভাইদেরকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান করছি। সাম্রাজ্যবাদের দালাল ও তল্পীবাহকদের মিথ্যাচারে প্ররোচিত না হয়ে, বাস্তব অনুধা বন করে নিজেদের ঈমান-আমল হিফাজত করুন। আল্লাহ আমাদেরকে আকাবিরদের অনুসৃত পথে দীনের হেফাজতের তাওফীক দান করুন। আমীন।