| ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১২:৪১ অপরাহ্ণ
প্রায় তিন দশক ধরে বিনা বেতনে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার জশমতপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার শিক্ষক। শুধু তা-ই নয়, এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় নির্মিত এ বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরটিও এখন জরাজীর্ণ। প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরেও জাতীয়করণ না হওয়ায় এখন বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রাখাই দুরূহ হয়ে পড়েছে।
কমলগঞ্জের রহিমপুর ইউনিয়নের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম জশমতপুর। গ্রামের শিশুদের শিক্ষার কথা চিন্তা করে ১৯৯১ সালে এখানে একটি প্রথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে স্থানীয়রা। খতিজা বিবি ও আব্দুল গফুর নামে দুজন দান করেন ৩৩ শতক জমি। গ্রামবাসীদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় টিনশেড ভবন। নিয়োগ দেয়া হয় আব্দুল ওয়াহিদ, আব্দুল হান্নান, রত্না রানী পাল ও মৌসুমী আক্তার নামে চার শিক্ষককে। তবে সামর্থ্য না থাকায় তাদের বেতন দিতে পারছিল না গ্রামবাসী। আশা ছিল, বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলে এ সংকটের সমাধান হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ চার শিক্ষক আজো কোনো বেতন পাচ্ছেন না।
দেখা যায়, জীর্ণ টিনের ঘরে অপর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ নিয়েই বিদ্যালয়টিতে পাঠদান চলছে। নেই আসবাবপত্র, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ের ১৬০ শিক্ষার্থীর অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবারের হলেও তারা সরকারি উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, জাতীয়করণের আশায় বহু বছর চলে গেছে। আদৌ জাতীয়করণ হবে কিনা, তা নিয়ে হতাশার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। অথচ এ বিদ্যালয়ে জশমতপুর ছাড়াও দেবীপুর, দক্ষিণ ধর্মপুর ও দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। বিনা বেতনে শিক্ষকতা করা চার শিক্ষকের আর্থিক অবস্থাও ভালো না। তার পরও তারা অনেক কষ্টে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।
শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, তরুণ বয়সে বিনা বেতনে এখানে শিক্ষকতা শুরু করি। একদিন জাতীয়করণ হবে এমন আশায় মধ্যবয়সও পার করেছি। কিন্তু আমরা চার শিক্ষক এভাবে আর পারছি না। প্রতিনিয়ত চরম অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করছে। বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদ এমপি, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলীর সুপারিশসহ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এর পরও জাতীয়করণ না হওয়ায় আমরা শিক্ষকরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি।
তিনি আরো জানান, ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান সরকার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদ্যালয়ের প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
কথা হলে কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে এ বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। আশপাশে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এটি জাতীয়করণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আগামী শিক্ষা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, বিষয়টি অমানবিক। আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে আমি সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। জাতীয়করণ দীর্ঘদিনেও কেন হলো না, বিষয়টি খতিয়ে দেখব।