| ০৮ মার্চ ২০১৯ | ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ
আনুমানিক ৮০ বছরের বৃদ্ধ পারুল চক্রবর্তী। ছেলের অপেক্ষায় আছেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথধাম মন্দিরে। কিন্তু ছেলের জন্য অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না এই মায়ের। গতকাল চতুর্থ দিনেও ফিরে আসেনি নাড়ি ছেড়া ধন সেই ছেলে।
পেশায় টেইলার্স ছেলে সৃজন চক্রবর্তীর সঙ্গে গত ৪ঠা মার্চ সোমবার সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথধামে শিব চতুর্দশী মেলায় আসেন পারুল চক্রবর্তী। তীর্থ শেষে বিকালে সীতাকুন্ড বটতলা রেলওয়ে কালী মন্দিরে বসতে বলে পালিয়ে যায় ছেলে সৃজন চক্রবর্তী।
সেই থেকে বটতলা কালী বাড়িতে মিন্টু নাথ নামে এক জনের আশ্রয়ে আছেন বৃদ্ধ পারুল চক্রবর্তী। তার আশা কেউ না কেউ তাকে ছেলের কাছে পৌঁছে দেবেন। সেই আশায় যাকেই কাছে পাচ্ছেন তার কাছেই ছেলের কাছে যাওয়ার আবদার করে বসছেন।
আশ্রয়দাতা মিন্টু নাথ জানান, বৃদ্ধা তাকে ট্যাক্সিতে তুলে দিলে ছেলের কাছে চলে যেতে পারবেন বলছে। তবে ছেলের বর্তমান ঠিকানা চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় মেয়র গলি (প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর গলি) বলে জানালেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বলতে পারছেন না তিনি।
মিন্টু নাথ জানান, বয়সের ভারে পথ-ঘাট কিছুই মনে করতে পারছেন না বৃদ্ধা। কথাবার্তাও এলোমেলো। একেকবার একেক কথা বলছেন। একবার বলেন-তাকে রেখে ছেলে চন্দ্রনাথ মন্দিরে উঠেছে, আরেকবার বলেন-বটতলা মন্দিরে বসতে বলে ছেলে আর খবর নেয়নি। সঠিক কথা বলতে না পারায় তাকে ছেড়ে দেয়ার সাহস করছেন না বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে বৃদ্ধ পারুল সাংবাদিকদের বলেন, বাবা আমার শরীর ব্যথা হয়ে আছে। ব্যথার ঔষুধ লাগবে আমার। তাই ছেলের কাছে যেতে চাই আমি। বৃদ্ধার এই কাকুতিতে তাঁর ছেলের বিবেক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় লোকজন। বৃদ্ধ পারুল ওই সময় একটি কম্বল পেতে মেঝেতে বসে মুড়ি খাচ্ছিলেন।
পারুল চক্রবর্তী জানান, তার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার সরকার হাট এলাকায়। তাঁর স্বামী মৃত গোপাল চক্রবর্তী। বড় ছেলে সৃজন চক্রবর্তী বৌ নিয়ে চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ এলাকার মেয়র গলিতে ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি পেশায় একজন দর্জি। বৃদ্ধার আরো ২ ছেলে ও ২ মেয়ে আছে। তারা হলো- সুমন চক্রবর্তী, সীমা, রুমকি ও শিলনী চক্রবর্তী।
বৃদ্ধা বলেন, সীতাকুন্ডে চন্দ্রনাথ দর্শনের কথা বলে বড় ছেলে সৃজন চক্রবর্তী সোমবার সীতাকুন্ড নিয়ে আসে। এরপর কাজের অর্ডার বেশি আছে অনেক জামা-কাপড় সেলাই করতে হবে জানিয়ে ছেলে চলে যায়। যাবার সময় বলে যায়, সে আবার এসে তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু অসহায় বৃদ্ধ মাকে রেখে যাবার পর সে আর ফিরে আসেনি।
বটতলী কালী বাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সমপাদক নিউটন ধর বলেন, মেলার এই কয়েকদিন আমরা বিভিন্ন মঠ-মন্দির নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এবার বৃদ্ধাটিকে কোথায় রাখা যায় দেখি।
মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি ইউএনও মিল্টন রায় বলেন, আমি এ বিষয়টি জানতাম না। মেলা কমিটির সাধারণ সমপাদক পলাশ চৌধুরীর সঙ্গে সমন্বয় করে তাকে শঙ্কর মঠ অথবা আশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান তিনি। সীতাকুন্ড মেলা কমিটির অতিরিক্ত সাধারণ সমপাদক সমীর কান্তি শর্মা জানান, শিব চতুর্দশী মেলায় তীর্থ করতে এসে ভিড়ের মধ্যে অনেকেই আপনজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আমরা হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির নাম ঠিকানা বলে মাইকে প্রচার করি। প্রচারের পর অনেকে আপনজনদের ফিরে পেয়েছে। ওই বৃদ্ধার কথাও বেশ কয়েকবার প্রচার করেছি। তবে এখনও কেউ তাকে নিতে আসেনি। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে ওই বৃদ্ধাকে শঙ্কর মঠ অথবা আশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |