| ০৭ এপ্রিল ২০১৯ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ
আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) উদ্যোগে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বত্র সরকারি ও বেসরকারিভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়। দিবসটির মূল লক্ষ্য সব মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করে এবং জনগণকে সচেতন করে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হল- ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নীতি : সবার জন্য, সর্বত্র’ (Universal health coverage: everyone, everywhere)।
পৃথিবীর সব দেশেই নিজ নিজ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার নিমিত্তে বিভিন্ন রকম নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতি বিরাজমান। এটি প্রধানত ওই নির্দিষ্ট রাষ্ট্রটির অর্থনৈতিক কাঠামো, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো বিদ্যমান। সামগ্রিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের অনেক রকম কার্যকর ও ফলপ্রসূ কাঠামো প্রতিষ্ঠিত আছে। কিন্তু উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার সামগ্রিক কাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। সারা পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পেতে ব্যর্থ। কিন্তু এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রত্যেক মানুষেরই তার প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার আছে এবং কোনো বিবেচনাতেই এর ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। কোনো কোনো দেশে বিত্তবানদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নাগালের মধ্যে থাকলেও তা সাধারণের নাগালের বাইরে। যারা স্বাস্থ্যসেবা কিনতে পারছে, তারাই আদর্শ মানের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। কিন্তু বিপুলসংখ্যক মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্তের মানুষ অনেক সময়ই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেতে ব্যর্থ হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জোরালোভাবে প্রস্তাব করেছে, পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র অবশ্যই সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নীতি (Universal Health Coverage) চালু করবে, যাতে করে বিশ্বের একজন মানুষও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে না থাকে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেতে গিয়ে বছরে বিভিন্ন দেশে কমপক্ষে এক কোটি মানুষ ১.৯ ডলারের কম উপার্জনক্ষম মানুষের বলয়ে ঢোকে, অর্থাৎ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করতে বাধ্য হয়। গড়ে ৮ কোটি মানুষ তার প্রাত্যহিক মোট খরচের ১২ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্যসেবার জন্য খরচ করে। এটি একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করে। উন্নত দেশগুলোর নাগরিকরা ব্যক্তিগতভাবে অথবা রাষ্ট্রীয় পলিসির কারণে এ স্বাস্থ্যসেবাটুকু নিতে সমর্থ হয়। কিন্তু এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা- এসব মহাদেশের রাষ্ট্রগুলো বা এদের জনগণ এ সুবিধা দিতে বা পেতে ব্যর্থ হচ্ছে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বলতে সব মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বোঝায়, যাতে করে তাকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে না হয়। একই সঙ্গে এটি সব মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসাপ্রাপ্তির বিষয়টি বোঝায় না। এটি আসলে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা নীতিকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে উৎসাহ দেয়, যাতে করে যে কোনো রাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যেই জনগণের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে সব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এখানে স্বাস্থ্যসেবা বলতে শুধু ওষুধ প্রদানকে বোঝায় না। স্বাস্থ্যসেবা বলতে আরও বোঝায়- ক. সব রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, খ. সম্ভাব্য সব অসংক্রামক রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাপনা, গ. মৌসুমভিত্তিক সংক্রামক রোগের সময়োচিত প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, ঘ. জীবনব্যাপী সব মানুষের আদর্শ সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সব প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক কাঠামো তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা।
ডা. শাহজাদা সেলিম : সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবোলিজম বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।