রিপোর্ট: শহিদুল ইসলাম খুকন, গাইবান্ধা থেকে | ৩০ এপ্রিল ২০১৯ | ৪:২১ পূর্বাহ্ণ
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে একটি লাশের দাবীদার উক্ত ব্যক্তির দুই ধর্মের দুই স্ত্রীর।
ঘটনাটি ঘটেছে পলাশবাড়ী উপজেলার ১নং কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কিশোরগাড়ী গ্রামের নেকটগাড়ী পাড়ায়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গ্রামের তিলক চন্দ্র রবিদাস ওরফে তিলকা রবিদাসের ছেলে দিলীপ চন্দ্র রবিদাস ওরফে দিলচান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করতো।চাকুরীরত অবস্থায় সে একই সম্প্রদায়ের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফতুল্লাপুর এলাকার অর্জুন চন্দ্র রবিদাস ওরফে গবরা’র মেয়ে রাজবসিয়া রানীকে বিয়ে করে সংসার শুরু করে । সংসারে জীবনে দিলীপের ৪ছেলে মেয়ে রয়েছে। চাকরি কালীন দিলীপ চন্দ্র বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। এ সময় ইরাক কুয়েত যুদ্ধের সময় সেনা বাহিনীর মিশনে বিদেশ যাওয়ার সময় সে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। দিলীপ চন্দ্র ধর্মান্তরিত হয়ে তার নাম পরিবর্তন করে মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক নাম ধারন করে মিশনে অংশগ্রহন করে।
পরে ধর্মান্তরিত (দিলীপ) আবু বক্কর সিদ্দিক রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার উত্তর পানাপুকুর গ্রামের মোঃ আঃ রাজ্জাকের মেয়ে রুনা লায়লাকে ২য় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। আর এসময় আবু বক্কর সিদ্দিক ৩ বার পবিত্র ওমরা হজ্জ্ব পালন করে বলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রুনা লায়লা দাবী করে। ২য় স্ত্রী ২১ বছরের বিবাহিত জীবনে কোন সন্তানের মা হতে পারেন নি। এরি মধ্য আবু বক্কর সিদ্দিক ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করে। অবসরের পর আবু বক্কর সিদ্দিক বেশ কিছুদিন হলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত ২১ এপ্রিল আবু বক্কর সিদ্দিকের হার্ট আ্যটাক হলে তার ২য় স্ত্রী স্বামীকে বগুড়া সিএমএইচ এ ভর্তি করান।
চিকিৎসা চলাকালীন প্রথম স্ত্রীর ছেলে অমল চন্দ্র রবিদাস তার ধর্মান্তরিত বাবা আবু বক্কর সিদ্দিককে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার সময় পথিমধ্যে ২৮ এপ্রিল রাত ১২ টার দিকে মারা যায়।
পরে ছেলে অমল তার মৃত্যু বাবার লাশ কৌশলে পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কিশোরগাড়ী গ্রামের নেকটগাড়ী নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে।
এ খবর ২য় স্ত্রী রুনা লায়লা জানতে পেরে স্বামীর বাড়িতে এসে মুসলিম রীতি অনুসারে কাফন-দাফন ও জানাজা করে কবরস্থ করার কথা বলেন। আর এতে আপত্তি জানায় প্রথম পক্ষের স্ত্রী সন্তানেরা। তারা হিন্দু (রবিদাস) শাস্ত্র অনুযায়ী লাশের সৎকারের ব্যবস্হা করার উদ্যোগ নিলে নানা জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি নিয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাউল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু বকর প্রধান, এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান, পলাশবাড়ীর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মতিউর রহমান,থানা পুলিশ, গনমাধ্যম কর্মী ও স্হানীয় এলাকাবাসী সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য আলোচনায় বসে।
অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২য় স্ত্রী রুনা লায়লাকে স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিকের লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মতিউর রহমান।দ্বিতীয় স্ত্রী স্বামীর লাশ তার এলাকায় নিয়ে ইসলামী শরা শরিয়ত অনুযায়ী জানাজা শেষে দাফন কাফনের ব্যবস্হা করবেন। এসময় লাশের বাড়িতে ১ম স্ত্রী ছেলে মেয়ে সহ এলাকাবাসীর মাঝে এক করুণ দৃশ্যের অবতারনা ঘটে।