লেখক: মুফতি ছালেহ বিন আব্দুল কুদ্দুস, অতিথি লেখক | ১২ এপ্রিল ২০২০ | ৬:২৬ অপরাহ্ণ
মহামারীগ্রস্ত দেশের গরীব-দুঃখীদের সাহায্যে যখন মানবতাবাদীরা এগিয়ে আসছে তখন সরকারদলীয় কিছু মানুষরূপী পশু ত্রাণচুরির ঘৃন্য উৎসবে মেতে উঠেছে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকায় দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের অসহায় লোকগুলো দুমুটো খাবার পাচ্ছে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আত্মসাতের কারণে। ক্রমশ বেড়েই চলছে এদের দৌরাত্ম। জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে এই লজ্জাজনক সংবাদ। উদাহরণস্বরূপ কিছু নিউজ তুলে ধরছি।
** ‘‘বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় কালোবাজারির দায়ে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি হতদরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২৮৮ বস্তা চাল সরিয়ে নেন। তবে চালের বস্তাগুলো আজ আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।’’-(প্রথম আলো ১১ এপ্রিল ২০২০ )
** করোনাতেও থেমে নেই তাদের ‘চাল চুরি’
“কেউ চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করছেন, কেউ আত্মসাত করতে গিয়ে ধরা খাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ত্রাণ আত্মসাত ও দশ টাকা দরের চাল চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেক জনপ্রতিনিধি, চালের ডিলার ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এদের বেশিরভাগই সরকারি দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা।’’-(dhakatimes24.com › 2020/04/09 )
** ‘‘ত্রাণ চুরি ঠেকাতে গণতদারকি কমিটি গঠনের দাবি।’’
-( বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট এপ্রিল ১২, ২০২০ )
** ‘‘ত্রাণ চুরির তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। তাকে আমরা ডিজিটাল চোর বলতে পারি। কেননা তিনি সেই ত্রাণ চুরি করতে গিয়ে ডিজিটাল কায়দায় কাজ করেছেন। গত ৬ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদে মানুষদের ডেকে ২৬টি পরিবারকে ত্রাণ দেন চেয়ারম্যান। সবাইকে ত্রাণ দিয়ে সেই ছবি তোলেন। এরপর সবার থেকে সেই ত্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়।’’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইন, ৭ এপ্রিল ২০২০)
এ হলো আমার দেশের অবস্থা! মানুষ না খেয়ে মরলেও তাদের কিছু যায় আসেনা; নিজেরা টাকার কুমির হতে পারলেই হলো! প্রবাদ আছে, রক্ষক যখন ভক্ষকে পরিণত হয় তখন জাতির উন্নতি এক দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হয়। এই আত্মসাৎকারীরা ডিগ্রীধারী শিক্ষিত হলেও জাগতিক শিক্ষা তাদেরকে দুর্নীতি থেকে ফেরাতে পারেনি। আমাদের বিশ্বাস, ইসলামী শিক্ষার আলো হৃদয়ে ধারণ করলে এহেন মানবতাবিরূধী কর্মকাণ্ডে তারা লিপ্ত হতো না।
পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ ও আমানতের খেয়ানত করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَلَا تَأْكُلُوٓا أَمْوٰلَكُم بَيْنَكُم بِالْبٰطِلِ
‘‘আর তোমরা নিজদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না।”-(সূরা আল বাকারাহ ২/১৮৮)
আমানতদারিতার ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন,আমানত হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে।” -(সূরা নিসা ৪/৫৮)
নবীজী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রায় খোতবায় বলতেন,
لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ
“যার ভিতর আমানতদারির গুণ নেই, তার ভিতর ঈমানও নেই।” –(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১২৩৮৩)
রাসূলুল্লাহ সা: অন্যত্র বলেছেন, “মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি: ১. কথা বললে মিথ্যা বলে; ২.ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে; ৩. আমানত রাখলে খিয়ানত করে।” -(সহীহ বুখারি ১/১৬)
পরিশেষে বলব, দেশের কোটি অসহায় মানুষের পেটে লাথি দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবার চেষ্টারত পশুদের ঔদ্ধত্য দেখে এক রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ফুল বাগান ধ্বংসের জন্য একটা হুতুমপেঁচাই যথেষ্ট। কিন্তু যদি বাগানের প্রতিটি ডালে হুতুমপেঁচা বসে থাকে তাহলে বাগানের অবস্থা কী হবে!?”
লেখক: মুফতি ছালেহ বিন আব্দুল কুদ্দুস
প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক: শাহবাজপুর, বি-বাড়িয়া, বাংলাদেশ।
১২/৪/২০২০ইং, রবিবার।।