| ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ
এবার এক মঞ্চে বসলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের- জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘ইভিএম বর্জন, জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক জোট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিরোধী নেতারা এক মঞ্চে বসেন।
বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাবেন বলে দাবি করেন তারা।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ গড়তে, স্বৈরাচার হটাতে জনগণের ঐক্য হয়েছিল। আজও সেই রকম একটি বৃহত্তর ঐক্য হতে যাচ্ছে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করুন। জনগণ দেশের মালিক। সংবিধানেও সে কথা বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাই না। দেশের জনগণ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা করতেই হবে। জনগণের দাবি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।’
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘সামনে আমাদের অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। স্বৈরাচার সরকারের পতনের জন্য আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছিলাম। সমাজ থেকে অন্যায়কে মুক্ত করতে হবে। দলমত-নির্বিশেষে সংবিধান ও মূল্যবোধের সপক্ষে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’।
অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী) বলেন, ‘আজ দেশ সংকটের মধ্যে আছে। দেশে এক ব্যক্তি, একদলীয় শাসন চলছে। দেশের উন্নয়ন করছেন, ভালো কথা। আমরাও উন্নয়ন চাই। উন্নয়নের নামে গণতন্ত্রকে ধাক্কা দেবেন, তা হবে না। জনগণ আর সহ্য করবে না। গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র চালাবেন, তা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। হাতুড়ি দিয়ে, বন্দুক দিয়ে জনগণের ওপর হামলা করবেন আর জনগণ সহ্য করবে, তা ভাববেন না।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ছড়াকার আখ্যায়িত করে বলেন, ‘ছড়া লিখুন, বলুন-অসুবিধা নেই। গণতন্ত্রকে ঠিক রাখুন, জনগণের দাবি মেনে নিন। মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন। প্রতিহিংসা পরিহার করুন। আমরা রাজপথে আছি দেশে শ্রদ্ধার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে। প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। হাতুড়ির রাজনীতি জনগণ চায় না। জনগণ আগামী নির্বাচনে এর দাঁতভাঙা জবাব দেবে’।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের পতনের জন্য আমরা সারা দেশ সফর করব, জনগণের কাছে যাব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া নির্বাচন কমিশন কোনো রকম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করার ঘোষণা আসতে পারে না। এতেই প্রমাণ হয়, নির্বাচন কমিশন সরকারের ইশারায় চলে। এই নির্বাচন কমিশন বিকলাঙ্গ।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের- জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘এ সরকারকে জনগণ চায় না। দ্রুত এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আসুন, এক মঞ্চে উঠে এই স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১০০ বছরের পরিকল্পনা করছেন। আমার প্রশ্ন, আপনি কত বছর বাঁচবেন? আমাদের এবং জনগণকে বোকা বানাবেন না। এ সরকার ১৬ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই সরকারের আমলে অনেক মামলা হয়েছে, যা পাকিস্তান আমলেও হয়নি।’
আ স ম আবদুর রব আরও বলেন, ‘বেগম জিয়ার বিচারকাজ জেলখানায় হতে দেয়া হবে না। আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। আওয়ামী লীগের ভরাডুবি করতে চাই।’
এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। আসুন দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ন্যূনতম কর্মসূচির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হই। দেশকে বাঁচাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখার জন্য জেলখানায় আদালত বসানো হয়েছে। সরকার আইনের লঙ্ঘন করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ রকম কোনো নজির নেই।’
খালেদা জিয়ার বিচার করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ব্রিটিশ আমলে স্বদেশি আন্দোলনের সময় দেশের জন্য যারা সংগ্রাম-লড়াই করেছিল, তাদের এ ধরনের ক্যামেরা ট্রায়ালে বিচার করা হয়েছিল। আমরা ১৯৭১ সালে দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যামেরা ট্রায়াল করে হত্যা করা হয়েছে। আজকে স্বাধীনতার ৪৮ বছরের পর ক্যামেরা ট্রায়ালের আদালতে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিচার করা হচ্ছে।’
ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলার সময় বলছিলাম, আপনারা স্বাধীনতাযুদ্ধের সামনে ছিলেন, এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম আপনারা দিয়েছিলেন। আজকে সেই স্বাধীন বাংলাদেশ ডুবে যাচ্ছে, নিমজ্জিত হচ্ছে, একে তোলার চেষ্টা করুন। সবাই মিলে আসুন, আমরা একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে রক্ষা করি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’
এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘হাজার নেতাকর্মীকে জেলে আটক রাখা হয়েছে। সরকার একটি পাতানো নির্বাচন করার জন্য এই নিপীড়ন নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। আমি আশা করি, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল কূটকৌশল ভেস্তে যাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোনো সরকার যদি জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়, সে সরকার জনগণের জন্য কাজ করবে। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত না হলে সে সরকার কখনো জনগণের জন্য কাজ করতে পারে না।’
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সরকার চোর। এই সরকারকে জনগণ আর চায় না। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার, বনজঙ্গল, পানি, পাথর, কয়লা, জমি-সব খেয়েছে এই সরকার।’
মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি কাঁদি। হ্যাঁ, আমি কাঁদি, প্রধানমন্ত্রীকে দেখে কাঁদি। আওয়ামী লীগকে দেখে কাঁদি। আর আমি যদি লিখি, তাহলে চোর বলে লিখতে হবে। লিখতে গেলে শেষ করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকারকে জনগণ চায় না। জনগণ বোঝে, কাকে কীভাবে শায়েস্তা করতে হয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিলেটে ত্রাস করেছে, খুলনায় করেছে, রাজশাহীতে করেছে। সিলেটে ত্রাস করেও জিততে পারেনি। জনগণ জবাব দিয়েছে।’