মুনযির আকলাম | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ | ৯:৫৭ অপরাহ্ণ
কামলা নয়, রেমিটেন্স যোদ্ধা
প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকেরা
দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম একটি খাতের নাম রেমিটেন্স। রেমিটেন্স অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করে।
এই রেমিটেন্স আমাদের মোট অভ্যন্তরীণ আয় বা জিডিপির ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ। দেশকে উন্নত দেশে উত্তরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে রাখতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন রেমিটেন্স প্রেরক প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
দেশের অর্থনীতিতে অক্সিজেনের মতো ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়নের অন্যতম নিয়ামক এই রেমিটেন্স।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ১৪ হাজার ৯৭৮ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। মাইগ্রেশন অ্যান্ড রেমিটেন্স : রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড আউটলুক-২০১৮ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়- রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে নবম অবস্থানে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি জনবহুল দেশ। দেশটির সব সম্পদের চেয়ে বড় সম্পদ হল জনসম্পদ। এই জনসম্পদই আজ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে প্রায় ৭৮ লাখ বাংলাদেশী বাস করেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বলছে- ৯৫ লাখ বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন।
বেসরকারি জরিপে প্রবাসীর সংখ্যা কোটিতে। আজ প্রবাসীরা যে পরিমাণ শ্রমশক্তি বিনিয়োগ করছেন, সেই বিনিয়োগকৃত শ্রমের তুলনায় যে পারিশ্রমিক তারা পাচ্ছেন, তা খুবই নগণ্য।
তাছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ দেশের অধিকাংশ শ্রমিককেই অদক্ষ বলা হয়। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী ও লুটেরা মুনাফাখোর চক্র এ দেশের শ্রম সম্পদকে নানা কৌশলে দক্ষ করতে দেয় না। এর অনেক উদাহরণ রয়েছে।
আমাদের শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। এর বাইরে নতুন বাজার খুঁজে দক্ষ লোক পাঠানোর দিকে নজর দেয়া উচিত। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ রেখেছে বিভিন্ন দেশ। অনেক দেশ কঠিন সব শর্তও জুড়ে দিচ্ছে।
জীবনযুদ্ধে নেমে জীবিকার তাগিদে অনেক মানুষই বাধ্য হয় দেশান্তরী হতে আর এই দেশান্তরী হওয়া মানুষগুলোর সুন্দর একটা নাম ‘প্রবাসী’।
কিন্তু সুন্দর জীবনের খোঁজে যাওয়া এই প্রবাসীরা কি আসলেই সুন্দর জীবনের দেখা পায়? যখনই দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির কথা আসে, তখন সবাই একবাক্যে স্বীকার করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের কথা; তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের কথা। কিন্তু কেমন কাটে প্রবাসীদের জীবন- তার খবর রাখে ক’জন? সরকার কী সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তাদের কিংবা সমাজ তাদের কোন চোখে দেখে- এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
বিমানবন্দরসহ প্রতিটি স্তরে চরম অবহেলার শিকার হন প্রবাসীরা। অবাক হই, যখন শুনি- তাদের বলা হয় ‘কামলা’। তারা হচ্ছেন আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা।
তাদের অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই। যারা প্রবাসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করছে, ভূমিকা রাখছে; সেই রেমিটেন্স যোদ্ধারা জাতির অহংকার।
আমি, আপনি, বিভিন্ন সংস্থা ও সরকার মিলে যৌথভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা করা উচিত। দেশের উন্নয়নে রেমিটেন্স যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সহযোগিতা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |