লেখক : মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া- মজলিশপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
মানুষ প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সঠিক পথের সন্ধান পায়। অন্ধকার থেকে আলোকিত হয়, ভাল-মন্ধ বুঝতে সক্ষম হয়।
প্রকৃত শিক্ষার জ্ঞান অন্বেষণ না করলে মানুষ অমানুষে পরিণত হয়।
নিজেকে জানতে, ভালমন্দ বিচার করতে প্রয়োজন শিক্ষার। সেখানে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। সুশিক্ষিত জাতি পারে তার নিজেকে এবং সমাজকে রক্ষা করতে।
আজ আমাদের মধ্যে (ইসলামী) শিক্ষা না থাকার কারণে সাধারণ জনগণ মার খাচ্ছে ইসলাম বিদ্ধেষী এনজিও এবং কিছু সংখ্যক মীরজাফরদের হাতে। তারা ধোকা দিচ্ছে সহজ সরল মানুষকে, সরলতার সুযোগ নিয়ে এনজিওগুলো কেড়ে নিচ্ছে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে।
শুধু তাই নয় লোভ-লালসা দেখিয়ে সহজ-সরল মুসলমানদেরকে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করতে বদ্ধ করছে।
সমিতি করার নামে এনজিওগুলো গ্রামে গ্রামে লেডিস ক্লাব ও মহিলা সমিতি করে সেখানে মহিলাদের একত্রিত করে। সেখানে তাদেরকে পারিবারিক ও বিবাহ বন্ধনের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য শুনায়।
পরিবারের পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের প্রতি এদের দৃষ্টি বেশি। বিশেষত: সুন্দরী যুবতীদের প্রতি। বিভিন্ন রকমের লোভ-লালসা দেখিয়ে গ্রামের সরলমনা লাজুক মেয়েদেরকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ও শহরে পুরুষদের সাথে পাঠিয়ে তাদের বাধ্যতামূলক বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল চালানো শেখায়। তাদের বোঝানো হয় যে, “তারা বৈবাহিক ও পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ থেকে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।” শুধু তাই নয় নারীদেরকে শেখানো হয় “স্বামীর কথা মানবে না, পর্দা মেনে চলবো না।”
“কিসের ঘর কিসের বর, শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার” – এ ধরণের সস্তা শ্লোগানে ও পশ্চিমা মতাদর্শন। এবং প্রাইভেট সেক্রেটারি, টাইপিস্ট, স্টেনোগ্রাফার ইত্যাদি পদের জন্য সুন্দরী এবং অবিবাহিতা নারীদেরকে দরখাস্তের আহ্বান জানায়। বাধ্য করা হয় পর্দা ছেড়ে অশ্লীল, অসভ্য, নোংরা, বেহায়াপনামূলক পাশ্চাত্য স্টাইলের পোশাক পরে বসদের মনোরঞ্জনের জন্য। এমনিভাবে এসব ব্যাপারে এক পর্যায়ে নারীরা গা সাওয়া হয়ে উঠে এবং পরবর্তীতে তাদের খায়েস মেটানোর জন্য, চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য নিজের মূল্যবান সম্পদ সতীত্ব সপে দিতে বাধ্য হয়।
এই কারণে ১৯৯১ সালে চিটাগাং একটি এনজিও বস কর্তৃক এক সুন্দরী তরুণী নির্যাতিতা হবার খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিশেষ গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়েছিল। নারীর ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ঘটনা একটি দুটি নয় বরং দিন দিন বেড়েই চলছে।
‘দ্য স্যালভেশন আর্মি’ একটি এনজিও। প্রধান কার্যালয় লন্ডনে। ১৯৭৭ সাল থেকে এদেশে এর কার্যক্রম চলে আসছে। এর কার্য এলাকা ঢাকা মিরপুর, যশোর এবং খুলনা জেলার কিছু এলাকা। এর বিরুদ্ধে ধর্মান্ত কারণে নানা অভিযোগ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সংস্থা পরিচালিত শিশুদের বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে খ্রিষ্টধর্ম পড়ানো হয় এবং রোববার দিন প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে গির্জায় যেতে হয়। (তথ্য সূত্র: সাপ্তাহিক পূর্ণিমা, ৪.৪.৯৪ -৭ম বর্ষ)।
চাঁদপুরের ব্র্যাক স্কুলের ১০/১২ বৎসরের একটি মেয়ে মারা গেলে এনজিও কর্মকর্তা তার পিতাকে সাদা কাফনের পরিবর্তে কালো কাফনে আবৃত করে পূর্ব দিকে লম্বালম্বিভাবে একটি গর্তে অমুসলিমদের কায়দায় দাফন করতে বলে এবং ১০ হাজার টাকার লোভ দেখায়। উক্ত পিতা তাদের এ প্রস্তাব ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং মেয়েকে ইসলামী কায়দায় দাফন করে।
পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি কয়েকদিন পর মারা গেলে এনজিও কর্মকর্তারা তার আত্মীয় স্বজনকে লাশ এভাবে দাফন করলে ২০ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। উক্ত মৃতের আত্মীয়রা এতে রাজি হয়ে লাশ অমুসলিম কায়দায় দাফন করে। পরে কর্মকর্তারা কবরের উপর ক্রশ স্থাপন করে ভিডিও করে রাখে। এভাবে ক্রশ চিহ্ন কবরের ভিডিও ধারণকৃত ছবি স্বদেশে প্রেরণ করে নাকি মরুব্বিদের সংস্থায় অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং এতে তারা বিশেষ ধরণের পুরস্কার পায়।
কিশোরগঞ্জ শহরতলী গাংগাইল এলাকায় জৈনকা দ্বীনদার মহিলা তার গৃহে মুসলিম নারী সমাজের জন্য পবিত্র কুরআন ও ধর্মীয় শিক্ষার সাপ্তাহিক মজলিস করতেন। তিনি মজলিসে পর্দার অপরিহার্যতা ও অশালীন জীবন যাপন সম্পর্কে আলোচনা করেন। কথা বলেন সুদভিত্তিক লেনদেনের অবৈধতা ইত্যাদি বিষয়েও। ফলে এনজিওগুলোর গ্রুপভুক্তি কিছু মহিলা গ্রহিতা সুদি লেনদেন ও বেপর্দা অবস্থা থেকে তওবা করে শরীয়ত মত চলার ইচ্ছা পোষণ করেন। এতে একটি এনজিওর কয়েকজন কর্মী ক্ষীপ্ত হয়ে সেই মহিলার ঘরে ঢুকে তার উপর চড়াও হয় এবং তাকে দৈহিকভাবে লাঞ্ছিত করে। কুরআন শরীফ পড়া অবস্থায় তার হাত থেকে পবিত্র কুরআন ছিনিয়ে তারা বাড়ির উঠানে ফেলে দেয়। তার ডাকে সারা দিয়ে অন্যরা এগিয়ে আসলে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এনজিও পক্ষের লোকদের সহায়তা করলেও বিরোধীদের চিকিৎসা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। থানা ও তাদের মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। হাসপাতাল থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার সময়ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদের উপর হামলা চালায়। এবং এনজিওদের বিরুদ্ধে কিছু বললে জিভ কেটে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। (তথ্য সূত্র: সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান ৬-১২ এপ্রিল ৯৪, সংখ্যা ৫১)।
খ্রিস্টান মুরুব্বিদের অর্থে পরিচালিত ব্র্যাকস্কুলগুলো বর্তমানে বাংলাদেশের মুসলমানদের অন্তরে শঙ্কা ও ঘৃণা সৃষ্টি করেছে। তাদের পরিচালিত ব্র্যাক স্কুলের মাধ্যমে বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি ও ঈমান বিধ্বংসী কর্মকন্ডে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ভোলার লালমোহন উপজেলার মুন্সির হাওরা মৌজায় আমিন মিয়া দালাল বাড়ির সামনে হাফিজিয়া মাদ্রাসার কতার কাচারিতে ফোরকানিয়া মাদ্রাসা এবং পেশকার হাওলা জমিদার বাড়ির সামনে একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় ব্র্যাক নামক এনজিও স্কুল চালু করে মসজিদটি বন্ধ করে দিয়েছে এবং মাদ্রাসা দুটি বন্ধের পথে। যে মসজিদে দৈনিক পাঁচবার আযান ও নামাজ হতো সেখানে ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষিকাদের উপস্থিতির পাশাপাশি চলছে নাচ গানের আসর। স্হানীয় জনগণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ৫/১১/৯৩ ইংরেজীতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম এবং বুদ্ধিজীবীগণ ব্র্যাকের মুখোশ উন্মোচন করে কর্তৃপক্ষের নিকট যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার জৈনক ব্যক্তি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তার এলাকায় একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা উল্লেখ করে মাসিক জাগো মুজাহিদ পত্রিকা অফিসে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে সংগঠিত ঘটনাটি নিম্নরূপ:
এলাকার,এক ব্যক্তির স্ত্রী ব্র্যাক সংস্থার নিকট থেকে কিছু টাকা ঋণ নেয়। কিছুদিন পর ঐ টাকা ফেরত দেয়ার জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে চাপ আসে। গরীব মহিলা বহু চেষ্টার পরও টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। তারপর স্বামীর কাছে জানালে স্বামীও দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। ঐ মহিলা ঐ অফিসে আসা যাওয়ার ফলে এক পর্যায়ে অবৈধভাবে গর্ভবতী হয়ে পরে। তাই স্বামী তাকে দেখতে পারতো না। সে গোপন সূত্র যে অফিসের একটি নিরিবিলি কক্ষে সংস্থার কর্মকর্তারা তার স্ত্রীর ন্যায় বহু মহিলার সাথে লালসা নিবারণে লিপ্ত হয়। এই ঘটনার পর স্বামী তাকে তালাক দেয়। স্বামীর নিকট থেকে তালাক পাওয়া এবং অবৈধ অপকর্মের জন্য কলঙ্কিত হয়েও মহিলাটি ব্র্যাকের ঋণ থেকে মুক্তি পায়নি। ব্র্যাকের কর্মীরা ঋণ পরিশোধের জন্য তাকে উত্তরোত্তর চাপ দিতে থাকে। অনুপায় হয়ে অবশেষে মহিলা একদিন গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে ব্র্যাকের ঋণে দায় এবং গ্লানি থেকে নিষ্কৃতির পথ খোঁজে। (মাসিক জাগো মুজাহিদ, ডিসেম্বর ১৯৯৩ ইং)।
(এনজিওগুলোর অপকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে নোমান আহমদ -এর ‘এনজিও নাস্তিক মুরতাদ’ বইটি পড়তে পারেন। প্রকাশিত হয়েছে নাদিয়া বুক কর্নার থেকে)।
অতএব হে মুসলমান, এসো সচেতন হই, ঐক্য দ্বারা পরিচালিত এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। ওরা আমাদের দেশে ব্যবসা করে আমাদের ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের সন্তানদের অশিক্ষা কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির মাধ্যমে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছলেবলে কৌশলে সহজ-সরল মুসলমানদেরকে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। ওহে মুসলমান, এসো জেগে উঠি, প্রতিবাদ করি, গণজাগরণ গড়ে তুলি। নারী সচেতনতা বৃদ্ধি করি।
ইসলামের দুশমন এনজিওদের নির্যাতনের হাত থেকে মুসলমানদেরকে মুক্ত করার শপধ গ্রহণ করি।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |