রিপোর্ট: -এম আমিরুল ইসলাম জিবন, ঝিকরগাছা (যশোর) থেকে | ০৭ মে ২০১৯ | ৪:০৬ অপরাহ্ণ
দুটি হাত ও একটি পা বিহীন তামান্না নূরা এবারের এসএসসি পরীক্ষীয় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হতে চায়। যশোরের ঝিকরগাছার বাঁকড়া জে.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় নূরা। জন্ম থেকে দুটি হাত ও একটি পা নেই তার। অন্য শিক্ষার্থীদের মত সে হেঁটে চলে বেড়াতে পারে না, অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় হুইল চেয়ার আর পিতা-মাতা অথবা কোনো সহপাঠীর দিকে।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মেধাবী ছাত্রী তামান্না নূরা ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। শুধুমাত্র বাংলা বাদে সবকটি বিষয়ে তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শারীরীক বাঁধা জয় করা নূরা এর আগেও তার সফলতার পরিচয় দিয়েছে। একমাত্র সম্বল পা দিয়ে লিখে ইতিমধ্যে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচার মাধ্যমে আলোচিত হয় তামান্না নূরা।
এ ব্যাপারে নূরার বাবা রওশন আলী বলেন, মেয়ের ফলাফলে আমরা খুবই আনন্দিত। সে যে পরিমাণ কষ্ট করেছে, আল্লাহ তার সম্মান রেখেছে। আমি তামান্নার জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। আমরা যেন তাকে উচ্চ শিক্ষিত করতে পারি।
বাঁকড়া জে.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলালউদ্দীন খান জানান, তামান্না তার কষ্টের ফল পেয়েছে। তার উচ্চাকাক্সক্ষা তাকে অনেক দুরে নিয়ে যাবে।
তামান্নার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করে তামান্না নূরা। হাসপাতালে মা জ্ঞান ফিরেই দেখেন তার জন্ম দেওয়া প্রথম কন্যা শিশুর দুটি হাত ও একটি পা নেই। দারিদ্রতার সংসার, বেকার স্বামী। বাসায় ফিরে সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করতে হয়েছে। বেড়ে উঠা শিশুটির চাহনি, মেধা সেদিন মায়ের মনে সাহস যোগান দিয়েছিল। বাসা থেকে দূরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা সহজ ছিল না। মায়ের কাছে প্রথমে অক্ষর জ্ঞান নিতে থাকে। বাসা সংলগ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজমাইন এডাস স্কুলে ভর্তি হয় নার্সারিতে। তখন মা ক্লাসে তাকে বসিয়ে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতেন।
তামান্নার মা খাদিজা জানান, তামান্নার শ্রবণশক্তি ও মুখস্থশক্তি এত ভালছিল যে একবার শুনলেই আয়ত্ব করতে পারতো। সে অক্ষর লেখা শুরু করে পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক ধরে। তারপর একইভাবে কলম ধরে লেখা আয়ত্ব করে। বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, আঙুলের ফাঁকে চিরুনি, চামচ দিয়ে খাওয়া, চুল আঁচড়ানো সহজে আয়ত্ব করে তামান্না। ধীরে ধীরে নিজের ব্যবহারিত হুইলচেয়ারটি এক পা দিয়ে চালানোর দক্ষতা সকলের নজরে আসে। নিজ বিদ্যালয়ে কেজি, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ফলাফলে মেধাতালিকার পাশাপাশি এডাস বৃত্তি পরীক্ষায় প্রতিবারই সে বৃত্তি পেয়েছে। লেখাপড়ার ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আজমাইন এডাস স্কুল থেকে পি.এস.সি ও ২০১৬ সালে বাঁকড়া জে.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |