ম.কাজী এনাম | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৫:১৬ অপরাহ্ণ
ইসলামে মানব সেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মানব সেবার মাধ্যমে আল্লাহর সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সব রসুল ও নবী মানুষে সেবায় তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। কিসে মানুষের কল্যান হবে? কিভাবে মানুষের সেবা করা যাবে এ নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকতেন নবী রাসুলগণ।
বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ [মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি]
আমাদের আবেগ-বিবেক একটা জায়গায় এসে থেমে যায়, আর চলতে চাইনা। সেটা হলো মানবতার সেবায় ব্রত হতে পারা। একজন মানুষ যখন আর্থসামাজিক দিক বিবেচনা ছাড়া, একদমই নিঃস্বার্থভাবে মানব সেবার নিয়োজিত হয়, কেবল সেই উপলব্ধি করতে পারে সেবারূপ, স্বরূপ ও ইহার ভাললাগার স্বর্গীয় অনুভুতিগুলো। এ সুখ অন্যকে সুখি করার, এই সুখ দুস্থ-অসায়ের সহায়তা করার, এই সুখ মানব সেবায় কিছু করতে পারার… এ যেন পরম সুখ।
এমনই একজন মানব সেবক আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর পৌর এলাকায়। শিমরাইলকান্দি পাড়াস্থ ‘স্বপ্নিল’ একটি ভূবনে, মা’য়ের আদর-ভালবাসার চাদরে জড়িয়ে থাকা, শান্ত-কোমল সভাবের, অনাড়ম্বর জীবনে অভ্যস্ত মানবসেবক ডা. মুহা. জাকারিয়া(শিশু বিশেষজ্ঞ)!
সাধারণত একজন এমবিবিএস ডাক্তারের যে ডিমান্ডিং মোড থাকে, তিনার তেমন কিছুই নেই। তিনি একদমই সাদাসিধে, কোমল প্রাকৃতির, স্নেহময়। বহুবছর ধরে যিনি ডাক্তারি সেবায় নিয়োজিত, সেই তিনি সবসময়ই চলেন রিক্সায়। উচ্চবিত্ত হয়েও মিশে থাকেন সাধারন মানুষের ভীরে। অর্থবান হয়েও হারিয়ে থাকেন আমজনতার হৃদয়ের গভীরে। মানুষ একটু স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে ছুটে আসেন উনার গেইটে..!
একজন ডাক্তার যা হয়, সেবার বিনিময়ে অর্থের পাহাড় গড়া, রুগির ঘাড়ে চড়ে আকাশছোঁয়া, কসাই প্রাকৃতির, আপাদমস্তকহীন ইত্যাদি.. এসবের কিছুই তিনার মাঝে নেই, কেউ দেখাতে পারবেওনা হয়তবা। কারন তিনি ইনকাম করেন ঠিক আছে, সেটা চেম্বারে হউক বা সদরের চাইল্ড এক্সপার্ট হওয়ার হওয়ার সুবাদে হউক, কিন্ত এলাকায় নয়। একজন সরকারী কনসালটেন্ট ব্যক্তিত্ব নিজের এলাকায় থাকেন নিঃস্বার্থ, বিনাপ্রশ্নে-বিনাঅর্থে এলাকাবাসীর মহান সেবক। যেন এলাকার উপর উনার দায়িত্ব অথবা এই এলাকায় জন্মানোয় উনার প্রতি এলাকার দাবি বা অধিকার, উভয়ই হতে পারে। নজিরবিহীন এমন সেবক সত্যিই বিরল। কেউ সেবা করতে আসে ঠিক আছে, কিন্ত সেই সেবার জন্য নির্দিষ্ট বিনিময় পায়। বিনিময়াদি ছাড়া সেবক পাওয়ার কোন সুযোগ হয়তবা এই সমাজে নেই বললেই চলে। বাড়িতে-ঘরে, হাটে-বাজারে, ক্লিনিকে-চেম্বারে সর্বত্র চলে সম্পূর্ণ ব্যবসায়ী উদ্যোগে রুগির সাথে আচরন। আর এহেন মুহুর্তে দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে এলাকার জন্য কাজ করে যাওয়া, কাজ করতে থাকা ব্যক্তিটি অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার উপযুক্ত।
ডা. মুহা. জাকারিয়া সাহেবের সাথে ব্যক্তিগত আমার কোন সম্পর্ক নেই, দীর্ঘদিনের পরিচিত শুধু উনার এলাকায় থাকি বলেই, এর বাহিরে কিছুই নেই। প্রতিদিন সকালে যখন দেখি উনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাসার সামনে রুগি দেখছেন, পেছনে উনার মা দাঁড়ানো, খুব ঈর্ষা হয়। বাসার দু’তলার বাড়ান্দায়
(উনার বাসার বিপরীত) থেকে প্রতিদিন দেখা যায়। মনে হয়, এমন কেউ যদি আমিও হতে পারতাম, অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি আর সেই সাথে মানবীয় সেবার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত, খুব ভাল লাগতো।
উনার চেম্বারেও একই অবস্থা, শত শত রুগিদের সিরিয়ালের ভীরে ইমার্জেন্সি বা এক-দু’দিনের নবজাত রুগিদের একটু আলাদা কেয়ার, খুবই ভাল লাগে। মন ভরে উঠে অজানা ভালবাসায়, ভাললাগায় এবং দোয়ায়। দেশের প্রত্যেক এলাকায় ডাক্তার আছে, এমন কি এলাকার সেবা করার জন্য, এলাকার মানুষের সেবা করার জন্য একেকজনের একেক প্রতিভা-মেধা, যোগ্যতা আছে। সবাই’ই যদি নির্দিষ্ট একটা প্লাটফরমে সাময়িক কিবা প্রত্যহ কিছু সময়ের জন্য মানব সেবার উদ্যোগ নেয়, মনে হয়না কোথাও কোন প্রকার অশান্তিজনক ঘটনা ঘটবে(?) সুখ-শান্তি আর সাম্য-মৈত্রী নেমে আসবে সর্বত্র..!
অসহায়, হতদরিদ্র ও নিজের এলাকার মাঝে বিনামুল্যে চিকিৎসা প্রধানের জন্য ডা. মুহাম্মদ জাকারিয়া আইডল হতেই পারে, কারন তিনি নিজে নিজে সদিচ্ছে এই কাজে নিয়োজিত। সরকারী চাকুরী ও নিজ চেম্বারে বসার বাহিরেও যে একটা জগত আছে, তিনি সে দিকে সচেতন। প্রতিটা ডাক্তারেরই এমন হওয়া উচিৎ। কিছু অন্তত নিজের জন্য না হউক, হউক পরোপকার করে, একদমই নিঃস্বার্থ।
আল্লাহ ডাক্তার সাহেবকে সুস্বাস্থ্য দান করতঃ দীর্ঘজীবী করুন। সেই সাথে জাযায়ে খায়ের দান করুন। এবং মানব সেবায় ব্রত পৃথিবীর সকল মহান মানুষগুলোর জন্য জীবিন হয়ে উঠুক আরও ব্যাপক, উন্নত এবং সম্প্রসারিত। আমিন।
লিখক ; বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক।
[বিএসএস অনার্স(অর্থনীতি), ডাবল এমএ(হাদিস)]