| ২৮ অক্টোবর ২০১৮ | ৬:০৮ অপরাহ্ণ
যত মাতামাতি আমের স্বাদ নিয়েই। এর পুষ্টিগুণ নিয়ে মাথা ঘামায় খুব কম লোকেই। কিন্তু ফলটির ঔষধি ও পুষ্টিগুণ কিন্তু মোটেও হেলাফেলার বিষয় নয়। প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজশাস্ত্রে ফলটির ব্যবহার হয়েছে অনেক। শুধু স্বাদ নয়, আমের ঔষধি ও পুষ্টিগুণেও বিমোহিত হয়ে পড়েছেন আধুনিক পুষ্টি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও। অনন্য স্বাদ এবং পুষ্টি ও ভেষজগুণ বিবেচনায় আমকে প্রকৃত অর্থেই ‘ফলের রাজা’ বলে অভিহিত করছেন তারা।
ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি প্রতিরোধ করা থেকে শুরু করে ওজন হ্রাস, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি, এমনকি রূপচর্চায়ও অনেক উপকারী ভূমিকা রাখে আম। প্রতি এক কাপ বা ২২৫ গ্রাম পরিমাণ আমে যেসব পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়, তার তালিকা খেয়াল করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে আসবে। মানবদেহের সুস্থতার জন্য সুপারিশকৃত ভিটামিন সির দৈনিক প্রয়োজনীয় মাত্রার ৭৬ শতাংশই এ পরিমাণ আম থেকে পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এখান থেকে সুপারিশকৃত দৈনিক পরিমাণের ২৫ শতাংশ ভিটামিন এ, ১১ শতাংশ ভিটামিন বি৬সহ অন্য বি ভিটামিন, ৭ শতাংশ পটাশিয়াম, ৪ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ৯ শতাংশ কপার ও ৯ শতাংশ আঁশ পাওয়া যায়। এছাড়া শক্তি পাওয়া যায় ১০৫ ক্যালরি।
ক্যান্সার প্রতিরোধে আম: প্রতিটি আমে প্রচুর পরিমাণে ফাইসেটিন, কোয়ারসেটিন, আইসোকোয়ারসেটিন, গলিক অ্যাসিড, ভাস্ট্রাগালিন ও মিথাইগ্যালাট নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রতিটিই ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে। আম ও আমের মধ্যকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো প্রধানত কোলোন ক্যান্সার, স্তন ও প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং লিউকেমিয়া প্রতিরোধেই সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
রক্তশূন্যতার চিকিৎসায়: রক্তশূন্যতার চিকিৎসায় রোগীদের নিয়মিত প্রচুর লৌহসমৃদ্ধ ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে লৌহসমৃদ্ধ ও স্বাদে অতুলনীয়— এ ধরনের ফলের কথা বলতে গেলে আমের নামটাই সবার আগে চলে আসে। এমনকি এ জায়গায় আমকে শ্রেষ্ঠ পছন্দ বললেও খুব একটা দোষের কিছু হবে না। আমের মধ্যকার আঁশ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানোয় সহায়ক। এক্ষেত্রে আমের সঙ্গে চিনি মেশানো দুধ খেলেই সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া বাড়তি উপকারিতার জন্য ডালিম, খেজুর ও আপেলের মতো ফলও এর সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: আমে প্রচুর পরিমাণ পেকটিন, ভিটামিন সি ও আঁশ রয়েছে। এসব উপাদানের প্রতিটিই দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বিশেষ করে দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা নিম্নঘনত্বের লিপোপ্রোটিন নিয়ন্ত্রণে এর জুড়ি নেই। উপরন্তু আমে পটাশিয়াম রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। খনিজ উপাদান হূত্স্পন্দন ও রক্তচাপের অস্বাভাবিকতা ঠেকানোয়ও কার্যকর, যা আসলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলেরই প্রভাব।
চোখের জ্যোতি বাড়ায় আম: আমে ভিটামিন এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এক কাপ বা ২২৫ গ্রাম আমে যে পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে, তাতে দেহের দৈনিক প্রয়োজনের এক-চতুর্থাংশই মিটে যায়। চোখের সুস্থতা ও জ্যোতির ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখার জন্য ভিটামিন এ অত্যন্ত অপরিহার্য একটি উপাদান। এছাড়া চোখের প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি শুষ্কতা দূর করার জন্যও ভিটামিন এ প্রয়োজন।
দাঁত ও মাঢ়ির সুস্থতায়: শুধু নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও কুলকুচা করলেই দাঁত ও দাঁতের মাঢ়ি সুস্থ থাকবে, বিষয়টি এমন নয়। এর সঙ্গে দাঁত ও মাঢ়ির সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক খাদ্যগ্রহণও প্রয়োজন। দাঁত ও মাঢ়ির সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক ফলগুলোর তালিকা করলে আমের নাম শুরুর দিকেই উঠে আসবে। আম খাওয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি গ্রহণের পাশাপাশি আরো দুভাবে দাঁত ও মাঢ়ির সুস্থতায় ফলটিকে ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে প্রথমটিতে অবশ্য আম নয়, আমগাছের ছালকে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে আমগাছের ছাল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তা দিয়ে গড়গড় করে কুলকুচা করলে দাঁতের ক্ষয় ও মাঢ়ির রক্তপাত বন্ধ করা যায়। দ্বিতীয় উপায়টি হলো আম থেতলে পেস্ট তৈরি। এক্ষেত্রে মাঢ়ির ওপর পেস্টটি আলতোভাবে ঘষলেও মাঢ়ির রক্তপাতের ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি: মাত্র ২২৫ গ্রাম আম থেকে যে পরিমাণ উপকার পাওয়া সম্ভব, তা আসলেই চমৎকার। এ চমৎকারিত্বের কারণেই আম সুপারফুড হিসেবে বিবেচিত। ভিটামিন এ, সিসহ ২৫টি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ক্যারোটিনসমৃদ্ধ ফলটি দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে অনেকটাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
ওজন হ্রাস: ওজন হ্রাসের জন্য যে ধরনেরই খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা হোক না কেন, প্রায় প্রতিটিরই অপরিহার্য অনুষঙ্গ আম। এর কারণ খুবই সাধারণ, এতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকলেও ক্যালরি খুবই সামান্য। এ কারণেই অতিমাত্রায় স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত আম। এসব পুষ্টি উপাদানের কারণে একটি আম খাওয়ার পরই মনে হয়, পেট অনেকটাই ভরে গেছে। অন্যদিকে আমের মধ্যকার ভিটামিন ও মিনারেলগুলো হজমশক্তি, অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়ানোর সক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি: আমে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি দেহের মধ্যকার প্রোটিন ভাঙতে সহায়তা করে। অনেকেই মনে করেন, দেহস্থিত প্রোটিন ভাঙার জন্য সবচেয়ে আদর্শ ফল হলো পেঁপে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমকেও এখানে পেছনে রাখার কোনো কারণ নেই। এতে যে পরিমাণ আঁশ রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে হজমশক্তি বাড়িয়ে তোলায় কার্যকর।
দেহের অম্লত্ব দূর: সুস্থ জীবনযাপনের জন্য দেহে পিএইচের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে দেহের অম্লত্ব দূরের মাধ্যমে পিএইচের মাত্রা স্বাভাবিক করে আম।
ত্বকের স্বাস্থ্য ও রূপচর্চায় আম: ত্বকের সুস্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখার জন্য হলেও আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আমের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরি। ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ফলটি খাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের উপরেও ব্যবহার করা যায়। রোমকূপ বন্ধ হয়ে পানি জমে যাওয়া প্রতিরোধ ও পরিষ্কার করা এবং ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রেও আম বেশ উপকারী।
এছাড়া আম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর, গরমের সময় সর্দির প্রতিকার, লিভার ভালো রাখা ও সাইনাসের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখে
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |