| ১০ নভেম্বর ২০১৮ | ৯:৪৬ অপরাহ্ণ
আরব দেশগুলোতে গণজাগরণে একের পর এক সরকার পরিবর্তনের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো তার নেপথ্যে কাতারের ভূমিকা গোপন নয় প্রকাশ্যে। এ সময় পার্শ্ববর্তী দেশ বাহরাইন বা সৌদি আরবে কমবেশি গণবিক্ষোভের ঢেউ লাগলেও কাতারে সে ধরনের কোনো তৎপরতা ছিলো না বরং কাতারের আমির আর দেশটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নানাভাবে আরব গণজাগরণের সাথে জড়িত সংগঠন ও ব্যক্তিদের সমর্থন দিয়ে গেছেন।
শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটে নানা কূটনৈতিক তৎপরতায় কাতারের আমিরকে দেখা যাচ্ছে সামনের সারিতে। গাজায় ইসরাইলি প্রতিরোধ যুদ্ধে প্রকাশ্যে হামাসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে কাতার। বিভিন্ন আরব দেশে নির্বাসিত হামাস নেতারা এখন অবস্থান করছেন কাতারে। এমনকি মুরসি সরকারের পতনের পর মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক নেতা এখন কাতারে অবস্থান করছেন। যদিও এজন্য কাতারের ওপর অন্য আরব দেশগুলো নানাভাবে চাপপ্রয়োগ করে যাচ্ছে।
কাতারের আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি পশ্চিমা বিশ্বে এখন পরিচিত হচ্ছেন আরব কিসিঞ্জার হিসেবে। কোথায় নেই কাতারের খলিফা! ফিলিস্তিনের চিরবৈরী দুই সংগঠন হামাস ও ফাতাহর ঐকমত্যের সরকারের জন্য বৈঠকের আয়োজন তার দৃশ্যপটে কাতার। তালেবানদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেনদরবার তাতেও রয়েছে কাতারের ভূমিকা। এই দেনদরবারের অলোচনা সহজ করার জন্য কাতারের আমির তালেবানদের একটি অফিস খোলারও অনুমতি দিয়েছেন। লিবিয়ায় ট্রানজিশনাল সরকারের দিকনির্দেশনা অর্থ সাহায্য আসছে কাতার থেকে। লিবিয়ায় ন্যাটোর নেতৃত্বে যে সামরিক অভিযান চালানো হয় তাতে কাতার সরাসরি অংশ নেয়। অন্য কোনা আরব দেশ এই যুদ্ধে অংশ নেয়নি। এমনকি আরব গণমাধ্যমে এমন খবরও এসেছে কাতারের সেনাবাহিনী লিবিয়ার গাদ্দাফি বাহিনীর সাথে পোশাক বদলে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। লিবিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক কন্ট্রাক্ট গ্রুপের সম্মেলনটি হয়েছিল কাতারে।
এখন সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন ঘটাতে বিদ্রোহীদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরব লিগের সম্মেলনে লিবিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির কাজটি করে যাচ্ছেন কাতারের আমির। কাতারের আমির এখন আরব বিশ্বে নানা পরিবর্তনের সাথে দেশটিকে জড়িয়ে ফেলেছেন।
কাতারের এই ভুমিকা নিয়ে অন্য আরব দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের ভীতি ও সংশয় রয়েছে। কাতার যখন সিসির সেনা শাসকের বিপক্ষে ও মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে অবস্থান নেয়। তখন অনেক আরব দেশ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। এরমধ্যে সৌদি আরবও রয়েছে। কাতার থেকে উপসাগরীয় অন্য দেশগুলো রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। অবশ্য এ বিরোধ দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হয়। আরব বিশ্বের আরেক প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের সমর্থন সব সময় পেয়ে আসছে কাতার। কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুড প্রশ্নে কিছুটা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছিলো। কাতার অনেক আগেই সৌদি আরবের সাথে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছেন। কাতার-সৌদি আরব সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলো যে, অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, আন্তর্জাতিক ও আরব বিশ্বে সৌদি আরবের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটে কাতারের কূটনৈতিক তৎপরতায়। ১৫ লাখ জনসংখ্যার চার হাজার ৪০০ বর্গমাইলের এই দেশটির রাজধানী দোহাকে বলা যায় আরব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
লিবিয়া কিংবা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অর্থ ও অস্ত্র যেমন সরবরাহ করা হয়েছে কাতার থেকে তেমনি মিসর আর তিউনিসিয়ার আন্দোলনকারীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে দেশটির। শুধু তাই নয়, আরব বিশ্বে রাজনৈতিক উত্থান-পতনে জনমত সৃষ্টির কাজটিও হয় কাতার থেকেই। আরব দেশগুলোর জনমত সৃষ্টিতে এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী গণমাধ্যম হচ্ছে আলজাজিরা। ১৯৯৬ সালে কাতারের আমিরের আর্থিক সহয়তায় আলজাজিরা আরবি টেলিভিশন স্টেশনের যাত্রা শুরু। অল্প দিনের মধ্যে আরব বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
২০০৬ সালে আলজাজিরা ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচার শুরু করে। অল্প দিনের মধ্যে বিবিসি, সিএনএন কিংবা ফক্স নিউজ চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজের অবস্থান মজবুত করে। আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। এ ক্ষেত্রে বিবিসি ও সিএনএনের অনেক সংবাদকর্মীকে উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেয় আলজাজিরা। শুধু আরব বিশ্বে নয়, ইউরোপেও চ্যানেলটি জনপ্রিয় করতে ২০১১ সাল থেকে বসনিয়া থেকে সম্প্রচার হচ্ছে আলজাজিরা বলকান। এ ছাড়া আফ্রিকার দর্শকদের জন্য কেনিয়া থেকে সোহেলি এবং তুরস্ক থেকে তুর্কি ভাষায় আলজাজিরা সম্প্রচার চলছে।
জনমত সৃষ্টিই শুধু নয়, আরব বিশ্বে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক নেতা কাতারে বসবাস করছেন। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক প্রভাবশালী নেতা দীর্ঘ সময় কাতারে অবস্থান করছেন। আরব বিশ্বের প্রভাবশালী চিন্তাবিদ ও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউসুফ কারজাভি অবস্থান করছেন কাতারে। মিসরের গণ-আন্দোলন ও লিবিয়ার যুদ্ধে কারজাভি জনমত সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। আলজাজিরা আরবি চ্যানেলে তার ইসলামবিষয়ক একটি অনুষ্ঠান আরব বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
কাতারকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত করার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছেন কাতারের আমির। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশগুলোর একটি কাতার। দেশটিতে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিও। রাজধানী দোহা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে আল উদেই বিমান ঘাঁটি মার্কিন সামরিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর জ্বালানি সরবরাহের প্রধান দেশগুলোর একটি কাতার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলএনজি গ্যাসের প্রকল্পটি রয়েছে কাতারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের যৌথ উদ্যোগে ১৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২০০৫ সালে এই প্লান্ট স্থাপন করা হয়। মার্কিন বন্ধু দেশটি আবার ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি সোচ্চার। ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দেলন হামাসের সাথেও কাতারের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
শুধু আরব সংগঠন নয়, চেচনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সেলিম খান ইন্দারবায়েভ দোহায় ২০০৪ সালে এক বোমা হামলায় নিহত হন। তিনি কাতারে বসবাস করছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে কাতার। দু’জন রাশিয়ান গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। পরে অবশ্য বন্দী বিনিময়ের আওতায় তাদের ফেরত দেয়া হয়। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সাথে কাতারের সম্পর্ক খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। শুধু আরব দুনিয়ার রাজনীতি বা কূটনৈতিক তৎপরতা নয়, কাতারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য নানা প্রচেষ্টা রয়েছে কাতারের আমিরের। ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপের ২০২২ সালের আয়োজক দেশ কাতার। এর আগে ২০০৬ সালে এশিয়ান গেমসের আয়োজক ছিল কাতার।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |